আমার একান্ত কিছু শব্দের মানুষগুলো

আমার একান্ত কিছু অনুভূতি আমার কলমের সাথে ভাব জমায় আমি তাদের সাথে পথ পাড়ি দেই একাকী

Tuesday, July 31, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি- ৪৭

স্বচ্ছ চোখের জল

প্রথম দিকে স্বপ্নেরা রং খেলায় মত্ত,
চারধারে অনেক কিছু উড়ে 
শুধু সাদা কিছু ব্যতীত ।
লাল নীল বেগুনী সবুজ ,
সবাই একই সাজে উড়ে ঘুরে।
সাদামাটা স্বপ্নের আকাশটাতেও,
এত রং নীলেরাও অবাক চেয়ে রয় ।
ছোট ছোট মেঘমালা
হেসে হেসে ভাসে,
কিন্তু সামান্যটুকু সংশয়ে।
যখনই ভুল কিছু উড়ে ,
কিছু রাগ কিছু ক্ষোভ
অভিমান হুট করে।
কালো মেঘেরা পসরা সাজায়,
আমি হারাই ছোট বড় রঙীন স্বপ্ন,
পথ হারাই ঘর হারাই।
কালো মেঘের ঝাপটা ঝড়ে,
বৃষ্টির ডাক বাড়ে
ঝমঝম ঝমঝম,
আমি পালিয়ে বেড়ায়ই
কান্নার জলে ভিজে যাওয়ার ভয়ে,
অতঃপর ভিজে যাই।
ভিজে যায় সাদা রঙের মনটা,
তবে বৃষ্টির জলে নয়
কেবল স্বচ্ছ চোখের জলে।

৩১ জুলাই, ২০১২
-----------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজক্টে ৪৭/৩৬৫


পুরাতন লেখালেখিগুলো http://ayonahmed.blogspot.com/

Monday, July 30, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি- ৪৬


আমি আগামী একটা সময় এমন একটা জায়গাতে গিয়ে দাঁড়াবো, হয়ত কাউকে পাব না কাছে, হয়ত কাউকে চিনবো না। স্মৃতিভংশ আমাকে ভোগাবে দীর্ঘদিন। আমি হয়ত আমার প্রিয় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের "ছবি আঁকে , ছিঁড়ে ফ্যালে" কবিতার মতন কেউ একজন হয়ে যাব। 


ছবি আঁকে, ছিঁড়ে ফ্যালে


বহুবার হারিয়েছে ব'লে আজ কেউ
লোকটিকে খোঁজে না আর, সুতো ছাড়তে থাকে।
যতো দূর যেতে চায়, যাক, বেঁচে থাক।
অমৃত্যু মাথার 'পরে মুকুট দিয়েছে-
অনেকেই চেনে তাকে, অনেকে চেনে না।
বোঝে কিছু, বোঝে মিছু কোনো কোনো লোকে,
কিছুই লাগে-না-ভালো এমন অসুখে
লোকটি উচ্ছন্ন আজ, বেঁচে-বর্তে আছে
কোনো মতে। বেঁচে থাক, দুঃখী হয়ে থাক।
কিন্তু, কী যে দুঃখ তার নিজেই জানে না,
লোকটি কবি, ছবি আঁকে, ছিঁড়ে ফেলে দেয় !


(শক্তি চট্টোপাধ্যায়) 


৩০ জুলাই, ২০১২
--------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজক্টে ৪৬/৩৬৫


পুরাতন লেখালেখিগুলো

Sunday, July 29, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি- ৪৫

আমার http://ayonahmed.blogspot.com/2012/07/blog-pos_2882.html বিগত লেখাতে  আমি সমীকরন দুইয়ে বিশ বছর পর্যন্ত কিছু ঊল্লেখযোগ্য অংশ বিশেষ লিখেছিলাম। বিশ বছর পরবর্তীতে শুরু করলাম।


সমীকরন : ৩ (২১ বছর - ৩০ বছর)


এই সময়টা আমার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। গ্রাজুয়েশন শেষ করে অনন্ত বেকার সময়। অসংখ্য জায়গাতে জমা দেওয়া শয়ে শয়ে সিভির বিপরীতে গড়ে পাঁচ-ছয়টা ইন্টারভিউ। নিজের ভিতর প্রচন্ড ইগো ছিল বলে , ইগো আমাকে পেছনের দরজা দিয়ে উপরের উঠা সিঁড়িতে তাকাতে দেয় নি। যেটিকে বলে হোল্ড কিংবা ব্যাক আপ। আমি কথা ছিল কষ্ট করে কিছু পেলে সেটার মর্যাদা দেওয়া যায়। ফলশ্রুতিতে যা হলো, আমার চাকরী হলো না কোথাও। অনেক জায়গাতে চাকরীর শুরুতে এমবিএ চাওয়া হচ্ছিলো এমনকি এক্সিকিউটিভ পোষ্টে যদি এক্সপেরিন্স লোক খোঁজে তাহলে আমাদের মতন ছাপোষা নতুন গ্রাজুয়েশনের তকমা লাগানো হতভাগাদের স্থান পার্কে বসে বাদাম চিবানোর মতন। চাকরী পেলাম না কোথাও। গ্রাজুয়েশনের আগেই কম্পিউটারটাকে আয়ত্বে এনে ফেলেছিলাম বলে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এর মতন টুকটাক কাজ করেছিলাম। টুকটুক করে খেলার ছলে শিখে ফেললাম, ওয়েব ডিজাইনের কলা কৌশলগুলো । এই বিষয়ে নিউ হরাইজনে কোর্সও করলাম। মনে খায়েশ মিটালাম। সেই সার্টিফিকেটেও কোন চাকরী হলো না। শেষমেষ মাষ্টার্স করলাম এবং এম.বি.এ করলাম। তখন চাকরীর গন্ধ পেলাম। ব্যাংকগুলোতে ঢু মারলাম। এসি খেলাম ইন্টারভিউ দিলাম। সবশেষে রেজাল্ট একটাই চাকরী হলো না। জানিয়ে দেওয়া হল, ওমুক পোষ্টের জন্যে আরো অধিক শ্রেয়তর ডিগ্রী লাগবে। শেষমেষ একদিন ভাগ্য খুললো একটা ব্যাংককে চাকুরী পেলাম, চুক্তি ছিল ২ বছর কোথাও যেতে পারব না, ঢাকা পোষ্টিং হবে না। সব ক্ষেত্রে রাজী ছিলাম। হঠাৎ বাবার কোম্পানীতে ধস নামল অন্য সব ডারেক্টররা নিজেরাই কোম্পানী খুলে বসলো। বাবার কথা নিজের শখের ব্যাংকের চাকরীর সুযোগটা ছেড়ে দিয়ে হাল ধরলাম। বাবা আমি মিলে ভাঙ্গা ঘর গোছানো শুরু করলাম। অবশেষে আবার দাঁড়িয়ে গেল। আমার স্থায়ী ঠিকানা আজও সেখানে। পরবর্তীতে বিয়ে করলাম। বাউন্ডুলে জীবন থেকে ছক বাঁধা জীবনে ঢুকে গেলাম। এখনও সেভাবে আছি। অগোছানো জীবন থেকে গোছানো জীবন।     


২৯ জুলাই, ২০১২
---------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজক্টে ৪৫/৩৬৫

Saturday, July 28, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি- ৪৪


আজ হঠাৎ মতিঝিলের অলিগলির ভিতর দিয়ে হাঁটতে গিয়ে দেখি , একটা পুরানো বইয়ের দোকান। আগে কখনো খেয়াল করি নি। সেখানে অনেকগুলো পুরানো বই, পুরানো মলাট খাতা। কিছু অংকের খাতা। আমি হঠাৎ পুরানো স্মৃতিতে ফিরে গেলাম। আমাদের কাছে নতুন উৎসব ছিল নতুন বই নতুন খাতা। আমরা প্রতি বছর নভেম্বরে ফাইনাল পরীক্ষা দিতাম যেটি শেষ হত ডিসেম্বরের প্রথম দিকে। দশ থেকে পনের দিন ছুটি থাকত। ডিসেম্বরের ভিতর রেজাল্ট হত। রেজাল্ট বের হবার পর আমি মহানান্দে বাবার সাথে যেতাম নতুন বই কিনতে, নতুন খাতা কিনতে এবং গণিত অনুশীলনীর জন্যে নিউজপ্রিন্ট কাগজ। যেদিন নতুন বই কিনতাম, সারা ঘরে নতুন মৌ মৌ গন্ধ ভরে যেত। আমি মহা উৎসাহে বিগত বছরের পুরানো ক্যালেন্ডার কেটে নিজ হাতে মলাট করতাম। আমার বইগুলো এমনভাবে রাখতাম, মনে হত কাল মাত্র কিনলাম। আমি বইয়ের প্রতি এতই যত্নশীল ছিলাম একটা বই ছিড়ে গেলে আমার চোখে পানি চলে আসত। আমি প্রতিদিন বিকালে বসে নিজউপ্রিন্ট কাগজ সিলাই করে নাইলনের সুতা দিয়ে বাঁধাই করতাম তারপর শক্ত কাগজে মলাট করতাম। মলাট শেষে নিজের নতুন রোল নিজের নতুন শ্রেণীর নাম, সেকশানের নাম বড় করে একটা ক্যালেন্ডারের সাদা অংশতে লিখে খাতায় আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিতাম। তারপর বইগুলোর ধরে বুকে জড়িয়ে রাখতাম, ঠিক নিজের সন্তানের মতন।

২৮ জুলাই, ২০১২
--------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজক্টে ৪৪/৩৬৫

Friday, July 27, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি- ৪৩

 ২৭ই জুলাই ২০০৭ থেকে গুনে গুনে ঠিক পাঁচটি বছর পার করলাম দাম্পত্য জীবনের। আমি জানি আমি কোনদিন পারফেক্ট স্বামী হতে পারি নি। স্ত্রী হিসাবে ইরা যতটুকু সাধ্য করেছে এবং করছে। সে হিসাবে আমার অবদান অতি নগন্য। আমার এই অনমনস্ক, হাভোলা বাজে স্বভাবটাকে মেনে নিয়ে এত দিন ধরে ইরা আমাকে সামলে রাখছে সেটি আমাকে অবাক করেছে। হয়ত চোখের জলে অনেক কিছু কষ্ট সামলেছে। আমি মানুষটা পুরোপুরি গোয়ার জেদি। আমার এ স্বভাবটা বদলাতে পারে নি আমার বাবা-মা। আর ও এখনও চেষ্টায় আছে যদি সামান্যটুকু বদলাই।

২৭ জুলাই, ২০১২
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজক্টে ৪৩/৩৬৫

Wednesday, July 25, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি- ৪২




গতকাল দুটো সমীকরণ লিখব ভেবেছিলাম কিন্তু সময়ের অভাবে শুরু করে শেষ করতে পারি নি। প্রথমটা গতকাল লিখেছিলাম আজ দ্বিতীয়টা লিখালাম।


সমীকরণ ২: (আমার বয়স ১১ থেকে ২০ বছরে)


১১ - ১৫ বছর


অস্টম শ্রেনীতে স্কুল থেকে প্রথম বারের মতন ঢাকার বাইরে একা যাওয়া ছিল আমার জন্য রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। বাস ভর্তি চেনামুখ আর মাইকিং করে গান, হৈ  চৈ দারুন লেগেছিল। 


আমার শিক্ষাজীবনে অন্যতম সেরা অধ্যায় আমার প্রিয় গণিত স্যার আতিক স্যারের বাসায়। আমি পেলাম আমার প্রিয় কিছু বন্ধু আবীর, পারভেজ, সুরভী, অনু, ঝর্না, শিল্পী, নিশি । আমরা খুব মজা করে গণিত শিখতাম। আমাদের আড্ডাবাজি হত খুব। ভোরবেলাতে আমরা চলে যেতাম স্যারের কাছে। সারাবেলা ভর গণিত করে ফিরতাম। 


এই সময়ে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিনগুলো ছিল আমার প্রথম কবিতা "বিদায়ের বেলা" স্থান পেয়েছিল স্কুল ম্যাগজিনে। আমাকে আবৃত্তি করতে হয়েছিল। আমাদের শেষবারের মতন স্কুল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় এই কবিতা আমার চোখে পানি নিয়ে এসেছিল। দশম শ্রেনীর শেষ দিনটি আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। টানা পাঁচটা বছর এক সাথে পড়ে অনেকের সাথে বিদায় নেওয়াটা খুব কষ্টকর ছিল। আমি হারালাম অনেক স্কুল বাবু, আমজাদ, রাসেল, জুয়েল, মিঠু আরো অনেককে, সেই হারানো বন্ধুদের আজ খুঁজে পাই নি।


জীবনের প্রথম কোন বড় পরীক্ষাতে উত্তীর্ন হলাম। মাধ্যমিক পরীক্ষা যতটা কঠিন ছিল তার দ্বিগূন কষ্ট হয়েছে কলেজ ভর্তি পরীক্ষার অনুশীলনে।  আমরা প্রিয় চার বন্ধু মিলে শ্রীমঙ্গল ঘুরতে গেলাম। ফিরে জন্ডিসে ভুগলাম। কলেজ ভর্তি পরীক্ষা আমার জন্যে অনেক কঠিন হয়ে গেল। তবুও মনের জোরে টিকে গেলাম। সিটি কলেজে নিজের নতুন ঠিকানা পেলাম।


১৬-২০ বছর


আমাকে কেউ যদি বলে তোমার জীবনে সবচেয়ে কঠিন শিক্ষাজীবন ছিল কোনটি, আমি নির্দ্বিধায় বলে দিব, "উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা"। মাত্র ১৫ মাস সময়ের ভিতর পাহাড়সম সিলেবাস শেষ করা ছিল সত্যি খুবই দুরূহ ব্যাপার। কলেজ জীবন ছিল খুবই আনন্দপূর্ণ। 
আমরা সবাই বাণিজ্য বিভাগে ডি সেকশনে পড়তাম। আমার স্কুলের ১৯ জন মিলে একসাথে ভর্তি হয়েছিলাম। উৎরিয়ে গেলাম কঠিনতম পরীক্ষা থেকে।


ভর্তি হলাম অর্নাসে কমার্স কলেজে। পার করলাম বিরুক্তিকর সেশনজট। আমি আমার প্রিয় বন্ধু জুয়েলকে হারালাম। ও তুরাগ নদীর পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিল। এখনও ওর মুখ ভাসে। ও কোনদিন জানতে পারবে না ও পরীক্ষাতে খুব ভালো করেছিল।

২৬ জুলাই, ২০১২
--------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজক্টে ৪২/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি- ৪১


আমাদের প্রত্যেকের জীবনের শুরু গল্পটা একটা সহজ সমীকরণে চলতে থাকে। যেমনটা আমাদের শৈশব আমাদের ভিতর একটা সহজ পথ তৈরী করে দিয়েছিল, যে পথ ধরে আমরা শেষ করেছি শিক্ষাজীবন, শৈশবের খেলাধূলা। আমরা যদি একটু পিছু ফিরে তাকাই আমরা খুঁজে পাব আমাদের আনন্দ, আমাদের দীর্ঘশ্বাস বাড়বে হয়ত, "ইস! আবার যদি ফিরে পেতাম সেই দিনগুলি"। আমাদের জীবনটা যদি সমীরকরণে ফেলে দেই তাহলে আমরা খুঁজে পাব আমাদের দিনগুলো। যেমনটি আমি খুঁজে পেয়েছি চারটি সমীকরণে আমার জীবনের গল্প। আজ শুধু দুটো সমীকরনে বাকীগুলো কাল।


সমীকরণ ১: (আমার বয়স ১ থেকে ১০ বছরে)
১ - ৪ বছর
এই সময় আমার প্রিয় বন্ধু ছিল। আমার দাদু। যার ঘরে আমি সারাক্ষন খেলা করতাম। দাদু জায়নামাজে আমি শুয়ে পড়তাম। দেখতাম কি দাদু নামায পড়েন। দাদু রোজ মাগরিবের নামায শেষে আমার জন্যে মিষ্টি নিয়ে আসতেন। 


মা তখন ঢাকা ভাসিটির ছাত্রী। বাবা তখন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে সার্ভিস ইঞ্জিনয়র ছিলেন। রোজ সকালে আমাকে বাবা-মা খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে চলে যেতেন। দাদু আমাকে দেখে রাখতেন। বেলা বাড়তে মা চলে আসতেন। ছেলে দুশ্চিন্তাতে মা কোন সময় সব ক্লাস করতে পারতেন না। আমার জ্বর আসত মাকে দেখতাম আমার কাছে বই নিয়ে পড়ছেন। খুব অবাক ব্যাপার ছিল আমার শরীর খারাপ হত, মার প্রতিটি পরীক্ষার আগেই। আমি একসময় স্কুলে ভর্তি হলাম  আমার প্রথম স্কুলে নাম ছিল ফুল কুঁড়ি। যেখানে আমি প্রথম বন্ধু হিসাবে পেলাম আবীর, জিয়া, ফয়সাল , ঝর্না, সোমা আরো অনেককে।


চাকরীসূত্র আমার নানা বাড়ী ছিল কুমিল্লা শহরে। যেখানে আমার মায়ের শৈশবজীবন।
আমরা প্রায়ই সেখানে যেতাম যখনই বাবা ছুটি পেতেন। আমরা খালাত ভাইবোনরা মিলে খুব আনন্দ করতাম। আপিন আমাকে আদর করে খাইয়ে দিতেন। আমি পোলাও পাগল ছিলাম বলে আমার জন্যে রোজ পোলাও রান্না করতেন।

৫-১০ বছর
আমি এই সময় আমার দাদুকে হারালাম। দাদুকে কবর দিতে যেতে দেখতে পারি নি খুব ছোট ছিলাম বলে। বাবাকে কোনদিন সেদিনের মতন দুমরে পড়তে দেখি নি। প্রথমবার বাবাকে ভেঙ্গে পড়তে দেখে আমিও খুব মন খারাপ করেছিলাম। দাদু প্রায়ই চট্টগ্রাম গিয়ে থাকতেন বড় ফুপুর দারুল ফজল বাসাতে। উনি মারা গেলেন সেখানে। দাদু কবর দিয়ে আসা হল মোহরাতে। আমাকে বলা হয়েছিল দাদু বেড়াতে গিয়েছিয়েন ফিরবে যে কোনদিন। আমার অপেক্ষার পালা আরম্ভ হল। দাদুকে চিঠি লিখতাম পেনসিল দিয়ে একটা কাগজে। একটাই কথা থাকত, দাদু তুমি কোথায়? বাড়ী ফিরবে কবে? রোজ বাবা অফিস যাওয়ার পথে বাবাকে সেই কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলতাম আমার চিঠিটা দাদুর কাছে পাঠিয়ে দিও। বাবা চুপ করে থাকতেন। মা আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যেতেন। 


আমরা শ্যামলীতে চলে গেলাম। সেখানে শুরু হল আমাদের নতুন জীবন। নতুন বন্ধু বিপুল। আমি আবার নতুন স্কুলে ভর্তি হলাম। আমার ছোট বোনের জন্ম হল । আমি খুব খুশী ছিলাম আমার ছোট বোনকে পেয়ে। 


বাবা প্রায়ই অফিসের কাজে চট্টগ্রাম যেতেন আমিও মাঝে মাঝে তার সংগে যেতাম। বড়ফুপুর বাড়ী দারুল ফজলে রিংকু ভাই এবং হেমা আপু সাথে দিন কাটাতাম। সারাটা পাচঁলাইশ ঘুরে বেড়াতাম । পেছনে মেডিকেল কলেজে পাহাড় ছিল আমাদের বিকালে খেলার সঙ্গী। সেবার ঢাকার ফেরার সময় বাসে শুনেছিলাম চট্টগ্রামে সার্কিট হাউজে তৎকালানী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে মেরে ফেলা হয়েছে। 


দাদু চলে যাওয়ার পর আমাদের বাড়ীতে টুটুল ফুপু থাকতেন। তখন সেখানে ডাকাতি হয়েছিল। আবার আমরা গোপিবাগ ফিরে এলাম। শ্যামলীতে রেখে এলাম দু'বছরের সুখ স্মৃতি, কিছু প্রিয় বন্ধু বিপুল, তানিম। আবার, ভর্তি হলাম ফুল কুঁড়ি স্কুলে একবছর পড়ে চলে গেলাম মতিঝিল মডেল হাই স্কুলে।   





২৫ জুলাই, ২০১২
--------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজক্টে ৪১/৩৬৫

Tuesday, July 24, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি- ৪০


আজকাল পুরানো দিনগুলোর স্মৃতি আমাকে বড্ড বেশী ভোগাচ্ছে। প্রায়শই এইটা ওইটা মনে করে মনটা বিষন্ন হয়ে যাচ্ছে। 


আমার জন্ম হয়েছিল একটা সাদামাটা পাড়ায় যার নাম গোপিবাগ, যেখানে আমি শেষ করেছি আমার শৈশব ও শিক্ষাজীবন। আমাদের পাড়ার প্রতিটি আনাচেকানাচে গলিগুলো আমার হাজারো স্মৃতি। রোজ সকালবেলা থেকে রিকসা করে স্কুল, কলেজ বিকাল শেষে স্টেশন রোড ধরে বাড়ী ফেরা, বিকালে জয়নালে ফুচকা, সন্ধ্যাবেলাতে জামশেদের গরুর চাপ, আলু পুড়ি, রেল লাইনের ধারে খাজা হালিম, কোনসময় পুরানো ঢাকার ঝুনু পোলাও, এগুলো ছিল রোজকার রুটিন। ভোরবেলাতে গণিত স্যারের কাছে যেতাম। 


আমরা বন্ধুরা মিলে চাঁদা তুলে ইফতার আয়োজন করতাম। আমাদের সবচেয়ে পুরানো রীতিনীতি ছিল 'মুড়ি পার্টি', বেশ আয়োজন করে আমরা মুড়ি মাখানো খেতাম, এই মুড়ি বানানোতে দক্ষ ছিল আমার কয়েকজন প্রিয় বন্ধু টিটু, মামুন, রুবেল, সাইফূল, আবির, মিতু, টুটুল আরো অনেকেই। নানান আইটেমে মিশিয়ে খুব আয়োজন করে মুড়ি মাখানো খেতাম। প্রচন্ড মিস করি সেই দিনগুলো। 


এই গোপিবাগ ছেড়ে নাটক পাড়া সেগুনবাগিচাতে চলে এসেছি ছয় বছর আগে । তবুও মন পড়ে থাকে আমার এদিকওদিক ছুটে চলা চিরচেনা সেই অলিগলিতে। 


২৪ জুলাই, ২০১২
---------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজক্টে ৪০/৩৬৫

Monday, July 23, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি- ৩৯


আমি আমার ভিতরে হুট করে গজিয়ে উঠা বিষন্নতাকে খুব ভয় পাই। বিষন্নতা যখন সীমা অতিক্রম করতে থাকে তখন সে আমাকে প্রচন্ডরকম অভিমানী করে তোলে। আমি প্রচন্ড আক্রোশে সব চিহ্ন মুছে ফেলি । 


অনেক পুরানো কিছু স্মৃতি, অনেক চেনা প্রিয় মুখ, অনেক কষ্টে গড়ে তোলা স্বপ্নগুলো, অনেকগুলো নিজের মায়ামাখা হাতে গড়া কিছু কাঠামো, যাদের উপর প্রচন্ড রাগ হয়, আমি কষ্ট জমিয়ে তুলি যেগুলো জমতে জমতে কঠিন হতে আমাকেও ভাবলেশহীন জড় পদার্থ বানিয়ে দেয়, যার ফলপ্রসূতে আমি তাকে মুছে ফেলি জীবনের অংশ থেকে, এক সময় ধীরে ধীরে সেটি অতীতের অংশ হয়ে যায় এবং আমি অন্য রাস্তাতে হাঁটতে শুরু করি।  


"ক্ষমা" শব্দটি আমার কাছে নিছক ছেলেমানুষী। আমি মিথ্যা কিংবা অবহেলা সহ্য করতে পারি না। কেননা, একটা মানুষের প্রতি আমার প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস যেটি আমার মনকে সজীব করে তোলে। যখন কেউ সেই আত্মবিশ্বাসের দেয়ালে আঘাত হানে আমি ঠিক সেই মুহূর্তে তার জীবন থেকে চলে যাই। ভুল শুধরে অনেকে আমার কাছে ফিরে আসার প্রচেষ্টা চালায়, আকুতিও করে, কিন্তু আমি ঐ যে প্রচন্ড অভিমানী, জেদ করি, কোন দিন তাঁর কাছে ফিরে আসি না। চলে যাই দূর থেকে বহুদূর।  


২৩ জুলাই, ২০১২
---------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজক্টে ৩৯/৩৬৫

Saturday, July 21, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি- ৩৮


প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে ঘুম ভাঙ্গলো । 


স্বপ্ন দেখছিলাম সেন্ট মার্টিন দ্বীপের । আমি সাগর জলে গা ডুবিয়ে বসে আছি, আমাকে বারবার ডুবিয়ে দিতে চাচ্ছে ছোট ছোট ঢেউ। আমি ছেলেমানুষী উচ্ছ্বাস করছি। সম্মুখে প্রবালরাও খিলখিল করে হাসছে। কাউকে তোয়াক্কা করছি না। ‍


"দারুচিনি দ্বীপ" নাম দিয়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে প্রথম চিনিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। পুর্ণিমাতে সাগরের বুকে ভিজার পাগলামী আমার মাথা ঢুকে গিয়েছিল দারুচিনি দ্বীপ বইটা পড়ে । এই বইটা আমাদের পরিচিত স্বজন মহলে এতটা আলোড়ন তৈরী করেছিল আমাকে 'শুভ্র' ডাকা শুরু করেছিল। আড়ালে অনেক সময় 'কানাবাবা'। যখন যার যেটা বলতে ভাল লাগত। আমি এই নাম সম্পর্কে তখনও অতটা স্পষ্ট ছিলাম না বলে "দারুচিনি দ্বীপ" বইটা এক রাতে গ্রোগাসে পড়ে শেষ করেছিলাম। আমি এতটা বিভোর ছিলাম একদম টের পাই নি, শেষ রাতের দিকে আযানের শব্দে আমার ঘোর ভেঙ্গে ছিল। 


দীর্ঘদিন শেষে আজ আবার আমি খুব স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, সাগেরের জলে নেমে যাচ্ছে শুভ্র। ঠিক আমার মতন চশমা চোখে আমাকে দেখে হাসছে ।ধীরে ধীরে শুভ্র মিলিয়ে যাচ্ছে কুয়াশায়। কুয়াশা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাকে না ফেরার দেশে। 'শুভ্র' তুই ভালো থাকিস যেভাবে থাকিস, তোর আর এখন আর চশমা হারানো ভয় নেই। কেননা, তুই আজ নিজেই হারিয়ে গেছিস।



২২ জুলাই, ২০১২
---------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজক্টে ৩৮/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি- ৩৭

আজ থেকে পবিত্র মাহে রমজান। সংযমের এক মাস। আমাদের মুসলিম জাতির জন্যে খুবই পবিত্র মাস। সিয়াম সাধন পর্ব শুরু হয়। কেউ রোযা রাখেন কেউ অসুস্থতার জন্যে রাখতে পারেন না। পবিত্রতা বজায় রাখার দায়িত্ববোধ সবার ভিতর থাকা উচিত। আবার দেখা যায়, অনেকে সারা বছর নামায না পড়ে এক মাস অন্যকে নামায পড়তে জোরজববস্তি করতে দেখা যায়। ধর্ম-কর্ম এমন একটা বিষয় যেটা স্বেচ্ছায় না করলে কোন দিন পূর্ণতা পায় না। আমার কাছে খুবই হাস্যকর লাগে আমাদের ভিতর অনেক মানুষ আছে সারা বছর পাপ, মিথ্যাচার করে এই রমজান মাসে তারা ফেরেস্তার ভূমিকায় অবর্তীন হয়। রমজান শেষে আবার সেই পুরানো ভূমিকায় ফিরে যায়।  যে মানুষ ভালো কাজ করতে জানে সে সারা বছরই ভালো কাজ করে। তার ভালো কাজ করার জন্যে রমজান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় না। সত্যিকার মুমিনরা এক মাসের মুমিন নয় সারাজীবনের মুমিন হয়ে থাকে।   


২১ জুলাই, ২০১২
---------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজক্টে ৩৭/৩৬৫

Friday, July 20, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি- ৩৬

আজ সারাটা দিন প্রচন্ড ব্যস্ততায় বেরিয়ে গেল। ছুটির দিন সহসা বিছানা ছাড়তে ইচ্ছা করে না।
 

আজ গ্রাসহপার্স ফটোগ্রাফির একটা ওয়ার্কশপে সারাদিন কাটিয়ে দিলাম সংগে ছিল আনালিমিটেড খাওয়া-দাওয়া। অনেক দিন পর উত্তরাতে পা রাখলাম। অনেকগুলো বাড়ী-ঘরে ভরে গেছে। অদ্ভুত একটা টান আমার উত্তরার প্রতি, কিন্তু কেন, তা জানি না। ভালো লাগে ঘুরতে যেতে কোন সময় মনে হয় এক রাত থেকে যাই, কিন্তু সম্ভবপর হয় না। আজ ওয়ার্কশপে অনেক নতুন মুখের সাথে পরিচিত হলাম, পুরানো মুখগুলো দেখতে পেলাম। সবার একটা জিনিষ খুব ভালো লাগল সবাই খুব ফটোগ্রাফিকে নিয়ে ডেডিকেটেড। সবার ভিতর শেখার ইচ্ছাটা প্রবল ছিল। অহংকার নেই।

আজ আকাশটা ছিল দারুন। সকাল, দুপুর ছিল প্রচন্ড নীল সংগে অসংখ্য মেঘমালা  এবং শেষ বিকালে গোলাপী আকাশ।

হঠাৎ সদ্য প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের একটা কথা মনে পড়ে গেল," মেঘ বলছে যাব যাব "।


২০ জুলাই, ২০১২
--------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজক্টে ৩৬/৩৬৫

Thursday, July 19, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি- ৩৫

কখনো সখনো উড়তে মানা
----------------------------
সারাবেলা জুড়ে উড়ে ঘুরে,
ক্লান্ত ডানার ভাজে ভাজে ঘুম;
পূর্ণিমার আলো গায়ে মেখে,
আমার ক্লান্ত পালকের আনাচে কানাচে
স্বপ্নরা ঘুরে ফিরে।


আমার ঘুম ভাঙ্গে প্রায়শই অবেলায়
কাঠফাঁটা রোদে।
আমার বেহুশ মুহূর্ত থেকে
আমাকে টেনে তোলে
ভালবাসার কন্ঠ,
"এ্যাই শুনছো,
ভোরবেলা বয়ে যায়
উঠো এখনই" ।
আমি চোখ ডলতে ডলতে
অনুনয় করি,
আব্দার করি আরেকটু ঘুমানোর,
শুধু একটুখানি।


বেলা বাড়ে,
ক্লান্তি ধরে ,
বৃষ্টি নামবে বলে
আকাশ অন্ধকারে।
আমি উঠি উড়ে মেলে দিতে
শ্বেত ডানা,
ঘর ছাড়ি
ফিরব আবার,
হয়ত নাও ফিরতে পারি।
গতকাল প্রিয় বন্ধু ফিরতে পারে নি
বুলেট তাকে নিয়ে গেছে কোথাও,
চেনা আলো থেকে অজানা অন্ধকারে।


১৯ জুলাই, ২০১২
---------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজক্টে ৩৫/৩৬৫

Wednesday, July 18, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি- ৩৪

আজকাল পুরানো সমস্যাতে নতুন করে ভুগছি। প্রায়শই ভুলে যাচ্ছি এইটা ওইটা। সকালে আমার এক বন্ধু ফোন দিল অনেক কথা বললো, তথ্য দিলো, আমি মনে করতে পারলাম না তার সাথে আমার পরিচয় সূত্র। পরে জানলাম, আমরা এক কলেজের এক ক্লাসে পড়তাম। ও খুব অবাক হয়েছিল যখন আমি ওকে বললাম, ঠিক চিনতে পারলাম না। 

আমার এই রকম ভুলোমনা অভ্যাস একবারেই ছিল না যে, তা নয় ; শৈশবকাল থেকেই আমি আনমোনা ছিলাম, স্কুল জীবনের শুরুতে প্রথম বকাটা খেয়েছিলাম আমার মা'র কাছ থেকে, মা তখন পড়াচ্ছিলেন আমি অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম। পেনসিল নিয়ে লিখতে লিখতে ভাবুক হয়ে যেতাম। অঙ্ক খাতায় থাকত ছড়া, এখন ভাবলে খুব হাসি পায়। আঁকাআকি খুব আনন্দের সাথে উপভোগ করতাম, গ্রামের দৃশ্য আঁকার পুরানো অভ্যাসটা অনেক দিন ধরেছিল। একবার চেষ্টা করেছিলাম জোছনা রাতে গ্রামের বাড়ীর ছবি আঁকবো, ছবিটা কল্পনাতে ছিল নিঁখুত কিন্তু বাস্তবে আঁকতে গিয়ে বেশী দূর এগুতে পারি নি।

আমার খামখেয়ালীপনায় আমি একবার অনেক সহজ অঙ্ক ভুল করেছিলাম, যার ফলপ্রসুতে আমি অষ্টম শ্রেনীতে অঙ্কতে ভয়াবহ মার্ক পেয়েছিলাম, এতটা ভয়াবহ ছিল যে, আমার শেষ ফাইনাল পরীক্ষাতে কমপক্ষে ৭০ মার্কস পেতে হবে প্রমোশনের জন্যে সেই রকম শর্ত ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমার বাবা-মা নির্ঘুম রাত শুরু হয়েছিল, আমাকে পুরোদমে খাতা কলম দিয়ে দীর্ঘ অনুশীলনী প্রচেষ্টায়, আমি শেষমেষ ৮০ মার্কস পেয়েছিলাম। এই নম্বরটা দেখে আমার অঙ্ক শিক্ষক হেমবাবু স্যার বেশ কয়েকবার আমার খাতা চেক করে দেখেছিলেন, কারন এই নম্বরটা তার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়েছিল। শেষমেষ উনি সবাইকে খাতা দেখিয়ে বলেছিলেন, অয়ন আজকে আমাকে একটা জিনিষ শিখিয়ে দিল মেধা কখনও সংখ্যা দিয়ে যাচাই করা যায় না, নিজের ইচ্ছা শক্তির ব্যাপারটাই আসল। আমিও খুব ভড়কে গিয়েছিলাম কেননা আমিও অবাক ছিলাম এত নম্বরের পাওয়ার পর তবে ৭০ মার্কসের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলাম। এর পরে আমার মন খারাপ হয়েছিল খামোখা সবাই এতদিন কষ্ট পেল আমার জন্যে।

অফিস ডেস্ককে আমার অসংখ্য স্টিকার কাগজের টুকরো যেখানে আগামী দিনের কর্ম পন্থা লেখা থাকে, কেননা, হয়ত আগামীতে ভুলে যেতে পারি, যেমনটা আমি আজ মনে করতে পারি না , অনেককের নাম, যারা আমার এককালে কাছে ছিল, অনেককে ভুলতে যাচ্ছি যাদেরকে আমি কাছে পাচ্ছি না।

১৮ জুলাই, ২০১২
--------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজক্টে ৩৪/৩৬৫

Tuesday, July 17, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি- ৩৩


জানালার গা ঘেষে আমার টেবিল, আর তাতে আমি প্রতিদিন ডায়রী লিখে যাই। জানালা দিয়ে তাকালে আমি খুঁজে পাই নীল আকাশের বাদামী সুর্য আর ঝিরঝিরি বাতাস। কখনো সখনো অচেনা ফুলের গন্ধ আমার মনোযোগ নষ্ট করে। এরাই আমার ডায়রীর বাসিন্দা। কিন্তু আজ ডায়রী লিখছি ওদের ছাড়া। 


অনেকদিন পর ভোর দেখলাম। এখন সকাল সাড়ে পাঁচটা বাজে । কিছুক্ষণ আগে মোয়াজ্জিন আযান দিল । অদ্ভুত ভালো লাগল ফজরের আযান শুনে । আমি সবগুলো আযান শুনি । কিন্তু  সকালবেলাকার মতন এত চমৎকার নয়। 


সকাল থেকে প্রচন্ড ক্ষিধা পেয়েছিল। আমি অনেকক্ষণ না খেয়ে বসে ছিলাম। আমার আশেপাশে অনেকগুলো মানুষ ঘোরাফেরা করছিল কিন্তু কেউ টের পায় নি। আসলে আমি এরকমই, প্রচন্ড কষ্ট হলেও চেপে যাই। আমার এই চেপে যাওয়া অভ্যাস নাকি  আমি জন্মের থেকে পেয়েছি এ কথা আমার নানু বলতেন।


একবার আমি লুকোচুরি খেলতে গিয়ে পায়ে পেরেক ফুটল, আমার পা পুরো লাল হয়ে গিয়েছিল। আমি এটুকু ভয় পাই নি , শুধু চেপে গিয়েছিলাম মা বকবে বলে। তখন আমার বয়স কতই ছিল দশ কিংবা নয়।


আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়তাম। অংকে ভীষণ দূর্বল ছিলাম যে, প্রাইভেট পড়তে যেতাম। আর সেখানে পরিচয় হল একটি মেয়ের সাথে। সেই মেয়েটাকে একদিন না দেখলে ভালো লাগত না। আমি জানি না এর অর্থ কি,“ভালোবাসা”!!! আমি ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা বলেছিল তুই প্রেমে পড়েছিস। আসলে ঐটুকু বয়সে ভালোবাসার সংজ্ঞা আমার কাছে ছিল রহস্যময়ী এবং অস্পষ্ট। সেই মেয়েটাকে কোনদিন বলতে পারি নি এই সত্য কথাটা, এর জন্যে বোধহয় দায়ী আমার চেপে যাওয়া স্বভাবটা। একদিন সে চলে গেল সানাইয়ের সুরে। আমি হাসতে হাসতে তাঁর বিয়েতে গিয়েছিলাম ।আমি প্রচন্ড ঘোরের ছিলাম সারাটিক্ষণ। আমি পেলাম প্রথমবারের মতন প্রচন্ড যন্ত্রনা; ঠিক যেন আমার গায়ে অসংখ্য সূঁচ বিদ্ধ হচ্ছে। 


একদিন হুট করে আমার প্রিয় নানু মারা গেলেন। আমি দ্বিতীয়বারের মতন প্রচন্ড কষ্ট পেলাম। এই কষ্টটা আমাকে ভালোমতন যন্ত্রনার সংজ্ঞা শিখিয়ে দিল। আমি অঝোর বৃষ্টির মতন কাঁদলাম। এই নানুই,  একমাত্র আমার চেপে থাকার স্বভাবটা ধরতে পেরেছিলেন। আমার কলেজ ছিল নানুর বাসার কাছে। সেই সুবাদে নানুর বাসায় যেতাম । আমার চোখে মুখে যে প্রচন্ড ক্লান্তি, ক্ষুধা ছিল তা নানু খুব ভালো মতন বুঝতেন। আমার প্রিয় খাবারগুলো সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যেতাম। 


আজকাল আমি মাঝে মাঝে নানুর কবরে যাই, আর মার ব্যাপারে নালিশ করি, কখনো সখনো নানুর সাথে একা একা কথা বলি। নানু শুধু শুনে যায়, কিছুই বলে না। 
হঠাৎ জানালা দিয়ে দেখি আলো ঢুকছে। অথচ আমি ডায়রীতে এত বেশী মগ্ন ছিলাম যে , সেই কখন আকাশ ফর্সা হয়ে এল একদম টের পাই নি। 


আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষগুলো ঐ দূর আকাশে। আর আমি আকাশের বুকে হাত বাড়িয়ে তাদের ডাকি প্রতিদিন। আর ঐ যে সুর্য আমাকে বলে,সবকিছু তো শেষ হয়ে যায় নি, আমার জন্যে আরো অনেকগুলো মানুষ স্বপ্ন দেখে, কষ্ট পায়, নতুন আশায় আশান্বিত হয় । আর আমিও উজ্জীবিত হয়ে নতুন সকালের মতন ভাঙ্গা ঘর গুছাই নতুন করে।


১৭ জুলাই, ২০১২
---------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজক্টে ৩৩/৩৬৫

Monday, July 16, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি - ৩২


আজকাল দেখি, কেউ কিছু শেয়ার করতে চাচ্ছে না, হয়ত চাচ্ছে তাও ভয়ে ভয়ে, কারন এখনকার সময়ে শুনছি অনেকেরই যে কোন জিনিষ মেরে দেওয়ার অভ্যাসটা অনেক বেড়ে গেছে। যেমন: ভালো বই , ভালো মুভি, ভালো কিছু গান কিংবা শখের ভালো কিছু কেউ আজকাল দিতে চায় না। যদি দেয় তাহলে আর ফেরত পাচ্ছে না। এজন্যে আমাদের ভিতরকার আত্মবিশ্বাসগুলোর ভিত্তিতে বড়রকম ধাক্কা লাগছে। আমাদের ভিতর আন্তরিকতায় বড় বড় ফাঁক ফোকড় তৈরী হয়ে যাচ্ছে, যার জন্যে এ ওর সাথে তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া-ঝাটি করছে। 


আমি যৌথ পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য হয়ে বেড়ে উঠেছিলাম, সাহিত্য, লেখাপড়া, খেলাধুলার প্রতিটি ব্যাপারে হাতে খড়ি আমাদের সেই পুরানো দোতালা বাড়ীর প্রতিটি প্রিয়মানুষগুলোর। 


দাদুর কোল থেকে শিখেছি আহ্লদ কিভাবে করে, দাদু আমার জন্যে রোজ সন্দেশ নিয়ে আসতেন। দাদুর কাছ থেকে শিখেছি স্ট্যাম্প কালেকশন করা। দাদার কাছে অনেক চিঠি আসত আমি সেগুলো ছোট কাঁচি দিয়ে কেটে একটা খামের ভিতর জমিয়ে রাখতাম। 


বাবাও স্ট্যাম্প কালেকশন করতেন বলে আমাকে পুরো স্ট্যাম্প কালেকশনের অভ্যাসটা তৈরী করে দিয়েছিলেন। নতুন স্ট্যাম্প বই পেলাম। শুরু হল পানিতে ডুবিয়ে রেখে খবর কাগজে লাগিয়ে শুকানো তারপর আঠা লাগিয়ে বইতে লাগানো শুরু। আমার কাছে অনেক স্ট্যাম্প রয়ে যেত যেগুলো আমার অন্য ভাইবোনদের কে দিয়ে দিতাম। এইভাবে আমাদের ভিতর শেয়ার করার মানসিকতা গড়ে উঠে ছিল। 


মা আমাকে বই পড়ার অভ্যাসটা তৈরী করে দিয়েছিলেন ছোটবেলা থেকে মায়ের হাত ধরে আমি বইমেলা যেতাম, এত বই কিনতাম, আমার ছোট হাতপাগুলো অবশ হয়ে যেত কোন সময় বইয়ের ভারে পড়ে যেতাম বারবার। তাও মাকে আমার বই নিতে দিতাম। নতুন বইয়ের গন্ধ আমার আনন্দ চোখে জল চলে আসত। আমি সেই বইগুলো পুরানো ক্যালেন্ডার দিয়ে মলাট করতাম। আমার পড়া শেষ হলে বন্ধুরা পড়তে নিত, আমার ভাই বোনরা সবাই মিলে পড়তাম। গান শোনার ক্ষেত্রে অনেক রেকর্ড করতাম, আমাদের বন্ধু মহল সবাই মিলে একটা গানের আর্কাইভ গড়ে তুলেছিলাম। সবার কাছে সবার গান থাকত। তখন সবাই আমরা টাকা পয়সা খরচ করে অনেক কিছু শেয়ার করতাম। আজকালকার দিনে সব কিছু বিনে পয়সায় পাওয়া যায় গান, বই, মুভি। কিন্তু কেউ শেয়ার করে না। কেননা, তাদের কোন লাভ নেই।  


১৬ জুলাই, ২০১২
---------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ৩২/৩৬৫

Sunday, July 15, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি - ৩১


দু'টো মানুষ 
এক সাথে কত পথ চলা,
হাতে হাত রেখে কথা বলা।
কেন সব করে অবহেলা ?
কেন শেষমেষে এসে বিদায় ?


ফুলদানী আছড়ে ভেঙ্গে চুড়মার,
ফুল জল সব একাকার।
নেমে আসে অন্ধকার,
জানালার বাইরে নেমে আসে রাত।


দু'টো বালিশ
কত স্বপ্ন ভালবাসা বোঝায়,
দেখে যায় এই কুৎসিত লড়াই ।
আশা-আকাঙ্খা সব পুড়ে ছাই,
কেউ মুখ ফুটে কিছু বলে না ।


টেবিল ল্যাম্পের আধো অন্ধকারে,
ভাঙ্গাচোড়া মন দু'টো গুমরে গুমরে মরে,
দু'জনে বসে থাকে হাত ধরবে বলে,
কেউ মুখ ফুটে কিছুই বলে না,
ভগবান তাই নেমে আসে না।


আসে সকাল,
চোখ মুছে চিঠি লেখায়,
স্যুটকেস হাতে ট্যাক্সি ডাকা,
ফিরে না তাকিয়ে দেখা।
ইশ ! 
এইভাবে কি কেউ চলে যায় ।


অঞ্জন দত্ত




এই গানটা আমার অসম্ভব প্রিয়। আমি যতবার শুনি ততবার মুগ্ধ হয়ে ভাবি  গানের কথাগুলো এত সুন্দর কিভাবে লেখা সম্ভব। আসলে আমাদের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ আমাদের জীবনসঙ্গী। একটা প্রিয়মানুষ ছাড়া আরেকটা মানুষ কতটা অসহায় হতে পারে সেটা আমি খুব বেশি অনুভব করি। আমরা চাই সবাই ভালো থাকুক, সবার মঙ্গল কামনা করি তাও কেউ একজন ভালো থাকতে পারে না। যারা ভালো নেই তাদের কষ্ট আমাকে খুব বেশি কষ্ট দেয়। শুধু চোখের জলে শেষ যায় ভালবাসার হিসাব নিকেশ।


১৫ জুলাই, ২০১২
---------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ৩১/৩৬৫

Saturday, July 14, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি - ৩০


চাঁদমামা আজ বড্ড একা,
বড় হয়েছি আমি;
রোজ রাতে আর হয় না কথা,
হয় না দেওয়া হামি।

রোজ রাতে
আর চাঁদের বুড়ি
চড়কা কাটে না রোজ,
ও বুড়ি, তুই আছিস কেমন ?
হয় না নেওয়া খোঁজ।

কোথাও গেল সেই রূপকথার রাত
হাজার গল্প শোনা,
রাজার কুমার,
কোটাল কুমার,
পখ্খীরাজ
সেই ঘোড়া ।

কেড়ে নিলো সেই আজব সময়
আমার কাজলা দিদি।
কে রে তুই, কোন দৈত্য দানো,
সব যে কেড়ে নিলি ?

কে রে তুই, কে রে তুই
সব সহজ শৈশবকে
বদলে দিলি
কিছু যান্ত্রিক বর্জ্যে ?

তুই কে, কে রে তুই
কোন একটা বিষাক্ত প্রলোভনে
আমায় ঠেলে দিলি
কোন এক ভুল স্রোতে

আলাদিনের জাদুর জিনি
আমায় ডাকছে," শোনো",
ব্যস্ত আমি ভীষন রকম
সময় তো নেই কোনো।

আলীবাবার দরজা খোলা
চল্লিশ চোর এলে,
সিন্দাবাদটা একটা বসে
আছে সাগর তীরে ।

সময় আজটা কেমন জানি,
বড় হয়ে গেছি আমি,
তারাগুলোও আজ মেঘের আড়ালে
কোথায় গিয়ে নামি।

এই দারুন গানটা গেয়েছে "ওল্ড স্কুল" নামের একটা ব্যান্ড। আমি অনেকদিন পরে একটা অদ্ভুত ভালো একটা গান পেয়েছিলাম। কিছু কিছু গান থাকে যেগুলো আমাদের শৈশবকে মনে করিয়ে দেয়।  আমিও ভুগি প্রচন্ড নষ্টালজিকতায়। আমার যতদূর মনে পড়ে, আমাকে রূপকথার গল্প শুনাতো আমার মা, কখনো বা বড়চাচা। আমি বই পড়তে পড়তে গোপাল ভাঁড়ের ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। নন্টে ফন্টে, বাটুল দি গ্রেট, হাঁদা-ভোদার কান্ডকারখানা এই সব কমিকসগুলো গ্রোগাসে গিলতাম। আর্চিস কার্টুন সিরিজ পড়তাম রাত জেগে। তারপর শুরু হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ পড়া। নতুন একটা তিন গোয়েন্দা বই বেরুলে আমার বাসায় সময় মতন পৌছে যেত। আমি ওদের মেম্বার হয়ে গিয়েছিলাম। উম্মাদকে এক সময় ভালবেসেছিলাম। ছোটবেলাতে শিশু,কিশোর তারকালোক ভক্ত ছিলাম। আজ আমি অবাক হই ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা টিভিতে ডরেমন নিয়ে ব্যস্ত, কেউ আর বই পড়তে চায় না।


১৪ জুলাই, ২০১২
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ৩০/৩৬৫

Friday, July 13, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি - ২৯

অনেক দিন পর দিব্যি ঘুমালাম। আজকাল মাঝরাতে দুঃস্বপ্নগুলো বড্ড বেশী জ্বালাতন করে, জোর করে ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়, তারপর আবার চলে যাই ঘুমের রাজ্যে। কাল রাতে বেঘোরে ঘুমালাম। 



আজ খেয়াল করলাম, আমাদের জীবন কতগুলো যন্ত্রের কাছে প্রবলভাবে বন্দী। আমরা কোনভাবে এ থেকে বের হতে পারছি না, আমরা এমন একটা দিন পাই নি, যেদিন আমরা এক সেকেন্ডের জন্যে মোবাইলে কথা বলি নি, টিভিটা খুলে দেখি নি, কিংবা কম্পিউটার। এইগুলোর জন্যে আমাদের অস্থিরতা বাড়ছে। আমরা অনলাইনের খুব দ্রুত একটা মানুষকে কাছে পেয়ে যাচ্ছি, আপন করে নিচ্ছি, বিশ্বাসও করছি, কিন্তু যেই মানুষ কাছে ছিল, তারা দূরে চলে যাচ্ছে সেটি খেয়ালও করছি না যে, আমরা আমাদের সময় সেই মানুষটাকে দেখে আসার ইচ্ছেটাকে খুঁজে পাচ্ছি না, এখন আমাদের ফেইসবুকের বাইরে অন্য কোন জীবন নেই, যেটি ছিল সেটি বহু আগেই হারিয়ে গেছে, সেই সাথে হারানোর পথে আমাদের ফেইসবুক জীবনের বাইরে থাকা আপন মানুষগুলো। 


১৩ জুলাই, ২০১২
---------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ২৯/৩৬৫

Thursday, July 12, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি - ২৮


আজ অনেক বৃষ্টি হচ্ছে। নিচু রাস্তাগুলোতে পানিতে টইটুম্বর। প্রায়ই এইরকম ঝুম বৃষ্টিতে ভিজার ইচ্ছে হয় কখনো সখনো  কিন্তু কেন যেন ভিজতে যাওয়ার সময় পাই না। হঠাৎ মনে পড়ে গেল, স্কুল শেষে ফেরার পথে ঝুম বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে বাড়ী ফেরা। আমার ছেলেবলোর বন্ধু রায়হান ওর আজ জন্মদিন, তাই হঠাৎ ওকে নিয়ে বৃষ্টি ভেজা দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল। স্কুল রোজ ছুটি হতো বিকাল ৫টায়। আমি ছিলাম মতিঝিল মডেল হাই স্কুলের ছাত্র। আমাদের আপন রাস্তাগুলো ছিল               
এজিবি কলোনীর অলিগলি, কমলাপুরের রেল লাইন, সেই চেনা পথ ধরে আমরা রোজ হেঁটে বাড়ী ফিরতাম। আমাদের খেলার মাঠে যেতাম সময় মতন, ফুটবলের প্রতি অসম্ভব দুর্বলতা আমাকে এখনও টানে। প্রচন্ড ইচ্ছে করে একটা ফুটবল নিয়ে ছুটে যাই মাঠের এ প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। কিন্তু কর্মব্যস্ততা জীবনের ভারে ক্লান্ত অবসান্ন দেহ মন নিয়ে রাত শেষে ঘুমুতে যাই। প্রচন্ডরকম মিস করি সেই ছেলেবেলার বৃষ্টিতে ভেজা দিনগুলো। আজ হঠাৎ প্রচন্ড ভিজতে ইচ্ছে হল, কেন যেন একা ভিজতে     ইচ্ছে করে না । আমার সাথে যাবি নাকি কেউ একদিন, প্রানভরে বৃষ্টিতে ভিজতে?
  
১২ জুলাই, ২০১২
-----------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ২৮/৩৬৫

Wednesday, July 11, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি - ২৭

ক’দিন ধরে প্রচন্ড কাজের চাপে পুরা অস্থির অবস্থা বিরাজমান। সময় দৌড়াচ্ছে আমি হাঁপাচ্ছি, তাল মিলাতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। সময়ের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে জীবনের গতি খুবই মন্থর হয়ে 
যাচ্ছে। কেননা, জীবন একটা কথাই বুঝে সময়ের থেকে জীবনের মূল্য অনেক বেশী। তবুও জীবনের 
গতি আনতে সময়ের মূল্যকে অস্বীকার করা যাবে না। আমাদের জীবনের থেকে কোন একটা সময়
হারিয়ে ফেলা মানেই হল অতীত, অতীত আমাদের দীর্ঘশ্বাস বাড়ায়, অতীত আমাদের শেখায়,
বর্তমান আমাদেরকে নিয়ে রঙ্গ তামাশা করে, প্রচন্ড অস্থিরতায় ভোগায়, আমরা অতীতের ভুল কেউ
মনে রাখি কেউ ভুলে যাই, যারা মনে রাখতে পারে বর্তমান তাদেরকে ভোগায় কম। অথচ ভবিষ্যত
সে তো রাজকীয় ব্যাপার স্যাপার শুধু স্বপ্ন দেখাদেখি, ছোট-বড় মিলিয়ে অনেক স্বপ্নের সমাহার আর
আমরা বেঁচে আছি স্বপ্ন আছে বলে, নাহলে আমরা সেই কবে হয়ে য়েতাম অতীতের ভুলে যাওয়া
কিংবা মিলিয়ে যাওয়া অংশবিশেষ। 


-----------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ২৭/৩৬৫

Tuesday, July 10, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি - ২৬


শিশির স্নাত সবুজ ঘাসের ছোঁয়া 
তোমার চঞ্চল পায়ের নুপূর ধ্বনি
আমি বরাবর মুগ্ধ অসম্ভব
চেয়ে দেখি 
তোমার মনভোলা চাহনি
তোমার লাল হয়ে উঠা লাজুক হাসিতে 
আমি খুঁজে পাই ভালবাসার ঝংকার
আমি স্বপ্নে হারিয়ে যাই
ঘোলা কুয়াশার চাদরে।
---------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ২৬/৩৬৫

Monday, July 9, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি - ২৫


আজ লেখার মতন মুড নেই তেমন একটা, কি নিয়ে লেখবো সেটা ভাবার কিছু পাচ্ছি না। রোজ কিছু না কিছু লেখব বলে কথা যখন দিয়েছি তখনতো কিছু একটা হলেও তো আমাকে লিখতে হয়। যাক পুরানো কথা মনে পড়ে গেল, ছোটবেলার লেখালেখি বিষয়ক সুখ স্মৃতি, লেখালেখি প্রথম হাতে খড়ি ছিল আমার মার হাতে, আমাকে পেনসিল ধরে বড় বড় করে বর্ণমালা লিখতে শিখিছিলেন। আমি নাকি খুব অলস প্রকৃতির ছিলাম, অ লিখতে লিখতে আ শুরু করতে না করতে টেবিলে ঘুম দিতাম। আম্মা জাগিয়ে দিতেন অর্ধঘুম থেকে, আমি ঘোর লাগা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকতাম। আমার মা'র প্রচন্ড একাগ্রতায় আমি বর্ণমালা লেখাতে পুরোপুরি আয়ত্বে নিয়ে আসলাম। তারপর আমার মায়ের শুরু হলো হাতের লেখা সৌন্দর্য করার প্রচেষ্টা , স্কুলের হোমওয়ার্ক থেকে বাসার এক্সট্রা হোমওয়ার্ক আমার লেখার চেহারা পাল্টে দিলো, আমার মা প্রথম দিকে খুব ভুগেছিলেন, কেননা, আমার লেখা নাকি প্রথম দিকটা ভয়াবহতায় রূপ নিয়েছিল যে, মা অনেক দুশ্চিন্তাতে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছিলেন , বাবা কিঞ্চিত আনন্দিত হয়েছিলেন, যেহেতু লেখা ভয়ঙ্কর, ভবিষ্যতে ছেলে বোধহয় ডাক্তার হবে।  শেষমেষ, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ক্লাস ৪ বোধহয় আমার লেখার একটা ছন্দ পাওয়া গেছে, এর আগ পর্যন্ত ছিল গোয়াল পালানো গরুর মতন। লেখতে লেখতে আমি একসময় প্রচন্ড বই পড়ার নেশায় আসক্ত হলাম, আমাদের ঘরের ভিতরে একগাদা বই পেলাম শুরু করলাম পড়া, প্রাথমিক স্কুলের গন্ডি পেরুতে না পেরুতে দাদীর পড়ার টেবিলের নীচে "বেগম" , মা'র "আনন্দবাজার", বাবার "টাইমস", চাচার "দৈনিক সংবাদ", ফুপুর বিচিত্রা, সব কিছু গ্রোগাসে গিলে ফেললাম। পড়তে পড়তে একসময় গণিতের প্রতি ঘৃণা বাড়তে লাগল কমতে লাগল নাম্বার। বাংলা-ইংরেজীতে ফলাফল ভালোই ছিল, আমার গণিতের ভয়াবহ রূপ মা-বাবার দুশ্চিন্তার কারন হয়ে দাঁড়ালো। শেষমেষ এই গণিতের প্রতি ক্ষোভ নিয়ে ত্যাগ করলাম ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়র হওয়ার ইচ্ছা। সেই স্কুল জীবনে লিখে ফেললাম কবিতা। স্কুল ম্যাগাজিনে এক সময় সেই কবিতা স্থান পেল, আনন্দে চোখে পানি চলে এল। তারপর থেকে কলেজ ম্যাগাজিন, আরো কয়েকটা ম্যাগাজিনে লেখা চলে এল। লেখালেখি নেশার আবত্তে বন্দি হয়ে গেলাম আর বেরুতে পারলাম না। যার কারনে এখনও লেখছি।  


৯ই জুলাই, ২০১২
---------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ২৫/৩৬৫

Sunday, July 8, 2012

কোথায় আছ- কেমন আছ?

কোথায় আছ- কেমন আছ?
খুজিসতা নূরে নাহারিন মুন্নী, প্রয়াত টিংকুর সহধর্মিণী


অবশেষে `ও` চলে গেল। ভোর তখন ৪টা। আমি হাত ধরে বসে আছি। ওর শরীরটা ভীষণ নিস্তেজ। ডাক্তার এলো, বলল আইসিইউতে নিয়ে যাবে। বললাম দরকার নেই। ওকে যেতে দিন। ওর শরীরজুড়ে কষ্ট আর বুকভরা অভিমান নিয়ে ও চলে গেল। এই মুহূর্তটার জন্য ১৫ মাস ধরে মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করেছি। কিন্তু কি অবাক কাণ্ড। সব প্রস্তুতি ছাপিয়ে আমার বুকটা হাহাকার করে উঠল। প্রচণ্ড ধাক্কায় মনে হলো এই পৃথিবীতে ভীষণ একা। কষ্ট আর কষ্ট। আমি আর পারলাম না, বাথরুমে গিয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠলাম। সত্যি সত্যি ও চলে গেল? আমাকে একা ফেলে! আমার এখন কি হবে? ১৮ বছরের যে অসংখ্য স্মৃতি তার কি হবে? আমাদের দুজনের যে অনেক স্বপ্ন সেগুলোর কি হবে? আমাদের জীবনটা যেন অর্ধেকে এসে থেমে গেল। ওর নিথর দেহটা বিছানায় পড়ে আছে। সাদা চাদরে ঢাকা। আমি ওর দিকে তাকাতে পারছি না। সচেতনভাবে অন্যদিকে মুখ করে আছি। আমি ওর অবস্থাটা মেনে নিতে পারছি না। মনে মনে ঠিক করে ফেললাম আমি ওর দিকে তাকাব না আর। আমি বসে আছি। শুধু শ্বাস নেওয়া আর ফেলা যদি জীবন হয় আমি বেঁচে আছি। আমার দুচোখ বেয়ে কষ্টগুলো গলে গলে পড়তে লাগল। ঠিক ১৫ মাস আগে ১০ নভেম্বর (দিনটি ছিল টিংকুর জন্মদিন) ধরা পড়ল ওর মাথায় টিউমার। আমার ডাক্তার ভাই আমাকে প্রস্তুত করার জন্য বলল, কেমো অথবা রেডিওথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। আমি বললাম ম্যালিগনেন্ট? আমার ভাই বলল হতেও পারে। আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। পৃথিবীটা যেন আমার মাথার ওপর দুলে উঠল। আমি চোখে অন্ধকার দেখতে আরম্ভ করলাম। ১৩ নভেম্বর সিঙ্গাপুরের গ্লেনিগাল হাসপাতালে অপারেশনের পর ডাক্তার ট্রিমোথিলি ওকে বলল, `তোমার গ্লাইয়ো ব্লাস্টমা গ্রেড ফোর মাল্টি ফরম টাইপ টিউমার। সবচেয়ে খারাপ ধরনের ক্যান্সারের একটি। আমি টিংকুর হাত ধরে আছি। ও অঙ্েিজন মাস্ক পরা অবস্থায় কাঁদতে শুরু করল। আমার এখন নরম হলে চলবে না `ও` ভেঙে পড়বে। আমি খুব সহজ ভঙ্গিতে বলার চেষ্টা করলাম, এটাই তো তোমার জন্য স্বাভাবিক। তোমার সবকিছুই আন-কমন। তোমার রক্তের গ্রুপ, তোমার মেধা-মনন, চেহারা, বুদ্ধি সবকিছু। তুমি কি করে ভাবলে তোমার সাধারণ কোনো রোগ হবে? ও কষ্টের মধ্যেও হাসতে চেষ্টা করল। ১৬ তারিখে দ্বিতীয় দফা অপারেশনের পর ডাক্তার হাসিমুখে আমাদেরকে বলল, অপারেশন খুব ভালো হয়েছে। টিংকু বলল, আমি ভালো আছি। আমি তো মহাখুশি। ঝটপট আরাবস্ট্রিটে গিয়ে রয়াল থেকে তিনটি লেস শাড়ি কিনে ফেললাম। দোকানদার বলল, আপনাদের ম্যাডাম আমাদের দোকান থেকে শাড়ি কিনে, আমি আরও একটা ফ্রেঞ্চ শিফন কিনলাম। পাঁচ দিন পর রেডিওলজিস্ট এলো রোগীর সঙ্গে দেখা করতে। টিংকু হাসি হাসি মুখ নিয়ে প্রশ্ন করল, ডাক্তার আমার কত দিন বাঁচার সম্ভাবনা আছে? ডাক্তার বলল, পাঁচ বছর। ওর মুখে ছায়া ঘনিয়ে এলো। আমি মনে মনে বললাম, মাত্র পাঁচ বছর। আমাদের কতকিছু এখনো বাকি রয়ে গেছে। কত কথা, কত আকুলতা। তখনো আমি জানতাম না, আমার জানার অনেক বাকি রয়ে গেছে। আমি সিটি স্কয়ার মলে ফেয়ার প্রাইসে বাজার করতে গেছি এমন সময় টিংকুর বন্ধু নাফিস ভাই ফোন করে বলল, `মুনি্ন কোনো আশা নেই, আমি তন্ন তন্ন করে ইন্টারনেট দেখেছি আট থেকে বারো মাস`। আমার পা দুটো কেমন অবস অবস মনে হলো। আমি মেঝেতে বসে পড়লাম। এরপর থেকে চারদিকে ফিস্ফাস আট থেকে বারো। আমি ভেতরে ভেতরে ক্ষয়ে যেতে শুরু করলাম। টিংকু আমাকে বলল, `তুই এমন একটা ছেলে বিয়ে করলি যেটার হায়াত নেই`। কি হবে মুনি্ন, তুমি এত অল্প বয়সে বিধবা হয়ে যাবে? আমি ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম। আমরা দুজনে কাঁদতে থাকলাম। আমরা সিটি স্কয়ার রেসিডেন্সে অনেক বড় একটা বাসা নিলাম। দেশ থেকে একজন কুক নিয়ে এলাম। শুরু হলো আমাদের পিকনিক। প্রতি সপ্তাহে বাংলাদেশ থেকে দুজন করে টিংকুর বন্ধু আসে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিয়ত মঙ্গল কামনাকারীরা সমবেদনা জানানোর জন্য আমাদের বাসায় আসে। আমাদের চার রুমের বাসাটি সবসময় পরিপূর্ণ থাকে। টিংকুর বন্ধু ভাগ্য দেখে আমার খানিকটা ঈর্ষা হয়। তিন মাস পর প্রথম দফা কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি শেষে ফেব্রুয়ারিতে আমরা দেশে ফিরে এলাম। পাঁচ দিন পর আমেরিকার হিউস্টনের এমডি এন্ডারসনের উদ্দেশে রওনা হলাম। হিউস্টন খুব ছিমছাম শান্ত একটি শহর। আমেরিকায় যতবার আসি ততবারই আমার মনে হয় এত জায়গা খালি পড়ে আছে। আমাদের দেশ থেকে কিছু লোক আমেরিকায় নিয়ে এলে কি হয়। এমডি এন্ডারসন অসম্ভব স্মার্ট এবং সুন্দরী একজন অনকলাজিস্ট টিংকুকে বলল, ১৫ মাস। টিংকু আর আমি দুজনই কাঁন্নায় ভেঙে পড়লাম। আমরা দুজন মিলে ঠিক করলাম আমরা কোয়ালিটি সময় কাটানোর চেষ্টা করব। ২০ দিন পর একবুক হতাশা নিয়ে দেশে ফিরে এলাম। সবাই বলল, তোমরা ওমরাহ করতে যাও। ২০১১ সালের মার্চে আমরা আবার সৌদি আরব গেলাম। এরপর লোহাপড়া পানিপড়া, দোয়া-তাবিজ প্রতিনিয়ত আমাদের সঙ্গী হয়ে রইল। এবার তাওয়াফের সময় আমি একটি জায়গায় এসে আবেগে আপ্লুত হয়ে গেলাম। `হে আল্লাহ আমার অন্তরের বাইরের সবই তুমি জান। আমি যা জানি না তাও তুমি জান। আমার ভাগ্যে যা আছে তা অবশ্যই হবে। তুমি আমাকে শক্তি দাও আমি যেন তা সইতে পারি।` আমার দুই চোখ পানিতে ভিজে এলো। ও প্রতি মাসে পপসি ভাইকে নিয়ে সিঙ্গাপুর যেত। পপসি ভাই ডাক্তার। ওর নিকটতম বন্ধুদের একজন। আমি যেতে চাইতাম না। ভয় পেতাম। জুলাই এবং আগস্টে আরও দুটি অপারেশন হলো। প্রথমটা মাথার খুলিতে, দ্বিতীয়টা গামা লাইফ সার্জারি। অপারেশন না করে উপায় ছিল না। নতুন করে তিন জায়গায় গ্রোথ হয়েছিল। শেষবার কোরবানি ঈদের পর যখন `ও` সিঙ্গাপুর গেল টেলিফোন করে হ্যালো বলার পরিবর্তে শুধুই কান্নার শব্দ। আমি যা বোঝার বুঝে নিলাম। শুধু বললাম চলে আস আমার কাছে। দুই দিনের ব্যবধানে ওর ডান পা প্যারালাইসিস। আমি ওকে বললাম, আমার অনেক দিনের শখ আমরা একসঙ্গে এক প্লেটে খাবার খাব। এখন থেকে আমি তোমাকে খাইয়ে দেব, গোসল করিয়ে দেব, দাড়ি সেভ করে দেব, প্রতিদিন একেক ব্র্যান্ডের পারফিউম লাগিয়ে দেব, চুল অাঁচড়ে দেব। এসবই করব আমি আমার নিজের ভালোলাগার জন্য। আমি সব সময় তোমার সঙ্গে থাকব। টিংকু সাংঘাতিক খুশি হলো। ও খুব আড্ডাবাজ। এক মুহূর্ত মানুষ ছাড়া থাকতে পারে না। বাসায় বসে থাকা ওর পছন্দ নয়। ওর জন্য হুইল চেয়ার কিনলাম। ঢাকা ক্লাব, উত্তরা ক্লাবসহ আমি ঢাকায় মোট চারটি ক্লাবের মেম্বার। এই প্রথম আমি খেয়াল করলাম ক্লাবগুলো ছাড়াও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, নামিদামি শপিং সেন্টার, দেশের পাঁচতারা হোটেল, কমিউনিটি সেন্টার এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা কোথাও হুইল চেয়ারের জন্য পৃথক কোনো ব্যবস্থা নেই। তার মানে আমরা কি কখনো বুড়ো হব না? নাকি বুড়ো মানুষের আনন্দ পাওয়ার কোনো অধিকার নেই? শারীরিক প্রতিবন্ধী যারা, তারা কি সব সময় অকেজো হয়ে গৃহবন্দী থাকবে? পঙ্গুত্ব কি তাদের অপরাধ? নাকি অভিশাপ? তারা কেন স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে না? আমি শার্ট-প্যান্ট পরিয়ে বুকের উপর চাদর জড়িয়ে হুইল চেয়ারে করে মতিয়া আপার বাসায় নিয়ে গেলাম, আপা দোতলা থেকে নেমে এলো। মুক্ত বাতাসে ঘুরতে পেরে ও ভীষণ খুশি। প্রতিদিন জেদ ধরত বাইরে ঘুরতে যাবে। কিন্তু কোথায় নিয়ে যাব আমি? বড়জোর সংসদ ভবন অথবা রমনা পার্ক। ধীরে ধীরে ওর পুরো ডান দিক প্যারালাইসিস হলো, শুরু হলো বাঁ দিক। আমি ফিজিওথেরাপি আর আকুপ্রেসারের জন্য দুজন লোক নিয়োগ দিলাম। সেই সঙ্গে চলল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা। বাড়িভর্তি লোকজন শুধু টিংকুকে খুশি রাখার জন্য। সব প্রতিকূলতার সঙ্গে মানিয়ে চলার অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল ওর। দুই দিক প্যারালাইসিস। কথা বলতে পারে না, চোখেও ঠিকমতো দেখে বলে মনে হয় না, তারপরও আমাকে খুশি করার জন্য চুটকি বাজিয়ে গানের সঙ্গে নাচের চেষ্টা করত। আমি খুশি হওয়ার ভাব করতাম কিন্তু কষ্টে আমার বুকটা দুমড়ে-মুচড়ে যেত। আমি জানি ওর হাতে সময় নেই। খুব দ্রুত সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। ওকে আমার প্রেমিক স্বামী কিংবা বন্ধু নয়, ছোট বাচ্চার মতো মনে হয়। খানিকটা অবুঝ, অসহায়। ভীষণ মায়া লাগে। আমার সবটুকুন নিংড়ে দিয়ে ওকে বাঁচিয়ে তোলার ইচ্ছা জাগে। ১০ জানুয়ারি ল্যাবএইডে ভর্তি করাতে বাধ্য হই। এরপর এ একমাস শুধু অপেক্ষা। আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। দৌড়ে পালাতে ইচ্ছা করে। কিন্তু পারি না! সারাক্ষণ বসে বসে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। কোথা দিয়ে দিন হয় কোথা দিয়ে রাত আসে তাও জানি না। টিংকুর নাকে রাইস টিউব। মুখে অঙ্েিজন মাস্ক, স্যালাইন আর ইনজেকশন দেওয়ার জন্য বুকের ডান দিকে সিভিল লাইন করা, সারাক্ষণ কেবলই উৎকণ্ঠা এই বুঝি শেষ। শেষ পর্যন্ত সবই শেষ হয়ে গেল। ওকে সকাল ৭টায় আঞ্জুমান মুফিদুলে গোসলের জন্য পাঠিয়ে আমি বাসায় এলাম। বাথরুমের দরজা বন্ধ করে প্রথমে নাকফুল খুললাম তারপর চুড়ি। আমি সায়েন্সের ছাত্রী। খানিকটা যুক্তিবাদীও। আমার মধ্যে কখনো কোনো কুসংস্কার কাজ করত না। এই প্রথম আমার মনে হলো, নাকফুল আর চুড়ির সঙ্গে খুবই রোমান্টিক একটা সংস্কার জড়িয়ে আছে। আমি বললাম, আমাকে একটা সাদা শাড়ি বের করে দাও, আমার ছেলে বলল, সাদা কেন পরতে হবে। পৃথিবীর সব রং (লাল, নীল, হলুদ) সাদাতে সমানভাবে আছে। এ জন্য এটাকে পবিত্র রং মনে করা হয়। আমি বললাম, এটা প্রতীকী অর্থে তোমার আব্বুর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য। তোমরাও সাদা কাপড় পর। টিংকুর বন্ধু সাজ্জাদ ভাই আমাকে বলল, টিংকুর ব্যবহার করা জিনিসগুলো মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিও। ওদের কাজে আসবে। এটাই নিয়ম। টিংকুর পাঞ্জাবি, প্যান্ট, শার্ট, টাই-কোট সবকিছুই আমি বিলিয়ে দেব। কিন্তু আমি? আমরা রাউজানের উদ্দেশে রওনা হলাম। হঠাৎ টিংকুকে বহন করা আঞ্জুমান মুফিদুলের গাড়ি। আমার বুকটা হু হু করে উঠল। আমার চোখ গড়িয়ে পানি পড়তে লাগল। আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটা আজ বরফের গাড়িতে শুয়ে আছে। আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলাম। রাউজান, টিংকুর স্বপ্নের গ্রাম। কত স্বপ্ন ছিল কত সাধ ছিল এই গ্রামকে ঘিরে। সবকিছুই অপূর্ণ রয়ে গেল। টিংকুর হাত ধরে প্রথম যেদিন আমি এই গ্রামে বউ হয়ে এসেছিলাম অনেক মানুষ এসেছিল আমাকে দেখতে। আমি লজ্জাবনত চোখে হেসেছিলাম। আমার গা-ভর্তি গহনা ছিল, পরনে লাল শাড়ি। আজ বিচ্ছেদের দিন। প্রথম দিনের চেয়ে অনেক বেশি লজ্জা আমাকে ঘিরে রেখেছে। এ লজ্জা অপারগতার লজ্জা, এ লজ্জা সব হারানোর লজ্জা। আমি সাদা শাড়ির উপর একটা কালো বোরকা পরে নিলাম। প্রথমে যেদিন আমি এ গ্রামে এসেছি সবাই আমার হাতে-কানে গলার গহনা দেখেছে। আজও দেখছে। তবে তফাৎ আছে। আজ কিছুই না পেয়ে অবশেষে একজন বলল, ঘড়িটা খুলে ফেল। আমাদের দেশে মহিলারা প্রচণ্ড রকম অবহেলিত, অবদমিত। তাই বেশির ভাগ মহিলা অন্যের শোকের মাঝে নিজের সুখ খুঁজে ফিরে। মহিলাটির জন্য আমার কষ্ট লাগল।


আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জে একটি ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কিন্তু এ মুহূর্তে সবকিছু ছাপিয়ে এই গণ্ড পাড়াগ্রাম আর তার মানুষগুলোকে আমার অনেক আপন মনে হচ্ছে। আমি উল্টা ওদের সান্ত্বনা দেওয়া শুরু করলাম। ওদের ভালোবাসাটুকুন এই মুহূর্তে আমার বড় প্রয়োজন ছিল। আমি কাঙ্গালের মতো ওদের ভালোবাসায় ডুবে রইলাম। ভীষণ পরিশ্রান্ত ছিলাম। ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুম ভাঙল ঘড়িতে দেখি ৪টা। আমার টিংকুর কথা মনে হলো। আমি শব্দ করে কাঁদতে থাকলাম। কোথায় চলে গেল আমার বুকের মানিক, সাতরাজার ধন। অসুখ ধরা পড়ার পর `ও` আমাকে বলত, এমন একটা সময় আসবে তুমি আমাকে খুঁজবে শুধু, পাবে না। আমি এখন প্রতি মুহূর্তে খুঁজে ফিরি। দোলনা পাড়া ছাদে, পুকুর ঘাটে, ক্ষেতের আড়ে, আমাদের শোয়ার ঘরে। নাম না জানা দেশে কোথায় আছে `ও` এখন? কেমন আছে?


লেখক : প্রয়াত জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকুর সহধর্মিণী

অ আ আজকের লেখালেখি - ২৪



হঠাৎ রাস্তায়,
অফিস অঞ্চলে, 
হারিয়ে যাওয়া মুখ
চমকে দিয়ে বলে,
বন্ধু কি খবর বল ?
কতদিন দেখা হয় নি " - সুমন চট্টোপাধ্যায়


আজ আমি খুঁজে পেলাম আমার হারিয়ে যাওয়া বন্ধু রেজাকে, শেষবার দেখেছিলাম ৯৮ সালের দিকে, এতগুলো বছর এবং আমার দুর্বল স্মৃতিশক্তির দরুন প্রথমবার চিনতে পারি নি, থতমত খেয়ে ভাবছিলাম, কে হতে পারে । পনের বছর কিন্তু একটা দীর্ঘ সময়, এতগুলো বছর পরেও একটা মানুষ একই রকম থাকতে পারে সেটা আমার ধারনা ছিল না। রেজা নিজের থেকে নাম বলার পর আবার ধাক্কা খেলাম। রেজা ছিল আমাদের কলেজের তুখোড় ছাত্র। নিমিষে সব পড়া বলে ফেলত। সে কিনা বেকার।রেজা কোথাও কাজ না পেয়ে ডেসটিনি করত, অতঃপর টিউশনীর দিকে ঝুঁকেছে। বিয়ে করতে পারে নি, বউকে কি করে খাওয়াবে, বাড়ীতে শুধু একা মা। রেজার বাবা গত হয়েছেন কয়েক বছর আগেই। বাবা সৎ অফিসার ছিলেন বলে গুটি কয়েকটা পেনশনের টাকাটা ছিল শেষ সম্বল। সেটি আজকালকার অস্বাভাবিক খরুচে এই শহরে নিমেষে শেষ হয়ে গেছে। রোজ বাড়ী ফিরে মা আছে বলে  একবেলা গরম ভাত খেতে পারছে। সেই পুরানো অভ্যাস বারবার চশমা ধরা , একটু পর স্মিত হাসি দিয়ে নতুন কথায় ফেরার সেই পুরানো ভঙ্গিমাগুলো অবিকল আগের মতন পেলাম। আমরা ফিরে গেলাম কলেজ জীবনে, আমাদের নিজের ভিতরে হাস্যরসগুলো জেগে উঠলো । অনেকগুলো পুরাতন মজার কথা ভেবে অনেকদিন পর প্রাণখুলে হাসলাম। আসলে আমাদের রোজকার ধরাবাঁধা রুটিনের জীবনে থাকতে থাকতে আমরা সবাই যান্ত্রিক হয়ে গেছি । সময় গড়িয়ে গেল। বিদায়ের সময় আমি বললাম, "হারাসনে তুই, ভালো থাকিস যেইভাবে থাকিস"; প্রতিউত্তর পেলাম, "তুইও", বলে স্মিত হাসি দিয়ে রেজা মিলিয়ে গেল ভীড়ের ভিতরে।


৮ই জুলাই, ২০১২
---------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ২৪/৩৬৫

Friday, July 6, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি - ২৩

সেই বৃষ্টি ভেজা জলে
রাত জেগে আলোয় ভরা ভোর,
কি এত ভাবছিলি
যে ঘুম আসে নি তোর ?
হয়ত অনেক কান্না বুকে জমা ছিল বলে ,
সেই সময় বৃষ্টি আসত যদি মেঘমালার দলে
তুই কি তখনও কাঁদতি অনেক?
সেই বৃষ্টি ভেজা জলে।


৭ই জুলাই, ২০১২
---------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ২৩/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি - ২২



লেখাটা মাথায় নিয়ে ঘুরলাম কিন্ত ইন্টারনেটে বসতে দেরী হওয়াতে পোস্ট করতে দেরী হয়ে গেছে। আজ শুক্রবার থাকা সত্ত্বে অনেক বেশী মাত্রা ব্যস্ততম দিন পার করলাম। 


আজ বিকালে ছবির হাটে গিয়েছিলাম। সেখানে পেয়ে গেলাম অনেককে, খুব ভালো লাগল নতুন কিছু মানুষের সাথে মিশতে পেরে। বিশেষ করে সুদীপ্ত সালাম ভাইয়ের নামটা শুনেছি কিন্তু কোনদিন দেখা হয় নি। খুব ভালো লাগল একটা অহংকারহীন সহজ সরল মনের মানুষের সাথে মিশে অথচ তিনি বেশ নামীদামী ফটো সাংবাদিক। যাদের ভিতর অহংকার থাকে না তাদের জন্যে শ্রদ্ধাটা আপনাআপনি গড়ে উঠে। সবাইকে নিয়ে ফটো আড্ডাটা খুব ভালো জমেছিল। 


৬ই জুলাই, ২০১২
---------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ২২/৩৬৫

Thursday, July 5, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি - ২১


আজ পবিত্র শবে বরাত। প্রতি বছর আগের দিন থেকে আমাদের বাড়ীতে ব্যাপক প্রস্তুতি চলে। মা'র বানানো মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি তীব্র আকষর্ন আমার ছোটবেলা থেকেই। তাই এই সময় বিভিন্ন ধরনের হালুয়া ভোজের জন্যে আমার মন সবসময় উতালা হয়ে থাকে । বড়বেলাতে এসে শবে বরাত অনেক বেশী ভাবগম্ভীর হয়ে গেছে। 
আমার ছেলেবেলাকার শবে বরাত ছিল খুব মজার, এক সপ্তাহ আগের থেকে প্লান করতাম, পটকা, মরিচা, রকেট আরো কি কি জানি নাম ছিল মনে নেই, সেগুলো কিনতাম, ঠিক শবে বরাতের আগের দিন। আমার ছোট বোন খুব তারা বাতির ভক্ত ছিল বলে ওর জন্যে কিছু তারা বাতি কিনতাম। বিকালবেলাতে আমার প্রিয় খেলার মাঠ প্রায়ই খালি থাকত। আমরা সবাই ব্যস্ত থাকতাম আমাদের সন্ধ্যার পটকা উৎসবের জন্যে। বিকালে সবাই মিলে আলাপ করতাম কখন কোথায় জড়ো হবো পটকা ফাটানোর জন্যে। বাড়ীর ছাদে দেদারসে পটকা দিবস চলতো। মা মাঝে এসে বকা দিয়ে যেত, আমাদের ক্ষতি হতে পারে এই আশংকাতে। কিছুক্ষন বিরতির পর আবার সেই পুরানো ফর্মে ফিরে যেতাম। রাতভর পটকাবাজী শেষে আমরা সবাই দল বেঁধে মসজিদে যেতাম নামাজ পড়তে, ঘন্টাখানেক বাদে সবাই মসজিদের গল্প করতে করতে ঘুম তারপর কিছুক্ষন বাদে বাড়ী ফিরতাম।
চোখ বন্ধ করলে এখনও চোখে ভাসে সেই মুহুর্তগুলো এবং কানের কাছে এখনও বাজে পটকার আওয়াজ। আমাদের সেই আনন্দের দিনগুলি আমরা কোনদিন ফিরে পাব না সেটা ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। আমাদের প্রিয় মানুষ যারা আছেন, যারা নেই সবার জন্যে দোয়া রইলো সবাই যাতে আরো বেশী বেশী ভালো থাকেন। আমিন।   


৫ই জুলাই, ২০১২
---------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ২১/৩৬৫

Wednesday, July 4, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি - ২০

আজ প্রচন্ড ব্যস্ততার ভিতর একটু সময় বের করে ছুটে গিয়েছিলাম জাতীয় বৃক্ষমেলা ২০১২ দেখতে। মূল উদ্দেশ্যটা ছিল ভালো কিছু ফুলের ফটো বের করে আনা এবং নিজের জ্ঞানটাতে আরেকটু সমৃদ্ধ করে তোলা। বৃক্ষের প্রতি আমার অনীহা আমাকে বৃক্ষ সম্পর্কে বেশ ভালো মতন অজ্ঞ করে রেখেছে। যার জন্যে অনেক সময় ফুলের ফটো তুলে ফেলি কিন্তু নাম বলতে অনেকক্ষন ভাবতে হয় নয়ত কাউকে জিজ্ঞাসা করে জানতে হয়, তাই ভাবলাম, এসো নিজে করি ধারনা লালন করে নিজে গিয়ে কিছু শিখে আসি। আমি খুবই মুগ্ধ হলাম প্রথমবারের মতন এই মেলাতে এসে। আমরা যদি বৃক্ষকে পরিপূর্ণভাবে মূল্যবান সম্পদ হিসেবে গণ্য করি তাহলে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ধনী রাষ্ট্র হতে পারে।

আমাদের তরুন প্রজন্মকে আমি দেখি রাস্তার মোড়ে মোড়ে আড্ডা দিচ্ছে এবং একটা হেঁটে যাওয়া কোন মেয়ের দিকে অন্য গ্রহের প্রানী ভেবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে সময় পার করছে। অথচ এই সময়টুকু যদি কোন শখের পিছনে দিত তাহলে আমাদের দেশে ইভটিজের মহামারী চেহারাটা আমাদের দেখতে হতো না, কোন মেয়ের মুখ এসিডে ঝলসাতো না। যতদিন না আমাদের সমাজটা এই শখের মূল্যটা উপলব্ধি করতে পারবে ততদিন এইসব হাহাকার চলতেই থাকবে।

৪ঠা জুলাই, ২০১২
------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ২০/৩৬৫

Tuesday, July 3, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি - ১৯

আজ আকাশটা ছিল প্রচন্ড মেঘলা, মন খারাপ করা রকম। 


ফিডব্যাকের উদাসী এ্যালবামে একটা গান মনে পড়ে গেল, 


উদাসী এই মনে 
আমি যা ভেবেছি, 
এত আশা নিয়ে এ মনে
আমি কি পেয়েছি !!!!!

হুট করে মন খারাপ করা আমার ছেলেবেলাকার অভ্যাস। পুরানো এই অভ্যাসটা অনেক দিন ধরে তাড়ানোর
চেষ্টা করেছি, এখন পর্যন্ত বিফলে গেছে সব প্রচেষ্টা। হতে পারে আমার অসম্ভবরকম আবেগপূর্ণ মনের পাগলামীপনা।

মন খারাপ মন নিয়ে লেখতে লেখতে হুট করে মাথায় একটা কবিতা এসে পড়লো;

মন খারাপ করা আকাশ,
প্রচন্ড আক্রোশে মেঘমালা।
বৃষ্টি নামবে এক্ষুনি,
আজও কি ভিজবে তুমি?
ভিজতে ভিজতে যাবি নাকি
উড়ে কোথাও দূর থেকে বহুদূরে
এই চেনা ব্যস্ত শহর ছেড়ে।

৩রা জুলাই, ২০১২
------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১৯/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি - ১৯

আজ আকাশটা ছিল প্রচন্ড মেঘলা, মন খারাপ করা রকম। 


ফিডব্যাকের উদাসী এ্যালবামে একটা গান মনে পড়ে গেল, 


উদাসী এই মনে 
আমি যা ভেবেছি, 
এত আশা নিয়ে এ মনে
আমি কি পেয়েছি !!!!!

হুট করে মন খারাপ করা আমার ছেলেবেলাকার অভ্যাস। পুরানো এই অভ্যাসটা অনেক দিন ধরে তাড়ানোর
চেষ্টা করেছি, এখন পর্যন্ত বিফলে গেছে সব প্রচেষ্টা। হতে পারে আমার অসম্ভবরকম আবেগপূর্ণ মনের পাগলামীপনা।

মন খারাপ মন নিয়ে লেখতে লেখতে হুট করে মাথায় একটা কবিতা এসে পড়লো;

মন খারাপ করা আকাশ,
প্রচন্ড আক্রোশে মেঘমালা।
বৃষ্টি নামবে এক্ষুনি,
আজও কি ভিজবে তুমি?
ভিজতে ভিজতে যাবি নাকি
উড়ে কোথাও দূর থেকে বহুদূরে
এই চেনা ব্যস্ত শহর ছেড়ে।

৩রা জুলাই, ২০১২
------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১৯/৩৬৫

Monday, July 2, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি - ১৮

আজ অফিসে আসার পথে রোজকার রুটিন যানজটে পড়লাম। সেই মুহুর্ত খোলা আকাশ বরাবর চোখ
চলে গেল অসম্ভব সুন্দর নীল রঙের আকাশ, সাদা মেঘরাও কম যায় নি। মনে হল, দু’জন মিলে
সেরা সুন্দরী হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এইরকম সাধারনত শরতকালে বেশী দেখা যায়। খুব
ইচ্ছা হচ্ছিল, ছবি তুলতে বের হয়ে যাই।
কর্মজীবনের ব্যস্ততায় আমরা অনেক সুন্দর মুহূর্ত হারিয়ে ফেলি। অথচ আমি অনেককে দেখি সুন্দর
খুঁজে পায় না কোথাও। আমরা এই দোষ দিতে পারি না, আমাদের রোজকার সংগ্রাম করে টিকে থাকা জীবনে, অসংখ্য কন্টক ভীড় করে আমাদের প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত করে, আমরা কষ্ট করে টিকে থাকি, খড়কুটো আগলে ধরে আবার জেগে উঠি। শেষ মুহূর্ত-এ মুমূর্ষু কন্ঠে আমরা বলে যাই, আমরা হারিয়ে যাই নি, এইতো বেশ আছি এখনো।

২রা জুলাই, ২০১২
------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১৮/৩৬৫

Sunday, July 1, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি - ১৭

মাঝে মাঝে স্বপ্নগুলো খুব সহজে পেয়ে গেলে ভড়কে যাই , আজ সারাদিন ধরে খুব বেশি রকম ভড়কে আছি । বহুদিন ধরে ভাব্চ্ছিলাম স্টেভ জাকব তার স্বপ্ন দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন আমাদের জন্যে , সেটি একদিন পূরণ করব আমার স্বপ্ন হিসেবে , অবশেষে আমার খুব প্রিয় বন্ধুর জন্যে আমার স্বপ্নটা হাতে চলে এলো । দোস্ত , তোকে দিলাম অনেক কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসা ।


১লা জুলাই, ২০১২
------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১৭/৩৬৫