আমার একান্ত কিছু শব্দের মানুষগুলো

আমার একান্ত কিছু অনুভূতি আমার কলমের সাথে ভাব জমায় আমি তাদের সাথে পথ পাড়ি দেই একাকী

Tuesday, September 4, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি - ৭৫

ইউটিউবের কল্যানে আজ অনেক পুরানো বাংলা গান, নাটক এবং সিনেমা দেখতে পারি। অসংখ্য বিদেশী চ্যানেলগুলোর ভিড়ে দেশী চ্যানেলগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। দোষ আমাদের, আমরা খুব বেশী বেশী বিদেশী সংস্কৃতিতে আকৃষ্ট । অথচ আমাদের দেশে ভালো নাটক হচ্ছে, গান হচ্ছে, সিনেমা হচ্ছে। আ
মরা দেখছি না। হয়ত সময় পাচ্ছি না দেখার। আমি টিভি দেখার সময় কম পাই বলে, ইউটিউবে বেশীরভাগ অনুষ্ঠান দেখার চেষ্টা করি।

গতকাল হাসির কোন নাটক খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ একটা নামে আমার চোখ আটকে গেল, "কমন জেন্ডার"। আমার কাছে নাটকের শিরোনাম খুব হাস্যকর মনে হয়েছিল বিধায় পুরো নাটক সময় নিয়ে দেখলাম। নাটকটি মূলত লেখা হয়েছে হিজড়াদের জীবন কাহিনী নিয়ে। শৈশবের একটা বড় অংশ পার করেছি গোপিবাগে। আমাদের আশেপাশে অনেক হিন্দু পরিবার বসবাস করত। ওদের বাড়ীতে প্রায়ই অনুষ্ঠানগুলোতে হিজড়ারা নাচত। আমরা ছোট ছিলাম বলে সে সব নাচ দেখার অনুমতি পেতাম না। তখন ঠিক বুঝতে পারতাম না কেন দেখতে দেওয়া হবে না । আমাদের নিষেধ করা হয়েছিল বলে স্বাভাবিকভাবে আমাদের কৌতুহল অনেক বেশী ছিল। তাই আমরা মাঝে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম, আমি মনে আছে ওরা খুব অদ্ভূতভাবে নাচত, ওদের কখনো আঁচল থাকত না, আশেপাশের সব দর্শকরা ওদের তালি দিয়ে উৎসাহ যোগাত। আমরা নিজেরাই লজ্জা পেয়ে চলে আসতাম। সেই থেকে হিজড়া সম্পর্কে খুব একটা ভালো কিছু ধারনা আমাদের নেই। আমাদের সমাজের কাছে হিজড়া মানে অসভ্য বেহায়া চাঁদাবাজ। আমাদের অনেক বন্ধু আছে যাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ওরা প্রায়ই হানা দিত। আমার বন্ধুরা ওদের নিয়ে খুব আতঙ্কে থাকত। আমি প্রায়ই মগবাজারের সিগন্যালে হিজড়াদের অপেক্ষা করতে দেখি। ওরা প্রায়ই গাড়ীর যাত্রীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে।

আমি 'কমন জেন্ডার' নাটকটি দেখে হিজড়া সম্পর্কে কিছু ধারনা পেলাম যা সত্যি আগে কখনো ভেবে দেখি নি। মোটামোটি খুব সহজ একটা সমীকরন পেয়ে গেলাম এই সম্পর্কে । একটা মা একটা বাচ্চাকে নয় মাস গর্ভে রেখে প্রচন্ড প্রসব বেদনা শেষে জন্ম দিল। বাবা গর্বিত , সমাজ গর্বিত একটা পুত্র সন্তানের জন্ম হয়েছে । অতঃপর মিষ্টি বিলানো। ছেলেটা সব সাধারন বাচ্চার মতন বড় হতে থাকে। অতঃপর বয়স চার পাচেক পরে মা বাবা যখন তাকে বাইরের ছেলেদের সাথে খেলতে পাঠায় তখন সে যেতে চায় না, লজ্জা পায়, ভয় পায়। সে তখন বাসা বারান্দার কোনাতে বসে পুতুল নিয়ে খেলতে বসে। তার কখনো গাড়ী নিয়ে খেলতে ভালো লাগে না, প্লেন নিয়ে উড়তে ইচ্ছে করে না। একটু বড় হওয়ার সাথে সাথে মায়ের নেইলপলিস, লিপস্টিক, কাজলের প্রতি তীব্র আকর্ষন বাড়ে। মায়ের চোখে ছেলে-মেয়ে সমান বলে এ নিয়ে মা কখনো গা করেন না। শুধু বাবার বিরক্ত বাড়ে। বাবা মাঝে মাঝে বকাঝোকা করেন। ছেলেটা তখন ফুঁপিয়ে কাঁদে, এক সময় ছেলেটি বড় হয়, সে অনুভব করে সে অন্য কোন মানুষ, শারীরিকভাবে সে পুরুষ হলেও মনটা মেয়েদের মতন হয়ে বেড়ে উঠছে। তার অন্য পুরুষের প্রতি আকর্ষনবোধ করে কিন্তু মেয়েদেরকে দেখলে অহংকার হয়। বন্ধু ভাবতে পারে না। কৈশোরে পা রেখে মেয়েদের কাপড়, কসমেটিকসের প্রতি তীব্র ঝোঁক জন্মায়। সমাজ তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে, ফিসফিস করে। অপমানে তাই বাবা-ভাই তাকে সহ্য করতে পারে না। একসময় অল্প বয়সে তাকে বাড়ী থেকে মারতে মারতে বের করে দেয় । শুধু মা তাকে ভালবেসে নিরবে চোখের পানি ফেলে আর বারান্দা দিয়ে দেখে তার ছেলে মিলিয়ে যাওয়ার করুন দৃশ্য। ছেলেটা ফিরে তাকাতে সাহস পায় না আবার মার খাবে বলে। এ সমাজ তাকে থুতু দেয়। একসময় তাকে খুঁজে পায় এক বয়স্ক পুরুষ হিজড়া সবাই তাকে খালা ডাকে। সেই একসময় তাকে আশ্রয় দেয়, খাবার দেয়। সেই ছেলেটি সেই খালাকে ভালবেসে বড় হতে থাকে। সেই কোথাও চাকরী পায় না, সম্মান পায় না। তখন চুরি করতে শিখে, লুট করতে শিখে, চাঁদাবাজী করে নিজেদের বেঁচে থাকার চাহিদায়। একসময় তারা মরে যায় ।
আমাদের সরকার তাদেরকে নিয়ে কোন পুর্নবাসন চিন্তা করে না বলে এরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে বিদেশী এনজিওগুলো তাদের নিয়ে নতুন নতুন প্রজেক্ট করে, অল্প স্বল্প ভালো থাকে তখন। কখনো সখনো ধনী দেশগুলো তাদেরকে উভয়ই লিঙ্গ দাবী করে আন্দোলন করে। কিন্তু শেষমেষ তারা আমাদের সমাজের লাঠি পেটা খেয়ে পোকা মাকড়ের মতন পিষ্ট হয়ে মারা পড়ে।

২৭ই আগষ্ট, ২০১২
-------------------------------------------------------------------------------



লেখালেখি ৩৬৫ প্রজক্টে ৭৫/৩৬৫

পুরাতন লেখালেখিগুলো http://ayonahmed.blogspot.com/

No comments: