আমার একান্ত কিছু শব্দের মানুষগুলো

আমার একান্ত কিছু অনুভূতি আমার কলমের সাথে ভাব জমায় আমি তাদের সাথে পথ পাড়ি দেই একাকী

Monday, November 5, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি - ১১৯ (মাকে নিয়ে ভাবনাগুলো)

আমরা বাড়ীর বাইরে গেলে শুরু হয় মা'র অস্থিরতা। 

একটা সময় অস্থির মা কিছুতে নিজেকে সামলাতে না পেরে পরবর্তীতৈ শুরু হয় মা'র ফোন করা,‍" বাবা! খেয়েছিস? ঘুমিয়েছিস? রাত জাগিস না বেশী। বাইরের পানি খাবি না, পেট খারাপ করবে, জন্ডিস হবে। ফিরবি কবে? বেশী রাত্রি বাইরে থাকিস 

না?"। এই প্রশ্নগুলো আমার কাছে প্রতিদিনে রুটিনের মতন আর মা'র কাছে এইটা নিত্য নতুন একটা ব্যাপার। অবশ্য প্রতিটি মা'র তাঁর সন্তানের কাছে এমনটি করে থাকেন। মা বলে কথা।

প্রতিটি সন্তানের কাছে মা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তি। তবে অনেক ক্ষেত্রে পরিবেশ, পরিস্থিতি, দুঘর্টনা এসব ক্ষেত্রে পিতা, ভাই, বোন, স্বামী কিংবা স্ত্রী, আত্মীয়, আত্মীয়া, সেই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। তবে মা তো মা। যার কোন বিকল্প নেই।

ছোটবেলা থেকে আমি বড্ড বেশী মা ঘেষা। জীবনের প্রথম হাতের লেখার হাতে খড়ি আমার মার হাত ধরে। আমাকে প্রথম স্কুল ভর্তি পরীক্ষাতে মা নিয়ে গিয়েছিলেন, পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত মা'র সেকি অস্থিরতা, কি লিখছি না লিখছি। মার হাত ধরে প্রথম স্কুলে যাওয়া, আমি খুব ভীতিপ্রবন ছিলাম বলে প্লে গ্রুপের স্কুলের কয়েকটা দিন মা'র আঁচল ধরে ক্লাস করেছিলাম।

গলায় একবার কই মাছের কাঁটা ফুটেছিল মা তখন ভাতের গোল্লা বানিয়ে মুখে পুরে দিল আমার গলা থেকে কাঁটা নেমে গেল। আমি সেই যে কই মাছ খাওয়া বন্ধ করেছি, আজও সাহস পাই না।

বাবা আমার জন্যে বিদেশে থেকে সাদা কেডস নিয়ে এসেছিলেন এবং আমি সেটা তখন পরে দৌড় দিতে গিয়ে পড়ে গিয়ে আমার সম্মুখের দুটো দাঁত ভেঙ্গে গিয়েছিল। বাবা-মা আমাকে ধরে ডাক্তার কাকুর কাছে নিয়ে গিয়েছিল। আইসক্রিম খেতে খেতে বাড়ী ফিরলাম ফোকলা হাসি নিয়ে। দীদা আমাকে বলেছিল, দাঁত দু'টো নিয়ে ইদুরের গর্তে ফেলতে তাহলে নাকি আমার অনেক বড় দাঁত গজাবে। আমি মহানন্দে সেই কাজটা সেরেছিলাম। অনেক দিন ফোকলা হাসি নিয়ে দিন কাটিয়েছি এবং এক সময় আমার বড় দাঁত গজালো।

সন্ধ্যার আযানের পর টেবিলে পড়তে বসে যেতাম। মা ছিলেন আমার শিক্ষক। আমার পড়াশুনার সময় টিভি চলত না। আমার মা সে সময় কাউকে টিভি দেখতে দিতেন না। আজ অনুভব করি টিভির জন্যে আজকাল বাচ্চারা মন দিয়ে পড়তে পারে না, আবার কেউ ইচ্ছা করেই পড়তে চায় না। সারাটা সন্ধ্যা পড়া শেষে রাত নয়টা নাইট রাইডার, স্ট্রীট হক, ম্যানামেল, ম্যাকগাইভার দেখতাম। তারপর ঠিক দশটায় ডিনার সেরে ফেলতাম। তারপর এক গ্লাস দুধ খেয়ে ঘুম।

আমার আজকের আমি একলা চলা বড় হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার মা'র ।আজ আমার হ্জ্জ্ব করতে যাচ্ছেন, কোন সময় আমাকে ছাড়া কোনদিন মাকে একা কোথাও যেতে দেখি নি। মা আজ পুরো খুশী মনে হজ্জ্বে যাচ্ছেন। কেননা তার একটা লালিত স্বপ্ন পূরন হতে যাচ্ছে। আজ ভীষন টেনশন অনুভব করছি। আজ আমি খুব গভীরভাবে অনুভব করছি, মা কেন আমাদের নিয়ে এত দুশ্চিন্তা করেন। এতদিনের মার অস্থিরতা আজ আমার ভিতর প্রশমিত হয়েছে। আমি আজকে মার হয়ে অস্থির হচ্ছি ভীষনরকম।

১০ ই অক্টোবর,২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১১৯/৩৬৫

No comments: