আমার একান্ত কিছু শব্দের মানুষগুলো

আমার একান্ত কিছু অনুভূতি আমার কলমের সাথে ভাব জমায় আমি তাদের সাথে পথ পাড়ি দেই একাকী

Monday, November 5, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি - ১২২


জাফর ইকবালের একটা লেখা পড়েছিলাম, যুক্তরাষ্ট্রের একটা ল্যাবে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে দেখা গেছে যে ঘটনার স্মৃতি মনে রাখার ক্ষমতা সবচেয়ে কম গোল্ড ফিসের। এই প্রসংগে আমার মনে পড়ে গেল। আমরা মানুষগুলোর কথা। আমাদের অনেক কিছুই মনে নাই। অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনা আমাদের কোন কিছুই আজকাল মনে থাকে না।

আমি 
ফাইন্যান্সের ছাত্র ছিলাম বলে অর্থনৈতিক বিষয়গুলোকে আজও একটু আধটু ঘাটাঘাটি করা হয়। তাছাড়া প্রিয় বিষয় ছিল একাউন্টিং। ছোটবেলা থেকে যোগ-বিয়োগের খেলা খেলতে এই কর্মাস বিষয়ের প্রতি একটা অনুরক্ত চলে আসে। যা এখনও বিদ্যমান। আজ সেইরকম পুরানো স্মৃতি প্রসংগে আমার মনে পড়ে গেল। প্রতিদিন কাগজ পড়ে, টিভি দেখে মোটামোটি একটা ধারনা করা যায় আমাদের দেশের চলমান অর্থনৈতিক অবস্থা।

আমাদের দেশের মানুষের জৈবিক সমস্যাগুলো এতই প্রকট যে, তাদের মাথায় অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো খুব একটা গায়ে লাগে না। অর্থনৈতিক অবস্থা অনুসারে আমরা বিগত বছরগুলো কথা একবার মনে করার চেষ্টা করি, আমাদের প্রথম ধাক্কা শুরু হল ৯৬ সালে শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারী তাতে কোথা থেকে কে এক ভারতীয় ব্যবসায়ী এসে সব টাকা নিয়ে চলে গেল। মানি লন্ডারী আইনে থাকা সত্ত্বে তখনকার সরকার কিছু করতে পারলো না। এ নিয়ে ব্যাপক সোরগোল তুললো সদ্য জেগে উঠা মিডিয়া। বাংলাদেশ ব্যাংক, স্টক একচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে তদন্ত কমিটি করলো। মামলা করার উৎস পেল না। পথে বসলো জমি-জমা বেচা, ধার করে আনা টাকার আমানতকারী সাধারন মানুষ। হিসাব-নিকাশের কঠিন মারপ্যাচে পড়ে কেউ হল নিঃস্ব, কেউ আত্মহত্যা করলো, কেউ রাতারাতি পেশীওয়ালা বিত্তশালী।

ধীরে ধীরে চলতে লাগলো আমজনতা আস্তে আস্তে সব ভুলে গেল। তারপর শুরু সমবায় কালচার। অমুক সময়বায় সমিতিতে অমুক টাকা বিনিয়োগ করলে বছরখানেক পরে বিনিয়োগের অর্থ ডবল হয়ে যাবে। সেই হিসাবে কিছু না করে ৮% অতিরিক্ত টাকা কামানো যাবে এই সব ছেলেভুলানো কথায় সবাই আসক্ত হল। কেউ একবার ভাবলো না যে, এক লাখ টাকা যে দুই লাখ হবে সেই নিশ্চয়তা কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক স্বীকৃতি দেয় নি। নির্দিষ্ট এই আপনার অর্থ দাবী করবেন কার কাছে? কেননা, ক'দিন বাদেই বাংলাদেশ ব্যাংক সমবায় ব্যাংকের বিরূদ্ধে মামলা করে দিল এবং অতঃপর সবার টাকা আটকে গেল। দুই দিন পর সেই ব্যাংকগুলো দেউলিয়া ঘোষিত হল। রেহাই পেয়ে গেল যারা এই সমবায় ব্যাংকের উদোক্তা ছিল। মাঝখান দিয়ে শেয়ার ব্যবসার মতন ফেঁসে গেল ডবল স্বপ্নে বিভোর সাধারন আমজনতা। মামলা দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ধরে চলতে লাগলো আমজনতা আবার ভুলে গেল পাওনা টাকার কথা।

অতঃপর আসলো ইউনিপে নামক আরেকটি সমবায় কল্যাণমূলক সংস্থা। তাদের দাবী ছিল একটি নির্দিষ্ট টাকার বিপরীতে স্বর্ণ জমার নিশ্চয়তা। স্বর্ণের পরিমান দেখানো হল বাজারের স্বাভাবিক দরের থেকে অনেক কম। সবাই তখন উৎসাহিত হল অল্প টাকা বেশী সোনা পাওয়া যাবে। সবাই তখন টাকা ঢালা শুরু করলো। আবার, হুলস্থুল,আমজনতা ও মিডিয়ার হাউকাউ, বাংলাদেশ ব্যাংক আবার ঘুম থেকে উঠলো। আবার মামলা। আবার, সেই পুরানো প্যাঁচে আমানতকারীরা।

আবার শুরু হল, শেয়ারের অনেক টাকার স্বপ্ন। আমজনতা বিত্তশীল হওয়ার স্বপ্ন দেখতে লাগলো। ছাত্র,শিক্ষক,কর্মকতা,বালক,বালিকা সবাই বড়লোক হবার স্বপ্নে বিভোর। অনেকে একদিনের শেয়ার মূল্যের টাকা দিয়ে স্বপ্ন স্বপ্ন খেলায় বাড়ী-গাড়ী কিনে ফেললো। তারপর শুরু হলো উত্থান-পতন। হঠাৎ একদিন লাখ টাকার স্বপ্নের শেয়ার হয়ে গেল মূল্যহীন কাগজ। সরকার কোন কিনারা না করতে পেরে সরাসরি বিনিয়োগকারীদের দোষারোপ করতে লাগলো। তাদেরকে ফাটকাবাজ বলে গালিও দিয়ে দিল। তবে আশার কথা এইবার কিন্তু মামলা দেওয়া হয় নি। কারন সরকার আয়নাতে চেহারা দেখে নিজেই বিব্রত। অতঃপর দোষীদের টিকিও কেউ ধরতে পারলো না এবং আমজনতা আবার ভুলতে শুরু করলো ঠিক সেরকম গোল্ড ফিসের মতন।

১৩ ই অক্টোবর,২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১২২/৩৬৫

(বিলম্বে আপলোডের জন্যে দুঃখিত)

No comments: