আমার একান্ত কিছু শব্দের মানুষগুলো

আমার একান্ত কিছু অনুভূতি আমার কলমের সাথে ভাব জমায় আমি তাদের সাথে পথ পাড়ি দেই একাকী

Monday, November 5, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি - ১২২


জাফর ইকবালের একটা লেখা পড়েছিলাম, যুক্তরাষ্ট্রের একটা ল্যাবে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে দেখা গেছে যে ঘটনার স্মৃতি মনে রাখার ক্ষমতা সবচেয়ে কম গোল্ড ফিসের। এই প্রসংগে আমার মনে পড়ে গেল। আমরা মানুষগুলোর কথা। আমাদের অনেক কিছুই মনে নাই। অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনা আমাদের কোন কিছুই আজকাল মনে থাকে না।

আমি 
ফাইন্যান্সের ছাত্র ছিলাম বলে অর্থনৈতিক বিষয়গুলোকে আজও একটু আধটু ঘাটাঘাটি করা হয়। তাছাড়া প্রিয় বিষয় ছিল একাউন্টিং। ছোটবেলা থেকে যোগ-বিয়োগের খেলা খেলতে এই কর্মাস বিষয়ের প্রতি একটা অনুরক্ত চলে আসে। যা এখনও বিদ্যমান। আজ সেইরকম পুরানো স্মৃতি প্রসংগে আমার মনে পড়ে গেল। প্রতিদিন কাগজ পড়ে, টিভি দেখে মোটামোটি একটা ধারনা করা যায় আমাদের দেশের চলমান অর্থনৈতিক অবস্থা।

আমাদের দেশের মানুষের জৈবিক সমস্যাগুলো এতই প্রকট যে, তাদের মাথায় অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো খুব একটা গায়ে লাগে না। অর্থনৈতিক অবস্থা অনুসারে আমরা বিগত বছরগুলো কথা একবার মনে করার চেষ্টা করি, আমাদের প্রথম ধাক্কা শুরু হল ৯৬ সালে শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারী তাতে কোথা থেকে কে এক ভারতীয় ব্যবসায়ী এসে সব টাকা নিয়ে চলে গেল। মানি লন্ডারী আইনে থাকা সত্ত্বে তখনকার সরকার কিছু করতে পারলো না। এ নিয়ে ব্যাপক সোরগোল তুললো সদ্য জেগে উঠা মিডিয়া। বাংলাদেশ ব্যাংক, স্টক একচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে তদন্ত কমিটি করলো। মামলা করার উৎস পেল না। পথে বসলো জমি-জমা বেচা, ধার করে আনা টাকার আমানতকারী সাধারন মানুষ। হিসাব-নিকাশের কঠিন মারপ্যাচে পড়ে কেউ হল নিঃস্ব, কেউ আত্মহত্যা করলো, কেউ রাতারাতি পেশীওয়ালা বিত্তশালী।

ধীরে ধীরে চলতে লাগলো আমজনতা আস্তে আস্তে সব ভুলে গেল। তারপর শুরু সমবায় কালচার। অমুক সময়বায় সমিতিতে অমুক টাকা বিনিয়োগ করলে বছরখানেক পরে বিনিয়োগের অর্থ ডবল হয়ে যাবে। সেই হিসাবে কিছু না করে ৮% অতিরিক্ত টাকা কামানো যাবে এই সব ছেলেভুলানো কথায় সবাই আসক্ত হল। কেউ একবার ভাবলো না যে, এক লাখ টাকা যে দুই লাখ হবে সেই নিশ্চয়তা কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক স্বীকৃতি দেয় নি। নির্দিষ্ট এই আপনার অর্থ দাবী করবেন কার কাছে? কেননা, ক'দিন বাদেই বাংলাদেশ ব্যাংক সমবায় ব্যাংকের বিরূদ্ধে মামলা করে দিল এবং অতঃপর সবার টাকা আটকে গেল। দুই দিন পর সেই ব্যাংকগুলো দেউলিয়া ঘোষিত হল। রেহাই পেয়ে গেল যারা এই সমবায় ব্যাংকের উদোক্তা ছিল। মাঝখান দিয়ে শেয়ার ব্যবসার মতন ফেঁসে গেল ডবল স্বপ্নে বিভোর সাধারন আমজনতা। মামলা দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ধরে চলতে লাগলো আমজনতা আবার ভুলে গেল পাওনা টাকার কথা।

অতঃপর আসলো ইউনিপে নামক আরেকটি সমবায় কল্যাণমূলক সংস্থা। তাদের দাবী ছিল একটি নির্দিষ্ট টাকার বিপরীতে স্বর্ণ জমার নিশ্চয়তা। স্বর্ণের পরিমান দেখানো হল বাজারের স্বাভাবিক দরের থেকে অনেক কম। সবাই তখন উৎসাহিত হল অল্প টাকা বেশী সোনা পাওয়া যাবে। সবাই তখন টাকা ঢালা শুরু করলো। আবার, হুলস্থুল,আমজনতা ও মিডিয়ার হাউকাউ, বাংলাদেশ ব্যাংক আবার ঘুম থেকে উঠলো। আবার মামলা। আবার, সেই পুরানো প্যাঁচে আমানতকারীরা।

আবার শুরু হল, শেয়ারের অনেক টাকার স্বপ্ন। আমজনতা বিত্তশীল হওয়ার স্বপ্ন দেখতে লাগলো। ছাত্র,শিক্ষক,কর্মকতা,বালক,বালিকা সবাই বড়লোক হবার স্বপ্নে বিভোর। অনেকে একদিনের শেয়ার মূল্যের টাকা দিয়ে স্বপ্ন স্বপ্ন খেলায় বাড়ী-গাড়ী কিনে ফেললো। তারপর শুরু হলো উত্থান-পতন। হঠাৎ একদিন লাখ টাকার স্বপ্নের শেয়ার হয়ে গেল মূল্যহীন কাগজ। সরকার কোন কিনারা না করতে পেরে সরাসরি বিনিয়োগকারীদের দোষারোপ করতে লাগলো। তাদেরকে ফাটকাবাজ বলে গালিও দিয়ে দিল। তবে আশার কথা এইবার কিন্তু মামলা দেওয়া হয় নি। কারন সরকার আয়নাতে চেহারা দেখে নিজেই বিব্রত। অতঃপর দোষীদের টিকিও কেউ ধরতে পারলো না এবং আমজনতা আবার ভুলতে শুরু করলো ঠিক সেরকম গোল্ড ফিসের মতন।

১৩ ই অক্টোবর,২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১২২/৩৬৫

(বিলম্বে আপলোডের জন্যে দুঃখিত)

অ আ আজকের লেখালেখি - ১২১

আমাদের সাধারন মানুষের জীবন যে মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছে, তা আবার প্রমান হয়ে গেল. গতকালের নামহীন ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া হাতি
য়া ও ভোলা অঞ্চল । আমাদের আবহাওয়াবিদদের নাক তেল দিয়ে নিদ্রাযাপনের জন্যে নিমেষে হারিয়ে গেল ২৩টা মানুষের জীবন। আরো হাজার খানেক মানুষ নিখোঁজ। যারা নিহত, আহত, হারিয়ে যাওয়া মানুষ এরা তেমন কোটিপটি নন, তারা সবাই নিরীহ কর্মঠ জেলে তাই তাদের কোন খবর কোন কাগজের শিরোনাম হয় নি। চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে এই প্রবাদ বাক্যকে মাথায় রেখে অপেক্ষা করছেন, প্রধান মন্ত্রী, ত্রাণ মন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী আরো অনেকেই। তারা এখন ত্রাণ দশ টাকার মুড়ি বিলানোর হিসাব কষছেন। অথচ ক্ষয়ক্ষতির পরিমান যে কত ভয়াবহ ! তা ইচ্ছা করেই সরকারের কথা মতন চলা শাক দিয়ে মাছ ঢেকে রাখার মতন করে মিডিয়া সুন্দর মতন নাটক রচনায় ব্যস্ত। তারা আছে সাগর রুনির বিচার নিয়ে সোরগোলে ব্যস্ত। আরো কত এরকম নাম না জানা সাগর-রুনি আছে সে খবর কি তাদের কান অব্দি পৌঁছায় ? এখনও পর্যন্ত নামহীন ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা নিরূপন করা যায় নি সরকারের নিরবুদ্ধিতার সরকারের ভাবখানা গা ছাড়া জন্যে অথচ চারদিক থেকে মানুষ মরে যাওয়া খবর পাওয়া যাচ্ছে, ভেসে আসছে মানুষের লাশ, অনেকে চরে বসে আছে হারিয়ে যাওয়া মানুষটা যদি জীবিত কিংবা লাশ হয়ে ফিরে আসে। এমন ভয়াবহ ঘূণিঝড়েরর বিপরীতে তিন নম্বর বিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছিল অথচ ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা ছিল আট মহাবিপদ সংকেতের কাছাকাছি। যা সত্যি দুঃখজনক। এত কম বিপদ সংকেতের কারনে অনেক জেলে উপকূল কাছাকাছি থাকে নি। যার জন্যে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আর ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে গেছে কে যে কোথায় কেউ জানে না। এরজন্যে দায় স্বীকার সরকার কোনদিন করবে না। কেননা আমাদের মত ছাপোষা মানুষগুলোর জীবনের মূল্য আজ অতি তুচ্ছ।


http://new.ittefaq.com.bd/news/view/155153/2012-10-12/1


১২ ই অক্টোবর,২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১২১/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি - ১২০ (অন্যরকম দিনগুলি)

অন্যরকম দিনগুলি
-------------------------------------------
আজ রাত অব্দি
চোখের জলে হিসেব করি 
পুরানো দিনগুলোর
কিছু অশ্রু থাকে কিছু সুখ স্মৃতির 
কিছু থাকে জমাট বাঁধা দুঃখ বেদনায়

আমাদের সবার একান্ত কিছু দুঃখ থাকে
তবুও আমরা পিছুপা হই নি।
কালো মেঘের ঢাকা অনিশ্চিত সময়গুলোতে
আমাদের আগলে রাখে আমাদের প্রিয়মুখগুলি
মা-বাবা, প্রিয়তমা স্ত্রী,
কখনোবা ভাইবোন,
কিছু প্রিয় বন্ধু সহপাঠী ।
আমাদেরকে কেন্দ্রভূত করে সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে
আর্শীবাদ, ভালোবাসা নিয়ে বৃত্তময়।
সামনের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণায়
আমরা আজ থেকে শুরু করি
নতুন ভালো একটা বছরের পথযাত্রা
প্রতীক্ষায় থাকি অন্যরকম দিনগুলির।

১১ ই অক্টোবর,২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১২০/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি - ১১৯ (মাকে নিয়ে ভাবনাগুলো)

আমরা বাড়ীর বাইরে গেলে শুরু হয় মা'র অস্থিরতা। 

একটা সময় অস্থির মা কিছুতে নিজেকে সামলাতে না পেরে পরবর্তীতৈ শুরু হয় মা'র ফোন করা,‍" বাবা! খেয়েছিস? ঘুমিয়েছিস? রাত জাগিস না বেশী। বাইরের পানি খাবি না, পেট খারাপ করবে, জন্ডিস হবে। ফিরবি কবে? বেশী রাত্রি বাইরে থাকিস 

না?"। এই প্রশ্নগুলো আমার কাছে প্রতিদিনে রুটিনের মতন আর মা'র কাছে এইটা নিত্য নতুন একটা ব্যাপার। অবশ্য প্রতিটি মা'র তাঁর সন্তানের কাছে এমনটি করে থাকেন। মা বলে কথা।

প্রতিটি সন্তানের কাছে মা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তি। তবে অনেক ক্ষেত্রে পরিবেশ, পরিস্থিতি, দুঘর্টনা এসব ক্ষেত্রে পিতা, ভাই, বোন, স্বামী কিংবা স্ত্রী, আত্মীয়, আত্মীয়া, সেই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। তবে মা তো মা। যার কোন বিকল্প নেই।

ছোটবেলা থেকে আমি বড্ড বেশী মা ঘেষা। জীবনের প্রথম হাতের লেখার হাতে খড়ি আমার মার হাত ধরে। আমাকে প্রথম স্কুল ভর্তি পরীক্ষাতে মা নিয়ে গিয়েছিলেন, পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত মা'র সেকি অস্থিরতা, কি লিখছি না লিখছি। মার হাত ধরে প্রথম স্কুলে যাওয়া, আমি খুব ভীতিপ্রবন ছিলাম বলে প্লে গ্রুপের স্কুলের কয়েকটা দিন মা'র আঁচল ধরে ক্লাস করেছিলাম।

গলায় একবার কই মাছের কাঁটা ফুটেছিল মা তখন ভাতের গোল্লা বানিয়ে মুখে পুরে দিল আমার গলা থেকে কাঁটা নেমে গেল। আমি সেই যে কই মাছ খাওয়া বন্ধ করেছি, আজও সাহস পাই না।

বাবা আমার জন্যে বিদেশে থেকে সাদা কেডস নিয়ে এসেছিলেন এবং আমি সেটা তখন পরে দৌড় দিতে গিয়ে পড়ে গিয়ে আমার সম্মুখের দুটো দাঁত ভেঙ্গে গিয়েছিল। বাবা-মা আমাকে ধরে ডাক্তার কাকুর কাছে নিয়ে গিয়েছিল। আইসক্রিম খেতে খেতে বাড়ী ফিরলাম ফোকলা হাসি নিয়ে। দীদা আমাকে বলেছিল, দাঁত দু'টো নিয়ে ইদুরের গর্তে ফেলতে তাহলে নাকি আমার অনেক বড় দাঁত গজাবে। আমি মহানন্দে সেই কাজটা সেরেছিলাম। অনেক দিন ফোকলা হাসি নিয়ে দিন কাটিয়েছি এবং এক সময় আমার বড় দাঁত গজালো।

সন্ধ্যার আযানের পর টেবিলে পড়তে বসে যেতাম। মা ছিলেন আমার শিক্ষক। আমার পড়াশুনার সময় টিভি চলত না। আমার মা সে সময় কাউকে টিভি দেখতে দিতেন না। আজ অনুভব করি টিভির জন্যে আজকাল বাচ্চারা মন দিয়ে পড়তে পারে না, আবার কেউ ইচ্ছা করেই পড়তে চায় না। সারাটা সন্ধ্যা পড়া শেষে রাত নয়টা নাইট রাইডার, স্ট্রীট হক, ম্যানামেল, ম্যাকগাইভার দেখতাম। তারপর ঠিক দশটায় ডিনার সেরে ফেলতাম। তারপর এক গ্লাস দুধ খেয়ে ঘুম।

আমার আজকের আমি একলা চলা বড় হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার মা'র ।আজ আমার হ্জ্জ্ব করতে যাচ্ছেন, কোন সময় আমাকে ছাড়া কোনদিন মাকে একা কোথাও যেতে দেখি নি। মা আজ পুরো খুশী মনে হজ্জ্বে যাচ্ছেন। কেননা তার একটা লালিত স্বপ্ন পূরন হতে যাচ্ছে। আজ ভীষন টেনশন অনুভব করছি। আজ আমি খুব গভীরভাবে অনুভব করছি, মা কেন আমাদের নিয়ে এত দুশ্চিন্তা করেন। এতদিনের মার অস্থিরতা আজ আমার ভিতর প্রশমিত হয়েছে। আমি আজকে মার হয়ে অস্থির হচ্ছি ভীষনরকম।

১০ ই অক্টোবর,২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১১৯/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি - ১১৮ (প্রতিদিন স্বপ্নে দেখি স্বপ্নলোকের মানুষগুলোকে)


প্রতিদিন স্বপ্নে দেখি স্বপ্নলোকের মানুষগুলোকে

জানালার গা ঘেষে আমার টেবিল, আর তাতে আমি প্রতিদিন ডায়রী লিখে যাই। জানালা দিয়ে তাকালে আমি খুঁেজ পাই নীল আকাশের বাদামী সুর্য আর ঝিরঝিরি বাতাস। কখনো সখনো অচেনা ফুলের গন্ধ আমার মনোযোগ নষ্ট করে। এ
রাই আমার ডায়রীর বাসিন্দা। কিন্তু আজ ডায়রী লিখছি ওদের ছাড়া।

অনেকদিন পর ভোর দেখলাম। এখন সকাল সাড়ে পাঁচটা বাজে । কিছুক্ষণ আগে মোয়াজ্জিন আযান দিল । অদ্ভুত ভালো লাগল ফজরের আযান শুনে । আমি সবগুলো আযান শুনি । কিন্তু সকালবেলাকার মতন এত চমৎকার নয়।
সকাল থেকে প্রচন্ড ক্ষিধা পেয়েছিল। আমি অনেকক্ষণ না খেয়ে বসে ছিলাম। আমার আশেপাশে অনেকগুলো মানুষ ঘোরাফেরা করছিল কিন্তু কেউ টের পায় নি। আসলে আমি এরকমই, প্রচন্ড কষ্ট হলেও চেপে যাই। আমার এই চেপে যাওয়া অভ্যাস নাকি আমি জন্মের থেকে পেয়েছি এ কথা আমার নানু বলতেন।

একবার আমি লুকোচুরি খেলতে গিয়ে পায়ে পেরেক ফুটল, আমার পা পুরো লাল হয়ে গিয়েছিল। আমি এটুকু ভয় পাই নি , শুধু চেপে গিয়েছিলাম মা বকবে বলে। তখন আমার বয়স কতই ছিল দশ বারো।

আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি। অংকে ভীষণ দূর্বল ছিলাম যে, প্রাইভেট পড়তে যেতাম। আর সেখানে পরিচয় হল একটি মেয়ের সাথে। সেই মেয়েটাকে একদিন না দেখলে ভালো লাগত না। আমি জানি না এর অর্থ কি ,“ভালোবাসা”!!! আমি ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা বলেছিল তুই প্রেমে পড়েছিস। আসলে ঐটুকু বয়সে ভালোবাসার সংজ্ঞা আমার কাছে ছিল রহস্যময়ী এবং অস্পষ্ট। সেই মেয়েটাকে কোনদিন বলতে পারি নি এই সত্য কথাটা, এর জন্যে বোধহয় দায়ী আমার চেপে যাওয়া স্বভাবটা। চাপতে চাপতে ইন্টারমিডিয়েট পার করে ফেললাম। একদিন সে চলে গেল সানাইয়ের সুরে। আমি হাসতে হাসতে তাঁর বিয়েতে গিয়েছিলাম । ওকে বিয়ের বাড়ীতে নিয়ে গিয়েছিলাম আমি এবং ঐ গাড়ীটা চালিয়েছিলাম আমি। এই সময় আমার অদ্ভুত একটা কষ্ট হল ওকে লাল বউ হতে দেখে। আমি যখন সেই গাড়ীটি স্টিয়ারিং ধরেছিলাম তখন আমি সামনে শুধু সেই স্মৃতিগুলো জীবিত হতে দেখলাম, সেই প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার দিনগুলো। আমি প্রচন্ড ঘোরের ছিলাম সারাটিক্ষণ। আমি পেলাম প্রথমবারের মতন প্রচন্ড যন্ত্রনা; ঠিক যেন আমার গায়ে অসংখ্য সূঁচ বিদ্ধ হচ্ছে।

একদিন হুট করে আমার প্রিয় নানু মারা গেলেন। আমি দ্বিতীয়বারের মতন প্রচন্ড কষ্ট পেলাম। এই কষ্টটা আমাকে ভালোমতন যন্ত্রনার সংজ্ঞা শিখিয়ে দিল। আমি অঝোর বৃষ্টির মতন কাঁদলাম। এই নানুই, একমাত্র আমার চেপে থাকার স্বভাবটা ধরতে পেরেছিলেন। আমার কলেজ ছিল নানুর বাসার কাছে। সেই সুবাদে নানুর বাসায় যেতাম । আমার চোখে মুখে যে প্রচন্ড ক্লান্তি, ক্ষুধা ছিল তা নানু খুব ভালো মতন বুঝতেন। আমার প্রিয় খাবারগুলো সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যেতাম।

আজকাল আমি মাঝে মাঝে নানুর কবরে যাই, আর মার ব্যাপারে নালিশ করি, কখনো সখনো নানুর সাথে একা একা কথা বলি। নানু শুধু শুনে যায়, কিছুই বলে না।

হঠাৎ জানালা দিয়ে দেখি আলো ঢুকছে। অথচ আমি ডায়রীতে এত বেশী মগ্ন ছিলাম যে , সেই কখন আকাশ ফর্সা হয়ে এল একদম টের পাই নি।

আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষগুলো ঐ দূর আকাশে। আর আমি আকাশের বুকে হাত বাড়িয়ে তাদের ডাকি প্রতিদিন। আর ঐ যে সুর্য আমাকে বলে,সবকিছু তো শেষ হয়ে যায় নি, আমার জন্যে আরো অনেকগুলো মানুষ স্বপ্ন দেখে, কষ্ট পায়, নতুন আশায় আশান্বিত হয় । আর আমিও উজ্জীবিত হয়ে নতুন সকালের মতন ভাঙ্গা ঘর গুছাই নতুন করে।

৯ই অক্টোবর,২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১১৮/৩৬৫

Monday, October 8, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি - ১১৭


ছোটবেলাকার খুব খেলাধূলা করতাম বলে এক মুহূর্তে এখানে ওখানে হেঁটে চলে যেতাম। তখন আমার অস্থিরতার কাছে কোন দূরত্ব প্রশয় পেত না। একসময় যখন হাপিয়ে যেতাম কোন এক দোকানে ঢুকে ২৫০ মিলি লিটারের ছোট কাঁচের বোতলের কোক খেয়ে আবার হাঁটা শুরু করে দিতাম। চার-পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে ফেলতাম। 

আজ সে জায়গাতে আধা কিলোমিটার হাঁটারও দুঃসাহস করি না। বয়সের কাছে আবেগ এখন আর প্রশয় পায় না, আজ সবকিছু কেমন যেন একটা বাঁধা চলে আসে, অনেকগুলো প্রতিবন্ধকতা কাজ করে, অন্ধকার রাস্তাগুলো মোটেও ভালো না, ছিনতাই হতে পারে, আইনকে আঙ্গুল দেখিয়ে যতত্রতভাবে যানবাহন গায়ে উপর উঠিয়ে দিতে পারে কিংবা ফুটপাথে হাঁটার জায়গাতো নেই। তবুও ছোটবেলাকার মতন যখন তখন সময় ইচ্ছে হলে উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটতে থাকে, তবে আজ বেশী দূর যেতে পারি না, একটু দূর গিয়ে ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নেই, তারপর বাড়ী ফিরে চলি। অথচ স্কুল জীবনে একগাদা বই কাঁধে নিয়ে হেঁটে হেঁটে বাড়ী ফিরতাম। 

আমাদের পুরানো বাড়ীটি ছিল আর.কে.মিশন রোডে। রোজ স্কুলে যেতাম রিকসা করে। তখন আমাদের বাড়ী থেকে মতিঝিল এজিবি কলোনীর ভিতরে আমার সেই মতিঝিল মডেল হাই স্কুলের কাছে রিকসা চলে যেত। তখন ভাড়া দশটাকা ছিল। আমি আমার বন্ধু ঘটু পাঁচ টাকা শেয়ার করে রিকসা ভাড়া দিতাম। আমি বাড়ী থেকে ২০ টাকা করে পেতাম। সে টাকাতে টিফিন করতাম। ক্লাস শুরু হত ঠিক দুপুর ১২:১৫ মিনিটে টানা ২:০০ মিনিট পর্যন্ত চলত তারপর আমাদের ২:৪৫ মিনিট পর্যন্ত টিফিন ব্রেক তারপর আবার ক্লাস চলত ৫.৩০ মিনিট পর্যন্ত। রোজ রোজ একই রুটিন শুধু বৃহস্পতিবারটা কোন টিফিন পিরিয়ড চলত না সেদিন ১২.৩০ থেকে ১:৩০ পর্যন্ত পিটি হত আমরা খুব বিরক্ত হয়ে পিটি করতাম. সেদিন আমাদের ৩.০০ পর্যন্ত ক্লাস হত, তারপর ছুটি। আমরা রোজ বাড়ী ফিরতাম পাঁচ বন্ধু মিলে, রায়হান, মামুন, ঘটু, জিয়া, মুনির। সেই স্কুলের পেছন দিকে স্টেশনের রাস্তা ধরে শুরু হতো পথচলা। তখন আমাদের কমলাপুরের গেইট দিয়ে ঢুকতে কোন টাকা লাগত না। আমরা সেই নারায়নগঞ্জ রুটের ট্রেনের রেল লাইন ধরে হাঁটা শুরু করতাম, তারপর সুইপার বস্তি পেরুতাম, তারপর গোপিবাগ বাজার রায়হান বা'দিকে মানিকনগর চলে যেত. আমরা বাকিরা সবাই ডানদিক দিয়ে চলে যেতাম। সবার বাসা কাছাকাছি থাকাতে একসাথেই ফিরতাম একই পথ ধরে। আমরা রাস্তাতে আজগুবি সব নামহীন আইসক্রীম, আচার, ঝালমুড়ি চানাচুর খেয়ে বাড়ী ফিরতাম। 

আহা দারুন সেই দিনগুলি, আজও প্রচন্ড মিস করি। ইচ্ছে করে সেই দিনগুলো যদি আবার ফিরে পেতাম।

৮ই অক্টোবর,২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১১৭/৩৬৫ 

পুরাতন লেখালেখিগুলো: http://ayonahmed.blogspot.com

অ আ আজকের লেখালেখি - ১১৬

নিউজপেপার এক নজরে খেয়াল করতে গিয়ে একটা খবর চোখে পড়লো, বাংলাদেশীরা বিশ্বের এগারোতম সুখী জনগন। এজন্য আমাদের নেতা-নেত্রীদের উচিত ঘরে ঘরে প্রতিটি সাধারন মানুষের পায়ে ধরে সালাম করে আর্শীবাদ নেওয়া।

আমরা অনেক দিন ধরে কেউ ভালো নেই। আমরা প্রতিটি মুহূর্তে শংকায় কাটছে কাল কি খাব, কি গায়ে দিব, কাল আমার 
সন্তানেরা কি খাবে। আমাদের করের টাকা দিয়ে আমাদেরকে অনাহারে রাখা হয়। আমাদের ভবিষ্যত আরো ঘন কালো হয়ে উঠে। আমরা তাও স্বপ্ন দেখি আগামী দিনের স্বপ্ন যেখানে আমাদের কেউ অনাহারে মরবে না, খালি গায়ে কেউ ঘুরবে না। আমরা অনেক অন্যায় সহ্য করি, আমরা অনেক কষ্ট করি আমাদের কখনোই ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙ্গে না। আমরা ঠিকই ডুবে ডুবে বেঁচে থাকি যুগ যুগ ধরে। যার জন্য আমাদেরকে সীকৃতি দেওয়া হয় বিশ্বের অন্যতম সেরা অসুখের দেশে সেরা সুখী মানুষ ।

৭ই অক্টোবর,২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১১৬/৩৬৫

(বিলম্বে আপলোডের জন্যে দু:খিত।)

অ আ আজকের লেখালেখি - ১১৫

গতকাল সারা রাত ঘুমুতে পারি নি। আজ চলে যাব প্রিয় সনতলাকে ছেড়ে। মনটা খুব খারাপ ছিল। তাই গত রাত্রি জেগে একাকী টিভি দেখলাম। আমার নিজের এলোমেলো করে রাখা ঘরগুলোকে গুছিয়ে রাখলাম। 

শেষ রাতের দিকে আপিনকে স্বপ্নে দেখলাম। আমাকে অভিযোগের সুরে বলছেন, "এতদিন পর তোর আসার সময় হল, কত কথা ছিল বলার, সেগুলোকে এ

কদিনে বলা যায়, তুই কেন এমন করিস রোজ রোজ আসতে পারিস না! তোর নানাভাই রোজ তোর কথা জিজ্ঞেস করে"। হঠাৎ কোন ফাঁকে ঘুম ভেঙ্গে গেল।

স্বপ্নদের খুব মিস করলাম। কতদিন পর প্রিয় মানুষের কথা শুনলাম। মনটাও খারাপ হয়ে গেল। তোমায় কথা দিচ্ছি নানু, পরেরবার আমি সব কথা শুনবো, যেমনটা আমি শেষ শুনেছিলাম সেই তোমার চলে যাওয়ার ৯৯'সালের শেষ দিনগুলোতে।

৬ই অক্টোবর,২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১১৫/৩৬৫

(বিলম্বে আপলোডের জন্যে দু:খিত।)

অ আ আজকের লেখালেখি - ১১৪

অনেক দিন পর আজ সবুজ গ্রামে। সকাল ৬টা বাজে। দারুন একটা ভোর। অনেকদিন এমন ভোর দেখি না। ঢাকা শহরে ক্লান্ত শান্ত সর্বস্বান্ত হয়ে রাতে ঘুমিয়ে যাই সেজন্য সকাল ৯টার আগে উঠতে পারি না। অথচ পাখির কোলাহলে অনেক দিন পর ভোর দেখলাম। আমি মনে করতে পারি না, শেষ কবে ঢাকাতে এমন পাখির কোলাহলে ভোরে উঠে গেছি। আমাদ
ের এই কংক্রিটের জঙ্গলে আজকাল পাখিরা ডাকতে ভয় পায়। সেজন্য আমাদের পাখির ডাকে ঘুম ভাঙ্গে না। আমাদের সনতলা গ্রামের প্রধান বৈশিষ্ট্য এই বুলবুলি আর শালিক পাখির বিরামহীন ডাকাডাকি। যখন পাখিরা বুঝতে পারলো আমার আলসেমি চলছে তখন টিনের চালে ডানা ঝাপটানোর শব্দ করে আবার জানান দিল,"ভোর হয়েছে"। আমি আলসেমি ছেড়ে উঠলাম। জানালা পর্দা খুলতে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়লো রোদ। আমি বিমোহিত। সকালের নাস্তা সেরে বেড়িয়ে পড়লাম। 


আমাদের এই গ্রামটা খুব বড় নয়। ঘন্টা চার পাঁচেক হেঁটে নিলে পুরো গ্রাম দেখা শেষ হয়ে যায়। তবে পুরোপুরি গ্রামটাকে উপভোগ করতে চার পাঁচদিন সময় লেগে যায়। এখানকার গ্রামবাসীর প্রধান জীবিকা হচ্ছে কৃষিকাজ, মৎসশিকার এবং অন্যান্য। করতোয়া নদী অববাহিকায় অবস্থিত। যাত্রী পরিবহনে প্রধান বাহন ভ্যান গাড়ী এবং নসিমন করিমন। সনতলা গ্রামবাসীরা খুবই অতিথিপরায়ন। তারা সারটিক্ষন গল্পগুজবে মাটিয়ে রাখে। সারাটা গ্রাম জুড়ে সবুজ মাঠ, স্কুল প্রাঙ্গন জুড়ে খেলার মাঠ। পাকা সড়ক। প্রতিটি একতলা টিনের বাড়ী।

নানীর পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিটি আমার নানী আমার দূর সম্পর্কে মামা নিকট দান করে দিয়েছিলেন। জীবদ্দোশায় আমার নানীর ইচ্ছাগুলো উনার ডায়রিতে লিখেছিলেন, তাতে উনি লিখেছিলেন, এখানে একটা ছোট কুটির থাকবে যার নাম হবে,‍‍"রৌদ্রছায়া"। নানী মারা যাওয়ার পর আমি উনার লেখালেখির খাতাগুলো আমার কাছে রেখে দিয়েছি। সেখান থেকে আমরা জানতে পারি তার ইচ্ছাগুলোর কথা। পরবর্তী আমার মা সেই মামার নিকট সেই জমিটি ক্রয় করেন এবং পরবর্তীতে সেখানে একটা ছোট বাড়ী বানানো হয়, যার নাম," রৌদ্রছায়া"। আমরা প্রচন্ড নানুকে আপিন ডাকতাম। বিলম্বিত হলেও উনার একটু দীর্ঘদিনের স্বপ্ন আমরা পূরণ করে খুবই আনন্দিত ছিলাম।

৫ই অক্টোবর,২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১১৪/৩৬৫

(বিলম্বে আপলোডের জন্যে দু:খিত।)

অ আ আজকের লেখালেখি - ১১৩

কতদিন ভেজা মাটির গন্ধ পাই না,
কতদিন নাইতে নামি না 
বয়ে যাওয়া নদীর পাড় ঘেষে,
এক দৌড়ে পেরিয়ে যাওয়া 
সেই সবুজ মাঠের বুকে।
তাই আজ ছুটে যাচ্ছি 
চেনা মাটির কাছে
প্রিয় নানীর বাড়ী সনতলাতে ।


অনেক দিন ধরে প্লান করে সনতলাতে যাই যাই করে যাওয়া হচ্ছিলো না। হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম ছুটে গেলাম। পথিমধ্যে অনেক বৃষ্টির ভিতর পড়লাম। কংক্রিটের ঢাকার জঞ্জাল ছেড়ে এত ভালো লাগছিল। ভেজা মটির গন্ধ আমাকে খুব করে ডাকছিল। আমি আর না করতে পারি নি। অবশেষে শেষ রাতের দিকে পৌঁছে গেলাম প্রিয় সনতলা। তখন অব্দি আমার কথা ভেবে কেন যেন বৃষ্টি আর আসে নি।

৪ঠা অক্টোবর,২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১১৩/৩৬৫

(বিলম্বে আপলোডের জন্যে দু:খিত।)

অ আ আজকের লেখালেখি - ১১২

হেঁটে চলেছি স্পর্শের বাইরে
--------------------------
অনেকটা কাছেই ছিলাম
একটুখানি হাত বাড়ালেই 
যায় ছোঁয়া।

কাছের মানুষগুলো
কাছেই ছিল

হেসেছিল প্রাণখুলে।

বরাবর ছিলাম বিষন্ন
একলা আমি।

পূর্ণিমা আলোতে সব্বাই
ভিজছিল আমার শেষ দিনটাতে
একটু গুটিয়ে নিচ্ছিলাম
অল্প কালোতে।

আমি নিশ্চুপে
আস্তে আস্তে
ফিরতে লাগলাম
ঘন আলো থেকে ঘন অন্ধকারে।

মিলিয়ে যাচ্ছি
একলা আমি
শেষ হয়ে যাওয়া
আলোর পথে,
হেঁটে চলেছি স্পর্শের বাইরে।

৩রা অক্টোবর, ২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১১২/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি - ১১১

আমাদের ইসলামের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। কিছু অল্প সংখ্যক দুবৃর্ত্তপনা মানুষগুলোর জন্যে পুরো একটা জাতি হুমকির মুখে। আমরা কুরআনের মর্যাদা রক্ষার্থে ব্যর্থ হয়েছি। যারা ইসলামের নামে সন্ত্রাস করে খুব বড়াই করেছেন তাদেরকে বলছি আপনারা দয়া করে কুরআনকে সম্মান করুন এবং আল্লাহ আমাদেরকে যেভাবে পথ প্রদর্শন করেছেন
 সেইভাবে হেঁটে যান এবং আমি তাদের জ্ঞানার্থে কুরআনের অংশ বিশেষ উল্লেখ করলাম : 


[Al- Qur'an; Surat Al-'Anām - 6:108]




وَلَا تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ فَيَسُبُّوا اللَّهَ عَدْوًا بِغَيْرِ

عِلْمٍ ۗ كَذَٰلِكَ زَيَّنَّا لِكُلِّ أُمَّةٍ عَمَلَهُمْ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّهِم مَّرْجِعُهُمْ

فَيُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

"তোমরা তাদেরকে মন্দ বলো না, যাদের তারা আরাধনা করে আল্লাহকে ছেড়ে। তাহলে তারা ধৃষ্টতা করে অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহকে মন্দ বলবে। এমনিভাবে আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে তাদের কাজ কর্ম সুশোভিত করে দিয়েছি। অতঃপর স্বীয় পালনকর্তার কাছে তাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি তাদেরকে বলে দেবেন যা কিছু তারা করত।'

And do not insult those they invoke other than Allah , lest they insult Allah in enmity without knowledge. Thus We have made pleasing to every community their deeds. Then to their Lord is their return, and He will inform them about what they used to do.
-------------------------------------------------------------------------------



[Al- Qur'an; Surat Al-Mā'idah - 5:8]





يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ ۖ وَلَا 

يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَىٰ أَلَّا تَعْدِلُوا ۚ اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ 

لِلتَّقْوَىٰ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ

"হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে অবিচল থাকবে এবং কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতার কারণে কখনও ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করো না। সুবিচার কর এটাই খোদাভীতির অধিক নিকটবর্তী। আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা যা কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে খুব জ্ঞাত।"

O you who have believed, be persistently standing firm for Allah , witnesses in justice, and do not let the hatred of a people prevent you from being just. Be just; that is nearer to righteousness. And fear Allah ; indeed, Allah is Acquainted with what you do.





-------------------------------------------------------------------------------
[Al- Qur'an; Surat Al-Ĥaj - 22:40]




الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِن دِيَارِهِم بِغَيْرِ حَقٍّ إِلَّا أَن يَقُولُوا رَبُّنَا اللَّهُ ۗ 

وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ 

اللَّهُ مَن يَنصُرُهُ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ

اللَّهُ مَن يَنصُرُهُ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ

"..................আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে (খ্রীষ্টানদের) নির্ঝন গির্জা, এবাদত খানা, (ইহুদীদের) উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ বিধ্বস্ত হয়ে যেত, যেগুলাতে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়। আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করবেন, যারা আল্লাহর সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী শক্তিধর।

[They are] those who have been evicted from their homes without right - only because they say, "Our Lord is Allah ." And were it not that Allah checks the people, some by means of others, there would have been demolished monasteries, churches, synagogues, and mosques in which the name of Allah is much mentioned. And Allah will surely support those who support Him. Indeed, Allah is Powerful and Exalted in Might.



-------------------------------------------------------------------------------
সর্বোপরি, রামু,পটিয়ার জঘন্যতম ইসলাম বিরোধী কাজ করা এবং ভুল পথে চলা মানুষগুলোর কঠোর শাস্তি দাবী করছি। সে যেই হোক তাকে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক। এইটা আমাদের শুধু ইসলামের অস্তিত্বের টিকে রাখার দাবী নয়, আমরা মুসলিমরা বিবেকবান সেটা প্রমানের সময় এসেছে।




২রা অক্টোবর, ২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১১১/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি - ১১০

আজ রাগ করে বিরক্ত হয়ে খবরের কাগজ পড়ি নি। আমি জানি বড় করে হেডিং হবে আমাদের বাংলাদেশীদের একটা কুকর্মের খবর। সারা বিশ্ব একটা বিনোদনধর্মী খবর পেয়ে যাবে। তারা কয়েকদিন ঢালাওভাবে প্রচার করবে,"বাংলাদেশ জঙ্গি দেশ, এখানে মুসলিম নামক একটা জঙ্গি জাতি বসবাস করে। বিদেশী রাষ্ট্রগুলো একটা উপহাস করার মতন
 একটা বিষয় বার করে ফেললো।

আমি সত্যি খুব অবাক হলাম ধারাবাহিকভাবে এতগুলো মন্দির পুড়িয়ে দিল। অথচ কেউ বাঁধা দিতে সাহস পেল না। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকাজে নিয়োজিত পুলিশ কেন পালিয়ে গেল এবং তাদের কি কোন শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না যে তারা আরো শক্তিশালী হয়ে আসতে পারত? এটি কি পুলিশ স্বেচ্ছায় করেছে নাকি কারোর ছত্রছায়াতে। খুব সম্ভবত একটা নোংরা রাজনীতির বলি এই মন্দিরগুলো। এই সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি যদি রাষ্ট্রের প্রধান কর্তব্য হয়ে থাকে তাহলে যখন মন্দির পুড়ে গেল একদিনের ভিতরে তখন সব দোষ চাপিয়ে দেওয়া হল বিরোধী দলে থাকা জামাতকে। অনেকটা যত দোষ নন্দ ঘোষ।

হিন্দুদের উপর হামলা হলে তাৎক্ষণিকভাবে ফৌজদারী মামলা দেখিয়ে মুসলিমরা করেছে বলে গ্রেফতার দেখানো হয় এবং দোষী মুসলিম মানে দাঁড়িওয়ালা, টুপিওয়ালা। মসজিদের হামলা করলে তখনও দোষ পড়ে জঙ্গীদের। সর্বোপরি এখন ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়ে একজন সন্ত্রাসীর ধর্ম ইসলাম। যেকোন হামলা মানে এই মুসলিমের কাজ।

একটু চোখ কান খোলা রাখলে দেখতে পারবেন, সন্ত্রাসী কি কোন ধর্ম মানে? ভারতে বাররী মসজিদের দাঙ্গাতে কত হিন্দু- মুসলিম মরে গেল কে মারলো তাদের? হিন্দু না মুসলিম না খ্রিষ্টান না দুর্বত্ত। কাকে দোষারোপ করবেন? আপনি যদি মুসলিম হন হয়ত বলবেন, এটি মালাউনের কাজ। কারন আপনি তাদের ঘৃনা করেন। মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা করল। কারা করলো বৌদ্ধ নাকি হিন্দু নাকি মুসলিম। যেহেতু, গায়ের জোর বেশী ছিল যাদের তাদেরকে দোষারোপ করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে তাই হয়েছে। সব দেশেই চলছে মুসলিম নিধন কিন্তু কেন? কারন আমরাদের ভিতরে থাকা উগ্রতাকেপন্থী ধর্মান্ধতা দায়ী।

আজ অন্যান্য ধর্ম্বাবলীর মানুষগুলো শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যবসা-বানিজ্যে নিজেদের শক্তিশালী করে তুলেছে তাই তারা আমাদের দিকে বাঁকা আঙ্গুল তুলে তর্জনী উঠিয়ে ভয় দেখাতে সাহস পাচ্ছে। অথচ আমরা মুসলিমরা কি করছি? নেকের কথা বলে ঘরের মা,বোনদের অশিক্ষিত অন্ধকারে দাবিয়ে রাখছি, শ্লীলতার কথা বলে কালো পর্দায় ঢেকে রাখছি। হিজাবের সংগা গুলিয়ে ফেলছি। এতে কি নেক হচ্ছে?

আমরা মুসলিমরা শক্ত প্রতিবাদ করতে জানি না, কারন আমাদের শিক্ষা নেই, আমাদের নিজের ধর্ম সম্পর্কে স্বচ্ছ জ্ঞান নেই। আমাদের ছোট ছোট ব্যবহারিক যন্ত্রগুলোতে কেউ ধর্ম শিক্ষা দেয় না। আমাদের কোন মাথা ব্যথ্যা নেই। শুধু আমাদের নিয়ে কেউ কিছু বললে আমরা আগুন জ্বালাচ্ছি, মেরে ফেলছি। এতে ক্ষতি কার হচ্ছে? আমাদের না তাদের। তারা আমাদের উম্মাদনা দেখে হাসছে কারন তারা আমাদের নিয়ে খেলছে এবং তারা খুব ভালো করে জানে আমরা বদ্ধ উম্মাদ। হয়ত আমরা একদিন ঠিকই সেই পথে ফিরব তখন আমাদেরকে কেউ তখন বলবে না, ঐযে মুসলিম ঐটা একটা জন্তু।

১লা অক্টোবার, ২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১১০/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি - ১০৯

আমি তখন খুব ছোট হয়ত ছয় কি সাত বছর বয়স হবে। আমার প্রিয় দাদুর পাশে ছিল আমাদের ঘর। আমি অনায়াসে ছুটে চলে যেতাম দাদুর কাছে। দাদুকে সব সময় দেখতাম। সাদা ধবধবে একটা পরিহিত পাঞ্জাবী সবুজ রঙের একটা জায়নামাজে নামায পড়ছেন। সম্মুখে নুকতাবিহীন আরবী পাশে বাংলা অনুবাদ করা লেখা। আমার দাদু খুব সুর
 করে কোরআন তেলোআয়ত করতেন আমি খুব মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। দাদু আমাকে কোলে বসিয়ে কোরআন পড়তেন। আমি ঘুমিয়ে যেতাম দাদুর কোলে সুমধুর কন্ঠে।


আমি খুব ছোটবেলাতে কথা বলা সাথে সাথে সালাম দেয়া শিখে গিয়েছিলাম।যার জন্যে আমি রাস্তায় যাকে দেখতাম সালাম দিতাম, সেই শ্বেতরোগের সাদা দাঁড়িওয়ালা ভিক্ষুক, সুইপার, দুধওয়ালা, রিকসাওয়ালা, দোকানী খুরশীদ ভাই লাল গেরুয়া পরিহিত পুরোহিতরাও কেউ বাদ যেত না। আমি তখন বুঝতাম না ধর্ম বলে আলাদা জাত থাকে, মানুষের আলাদা একটা পরিচয় দেওয়া থাকে যে ওরা গরু খায় তাই ওরা মুসলমান, ওরা শুয়োর খায় তাই ওরা হিন্দু, খ্রিষ্টান। যারা সবজি খায় তাই ওদের বলে বৌদ্ধ।

অথচ আমাদের কারোর জন্ম ধর্ম দেখে হয় নি। আমাদের জন্মের পর আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা মানুষ তারপর আমরা যেই সমাজে জন্মাই সেই সমাজের মানুষগুলো ঘোষনা দেন সেই অর্থে আমি একজন মুসলমান। সেজন্যে আমি নামায পড়ি। কুরআন পড়ি। আমার মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এবং আমি তাঁর উম্মত। এই অভ্যাসগুলো আমাকে আমার পরিবার থেকে সেখানে হয়েছে। আমি আট বছরে দাদুকে হারাই এবং আমার দাদু মারা যাওয়ার পর তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু উনার প্রতিদিনের সাথী সেই কুরআন শরীফ আমার মাকে দিয়ে বলেছিলেন এটি যেন আমাকে একসময় বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তাই আমি কুরআন শরীফ তেলোআত শেষে বুকে জড়িয়ে সুউচ্চ স্থানে যত্ন করে গুছিয়ে রাখি। আমার মাতৃভাষা বাংলা তাই আমি বাংলা বুঝি। তাই আমি আরবীর পাশাপাশি আল্লাহর কথা বোঝার জন্য বাংলা অনুবাদ পড়ি। সেজন্য আমি বিভ্রান্ত হই না। আমাদের পরিবারের একটা শিক্ষা আমাদের সবাইকে দেওয়া হয়েছে ভুল শিক্ষা মহাপাপ, যা হত্যার সামিল। ইসলাম কখনোই হত্যা ও দুবৃর্ত্তপনাকে প্রশয় দেয় না বলে ইসলাম শান্তির ধর্ম। যারা দুর্বৃত্তপনা করে তাদের স্থান জাহান্নাম।

পবিত্রতার কথা ভেবে ধর্ম নিয়ে কখনো আমি লিখি না। যখন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি, রাজনীতি, ধর্ম নিয়ে হত্যাযজ্ঞ দেখে আমার কখনো সখনো প্রচন্ড মন খারাপ হয়। আজ আমি যখন দেখলাম, ধর্মের দোহাই দিয়ে নিজেরা লুটরাজ, অমুসলিমের ঘর বাড়ী জ্বালায়, পবিত্র কুরআন নিয়ে রাস্তায় নিয়ে মিছিল করে, কুরআনকে নোংরা করে, রাস্তায় পুলিশের দিকে ঢিল ছুঁড়ে, যখন পুলিশ তেড়ে আসে তখন হিংস্র চেহারাওয়ালা লোকগুলো কুরআন ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। তখন ইসলামের সম্মান কোথায় থাকে।
আগুন নিয়ে ঘর পুড়িয়ে কি নেক পূরন হয়, জিহাদ মানে কি লুটপাট, নিরীহ মানুষ হত্যা। কোন কিতাবে লেখা আছে আবার জিহাদ হবে। আল্লাহ্ আদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের নবীরা জিহাদ করেছিলেন। ইসলামের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে জিহাদ হয়েছিল। সর্বশেষ জিহাদ যুদ্ধে জয়লাভ করে আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে আল্লাহতায়ালা বেহেশতে নসীব করেছিলেন। এখন আবার কিসের জিহাদ, আমাদের হুজুররা কি নিজেদের নবী মনে করছেন। এর থেকে গুনাহ কি হতে পারে? আমাদের হুজুররা কি শুধু মুখস্থবিদ? তারা কি সত্যিকার ইসলাম মানেন তাহলে কেন তারা মহানবীর কথা মতন বিদ্যা অর্জনে বিদেশে যান না। তারা কেন আমাদের ইসলামকে সন্ত্রাসীর ধর্মের অপবাদ থেকে মুক্তি দিতে পারেন না। কেন তারা আমাদের ইসলামের দোহাই দেখিয়ে লুটপাট করেন, আগুন নিয়ে খেলেন, যে আগুন নিয়ে একসময়
আমাদের মহানবীকে কাফেররা পুড়িয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। অতিরিক্ত ধর্মান্ধতা কি নেকের চাবিকাঠি নাকি ইসলামের গায়ে কালিমা লেপ্টানো।

আমার ছোটবেলায় আমাকে পাশের মসজিদের তরুন হুজুর আমপাড়া, কালেমা, কুরআন শিখিয়েছিলেন। আমি রোজ শুক্রবার তাঁর পা ছুঁয়ে সালাম করতাম। তরুন বয়সের অগাধ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন, শিক্ষিত ছিলেন তাই তার প্রতি আমার সম্মান চলে আসত। উনি পরবর্তীতে স্কুল জীবনে আমার ধর্ম বিষয়ক শিক্ষক হয়েছিলেন। যার সুন্দর হাতের লেখার নোটের যাদুতে আমি ইসলাম ধর্মে লেটার মার্কস পেয়েছিলাম।

আজ সেই সব হুজুরদের যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে লুটপাট করেন, অগ্নিসংযোগ করেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন আপনার থেকে ক'টা ছেলে আজ শিক্ষিত হয়ে আপনাদের পা ছুঁয়ে সালাম করে। ক'জনের নামে আপনি গর্ব করে বলতে পারবেন অমুক ডাক্তার আমার ছাত্র, অমুক ইঞ্জিনিয়র কিংবা নামকরা শিল্পপতি। আপনারা যাদের নাম বলবেন তারা আজ ইসলামের নামধারী চিহ্নিত সন্ত্রাসী, যারা আমাদের রগকাটতে প্রস্তুত।

আমি আজকের রামুর ঘটনায় একজন মুসলিম হিসেবে খুবই লজ্জিত এবং শোকহত। আমি ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

আল্লাহ তুমি দয়া করে এই ভুল পথে চলা মানুষগুলোকে হেদায়েত দান করো। আমিন।

৩০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১০৯/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি - ১০৮

কিছু কিছু অনুভূতির কথাগুলো মনের ভিতর গেঁথে যায় সেগুলো মাঝে মাঝে কত কথার ছলে চলে আসে ;

১। একটা কথা মনে রেখো, ভালো বন্ধু ও সত্যিকার বন্ধু খুঁজে পাওয়া যেমন কঠিন,তেমন তাদের ছেড়ে যাওয়াও কঠিন, ভুলে যাওয়াও অসম্ভব, কেননা সে তোমার মনের একটা স্থান দখল নিয়ে থেকে যাবে।

২। তুমি কি জানো, আমি 

রোজ সব জায়গাতে কি দেখি? তোমার হাসিমাখা মুখ।
তুমি কি জানো, আমি রোজ কি অনুভব করি? তোমার সার্বক্ষনিক নিরব-সরব উপস্থিতি।
তুমি কি জানো, আমি রোজ কি বলি? আজকের এই ভালো থাকা দিনটার কারন কিন্তু তুমি।

৩। নিজেকে যদি বড় হতে চাও তবে অহংকারকে কবর দাও।

৪। যখন তোর মন খারাপ থাকবে, আমাকে ফোন দিস, হয়ত তোকে খুশী করতে নাও পারি কিন্তু একসাথে গলায় গলায় কাঁদতে পারি।

৫। যা চলে গেছে সেটি নিয়ে দুঃখ করো না, মনে সাহস রাখো, নিজেকে গড়ে তোলো এবং খেয়াল রেখো যে ভুল একবার ঘটেছে সেটি যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

২৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১০৮/৩৬

অ আ আজকের লেখালেখি - ১০৭

সেবার যখন প্যালেষ্টানী মানুষগুলোর উপর নির্বিচারী অত্যাচার চলছিল। পাখীর মতন ধরে ধরে গুলি করে মেরে ফেলছিল। তখন আমাদের তথা কথিত শান্তির মিশন নিয়ে চলতে থাকা আরব বিশ্ব নামক বোবা পুতুল ক্লাব সেই পুরানো ভূমিকাতে ফিরে গেল। আমি জানি না আরব বিশ্ব সম্মেলনে কেন এসব বিষয়গুলো মূখ্য আলোচনা হয় না। আমাদের দেশের প্রধানমন্
ত্রী অনেক সেজেগুজে সেখানে বেড়াতে যান, ডিনার করেন, ভাষন দেন, আবার দেশে ফিরে আসেন। উনার ভ্রমন ব্যয় লাখ লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়, আমাদের করের থেকে উনাকে বেড়ানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। আমাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না। আমাদেরকে উল্টা ভয় দেখানো হয় কর আরো বাড়বে। অনেকটা আগের যুগে রাজার আমলে খাজনা বৃদ্ধির মতন । আমরা সহ্য করি, কেননা আমরা অনেক শান্তিপ্রিয়, আমরা মরেও যাই তবুও অশান্তি করি না। তবুও আশার কথা আমাদের দেশ অনেক দেশের সুন্দর, আমাদের মানুষগুলো খুবই সহজ সরল। আমাদের দেশে একটাই সমস্যা আমাদের দেশের শাসনতন্ত্রগুলো আমরা প্রতিবারই আমরা ভুল মানুষের হাতে তুলে দেই, কেননা, সেই ভুল মানুষগুলো ব্যতীত আমাদের হাতে কোন বিকল্প নেই। তবুও আশায় আছি, আমাদের উত্তরসূরীরা একটা দারুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। আজ সিরিয়া, প্যালেস্টাইন, ইরাক সর্বত্রই হত্যাযজ্ঞ চলছে। কেউ তাদের রক্ত ঝরা বন্ধ করতে পারছে না। কেউ বন্ধ করতে চাইছে আবার কেউ চাইছে না। তাই অবিরত রক্ত ঝরছে। তাদের জন্যে আমি এই কবিতাটা লিখেছিলাম আমার একান্ত নিজস্ব অনুভূতি থেকে। 



খেলার বিকালে বারুদের গন্ধ
--------------------------------------------
শরতের আকাশ কিঞ্চিত বাদামী ,
প্রায়শই আজকাল নীল থাকে না ।
তুলতুলে মেঘে আমি সাদা ভাগটুকু পাই না
ওখানেও কালো কালো ছোঁপ একটু ময়লাটে ;
গতকাল কিন্তু এরকম ছিল না ।
স্পষ্ট দেখে এসেছিলাম সবুজ মাঠে একলা প্রজাপতি ,
ছোট ছোট পোষা কুকুরগুলো হাঁটছিলো পায়ে পায়ে ,
খেলার মাঠ জুড়ে অসংখ্য ক্ষুদে খেলুড়ে
কারো পায়ে ফুটবল ,
কারো বুকে আঁগলে থাকে ঘুড়ি ,
একটু লম্বা লম্বা পা ফেলে দ্রুত হেঁটে যায় বয়স্ক দেহ ,
কোণায় কোণায় কংক্রিটের বেঞ্চে এসে বসে অনাগত শিশুর মা ,
নির্মল হাওয়ার খোঁজে একটু জিরায় ক্লান্ত পথচারী ,
সবারই ভিতর আরেকটু বেশী ভালো থাকার আকাঙ্খা ।
আলো মিইয়ে গিয়ে যখন সন্ধ্যা নামে ,
কুয়াশার সাথে তখন ভাব করে ঝি ঝি পোকার দল,
এগুলো কিন্তু অতীত গত দু’দিনের কথা ।
বর্তমান আজ সেই জায়গাগুলোতে গণকবর ;
যে ছেলেটা ঘুড়ি নিয়ে বসে থাকত
ও ঘুড়ি হাতে নিয়ে মাটির নিচে চাপা পড়েছিল
একটা বোমারু বিমানকে বন্ধু ভেবে টক্কর দিতে ঘুড়ি উড়িয়েছিল ।
অনাগত শিশুর মা এখন মুমূর্ষ,
অনাগত শিশুটাকে বাচাঁনো যায় নি, মাকে বাঁচানোর শেষ প্রচেষ্টা।
গুটি ক’টা ডাক্তারের অসহায় মুখমন্ডল,
হাসপাতালগুলোতে সম্মুখে লাশের মিছিল ,
কেউ বাবা, কেউ মা, কেউ বাড়ীর ছোট ছেলে , কেউ মিষ্টি গানের মেয়ে
গতকালে রাতের গুলির তীব্রতা ও বারুদের পোড়া ঝাঁ ঝাঁ গন্ধে
নিস্তবদ্ধ শেষ বিকালের খেলার মাঠ অসংখ্য গর্তের কলোনি , ভাঙ্গা গুঁড়ো স্কুল দালান।
কাল বিকালের কেউ নেই সেই ছেলে, সেই শিশু, সেই মা, সেই বাবা, সেই ক্লান্ত দাদু।

আমরা আজ ওদের কবর খুঁড়ছি
নীরবে নিভৃত শক্ত চোখের জলে। 


২৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২
---------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১০৭/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি - ১০৬

আমার একটা খুব ভালো বন্ধু আছে, যে ছোটবেলা থেকে ধাক্কা খেয়ে বড় হয়েছে। 

ও খুব মনযোগ দিয়ে পড়াশুনা করত, আমরা যখন আকাশে হেলে পড়া সূর্যটাকে দেখতাম। তখন খেলার জন্যে মনটা আনচান করত। আর ও গণিতের খাতা নিয়ে বসতো। আমরা একসাথে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিলাম। ও উর্ত্তীন হল তবে সেকেন্ড ক্লাস ৫৯৮ মাকর্স। আমরা সবাই ফার্স্ট ক্লা

স পেলাম। আমরা খুব দুঃখ পেলাম। কেননা, ওর মত পরিশ্রমী ছাত্রের কাছ থেকে এমন নম্বর আশা করা যায় না।

একসময় আমরা সবাই একসাথে ঢাকা সিটি কলেজে কমার্সে ভর্তি হলাম। সময় মতন সবাই ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিলাম। খুব দ্রুত রেজাল্ট বেরিয়ে গেল সেবারও আমরা সবাই ফার্স্ট ক্লাস পেলাম। শুধু ও পেলো না । সেই পুরানো নিয়তির নিষ্ঠুর খেলা, সেবারও পেল ৫৯৮। আমরা এতটা শোকাহত ছিলাম যে, কোনভাবে মেনে নিতে পারছিলাম। পরপর দুই পাবলিক পরীক্ষাতে এমন হবে কেন। আমরা ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা পাই নি।

তারপর ওর বাবা মারা গেল। ও হঠাৎ করে পড়াশুনা ছেড়ে দিল। ছোট বোনদের শিক্ষার ভার ওর উপর পড়লো। অনেক চাকরী খুঁজলো, কোথাও চাকরী পেল না। কেননা, আজকাল বি.এ ডিগ্রিও লাগে পিয়নের চাকরী করতে। শেষমেষ নিরুপায় হয়ে ও পাশের দোকানে চা বিক্রেতা হয়ে গেল। আজও সে চা বিক্রি করে। আমাকে দেখে ও ফ্যালফ্যাল করে তাকায় আমি ওকে তুই তুই করে ডাকি। ও আমাকে আপনি ডাকে। আমি ওকে অনেক বলেছি, খবরদার আপনি ডাকবি না। ও হাসে । আমার মনটা খুব খারাপ হয়।

রানা কেন জানি তোর জন্যে নিজেকে অপরাধী মনে হয়। তোকে আমি বলেছিলাম আমার সাথে থেকে কাজ শেখ। আমার কোম্পানীতে তোর একটা গতি হবেই। কিন্তু তুই রাজী হোস নেই কোনদিন। আমার খুব প্রিয় বন্ধুটার জন্যে একটা কবিতা।

চোখের যে জলে বরফ জমে
---------------------------
কিছু মানুষ আছে যাদের কাছে
কষ্ট এতোটা সহজাত অভ্যাস
তাদের চোখে কখনো জল নেমে আসে না
ঠোঁট মুখ কামড়ে ধরে কষ্ট জমায়
জমাট বাঁধায় চোখের জলে।
আবেগহীন,
অনুভূতিহীন
ভাবলেশহীন মুখমন্ডল।
যতই লাগুক রৌদ্রতাপ
লাগুক ভালোবাসার উত্তাপ
তবুও চোখের যে জলে বরফ জমে
সে বরফ কখনো গলে না।

২৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১০৬/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি - ১০৫

"বেদনার ফুল" আমার প্রথম বইয়ের পান্ডুলিপি আমার শ্রদ্ধেয়া দিদিমা বেগম সুফিয়া কামাল পড়েছিলেন এবং তাতে নিজের হাতে লিখে এই স্নেহ মমতা মাখা মতামত ল
িখেছিলেন। এই মতামত আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেরনা হয়ে আছে এবং আমার লেখালেখি জীবনের একটা বড় টার্নিং পয়েন্ট এনে দিয়েছে। আমার ভিতর একটা লেখার স্পৃহা তৈরী হয়ে গেছে। তাই আজও লেখছি। সেই বইয়ের একটা প্রিয় কবিতা এখানে দিলাম।



বন্ধু মানে বোধহয়

পরস্পরের কাঁধে হাত রেখে অলিগলিতে হেঁটে চলা,
আমাদের সীমাহীন কষ্টগুলোর ভাগ বাটয়োরা ।
আড্ডার বেঁচে থাকা,
অফুরন্ত ভালোবাসা ।
বিশ্বাস নিয়ে ইটের পর ইট গেঁথে যাওয়া,
ছোট ছোট আশা ছোট ছোট ভরসা।
মনের আনাচে কানাচের লালিত স্বপ্নের বাস্তবতা,
কিছু গোপনীয়তা, কিছু দূর্বলতা ।
হতাশার উপরে সিগারেটের ধোঁয়া,
কবিতার সীমাহীন আবৃত্তির ক’টি লাইন,
অপ্রকাশিত মুক্ত গানের স্বরলিপি,
গীটার বাজিয়ে পূর্ণিমা সন্ধ্যার সুরের পৃথিবী ।
কিছু কবিতা, কিছু গান, কিছু হাসি কিছু কান্না,
আর মমত্ববোধ,
কিছু কিছু স্বপ্ন ,কিছু প্রাণ
বন্ধু মানে বোধহয় একাকীত্বের অবসান ।

২৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২
---------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১০৫/৩৬৫




Photo: অ আ আজকের লেখালেখি - ১০৫
---------------------------------------------------------------------
"বেদনার ফুল" আমার প্রথম বইয়ের পান্ডুলিপি আমার শ্রদ্ধেয়া দিদিমা বেগম সুফিয়া কামাল পড়েছিলেন এবং তাতে নিজের হাতে লিখে এই স্নেহ মমতা মাখা মতামত লিখেছিলেন। এই মতামত আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেরনা হয়ে আছে এবং আমার লেখালেখি জীবনের একটা বড় টার্নিং পয়েন্ট এনে দিয়েছে। আমার ভিতর একটা লেখার স্পৃহা তৈরী হয়ে গেছে। তাই আজও লেখছি। সেই বইয়ের একটা প্রিয় কবিতা এখানে দিলাম।

বন্ধু মানে বোধহয়

পরস্পরের কাঁধে হাত রেখে অলিগলিতে হেঁটে চলা,
আমাদের সীমাহীন কষ্টগুলোর ভাগ বাটয়োরা ।
আড্ডার বেঁচে থাকা,
অফুরন্ত ভালোবাসা ।
বিশ্বাস নিয়ে ইটের পর ইট গেঁথে যাওয়া,
ছোট ছোট আশা ছোট ছোট ভরসা।
মনের আনাচে কানাচের লালিত স্বপ্নের বাস্তবতা,
কিছু গোপনীয়তা, কিছু দূর্বলতা ।
হতাশার উপরে সিগারেটের ধোঁয়া,
কবিতার সীমাহীন আবৃত্তির ক’টি লাইন,
অপ্রকাশিত মুক্ত গানের স্বরলিপি,
গীটার বাজিয়ে পূর্ণিমা সন্ধ্যার সুরের পৃথিবী ।
কিছু কবিতা, কিছু গান, কিছু হাসি কিছু কান্না,
আর মমত্ববোধ,
কিছু কিছু স্বপ্ন ,কিছু প্রাণ
বন্ধু মানে বোধহয় একাকীত্বের অবসান ।

২৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২
---------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজক্টে ১০৫/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি - ১০৪

আবার এলো যে সন্ধ্যা 
শুধু দু'জনে
চলো না ঘুরে আসি অজানাতে
যেখানে নদী এসে থেমে গেছে।

ঝাউবনে হাওয়াগুলো দুলছে
সাওতালি মেঘগুলো খেলছে
লাল লাল শাড়িগুলো উড়ছে

তার সাথে মন মোর দুলছে
ঐ দূরে আকাশের প্রান্তে
সাত রাঙা মেঘগুলো উড়ছে।

এই বুঝি বয়ে গেল সন্ধ্যা
ভেবে যায় কি জানি কি এই মনটা
পাখিগুলো নীড়ে ফিরে চলছে
গানে গানে কি যে কথা বলছে
ভাবি শুধু এখানেই থাকবো
ফিরে যেতে মন নাহি চাইছে।

হ্যাপী আকন্দের এই গানটা আমার প্রিয় বন্ধু রায়হান গাইত আর আমরা সবাই গলা মেলাতাম। আমরা যেখানেই বেড়াতে যেতাম। রায়হানের সাথে সব সময় গিটার থাকত। আজও পিকনিকে গেলে এই গানটা সবাই মিলে গাইতাম। দারুন সব দিনগুলো প্রচন্ড মিস করি।

২৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১০৪/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি - ১০৩

চাচ্চু কি খাবে? একটা বয়স্ক কন্ঠ। "কোকাকোলা", খেলার মাঠে বসে থাকা গম্ভীর হয়ে জবার দিল শিশু কন্ঠটি। ছোট্ট ছেলেটার কার্লি চুল সাদা নীল চেক শার্ট ইন করে জিনস প্যান্ট। শার্টের হাতাগুলো গুটানো। হাতে ধরা চিপসের শেষ হয়ে আসা প্যাকেট। প্রতি শুক্রবার বিকাল বেলাতে ঢাকা স্টেডিয়াম
 মাঠে বাবা রোজ ছোট্ট ছেলেটাকে ফুটবল খেলা দেখতে নিয়ে যান। বাবার ক্লাব ব্রাদার্স ইউনিয়নের খেলার সময় ছোট ছেলেটা একগাদা বাবার বন্ধুদের এটা ওটা আব্দার সামলায়। বাবার বন্ধুদের ভিতর সেই ছেলেটি একমাত্র ছেলে হওয়াতে আদরের কোন কমতি নেই। শামীম চাচ্চু সবার থেকে একটু আলাদা, সারাটা স্টেডিয়াম ঘুরে ঠান্ডা কোকাকোলা খুঁজে এনে দিত। তাই ছোট্ট ছেলেটা শামীম চাচ্চু নামটা ভুলে গিয়ে আদর করে ডাকত,"কোক চাচ্চু"। ছোট্ট ছেলেটা যতদিন যেত ফুটবল খেলা দেখতে কোনদিন কোক চাচ্চুর কাছ থেকে কোক ছাড়া ফিরত না। 

আশির দশকের আমার সেই কোক চাচ্চুকে আজ শেষ দেখে আসলাম। কোক চাচু আজ ভোরে মারা গিয়েছেন। আজ আমার প্রচন্ড মন খারাপ। ভেজা চোখে বারবার ভেসে উঠছে আমার সেই ছোট্ট বেলাকার চাচ্চুর কোলে বসে কোক খাওয়ার মুহূর্ত। "কোক চাচ্চু", তুমি যেখানে থেকো ভালো থেকো। আমি না হয় একা কোক খেয়ে নিব, তুমি শুধু শেষ রাতের তারা হয়ে একটু উজ্জ্বল হয়ে জ্বলো, আমি বুঝে নিব, তুমি আমার কোক খাওয়া দেখছো।

২৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১০৩/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি - ১০২

ফুটপাথে চলতে গিয়ে আমার একজনের সাথে হালকা ধাক্কা লাগল। আমি নিজের থেকে 'সরি' বললাম। যাকে বললাম তারঁ চেহারাতে ছিল রাজ্যের বিরুক্তি। আমি মুচকি হেসে চলে আসলাম। ফিটফাট টাই পড়া সেই লোকটার ভিতর কোন প্রকার আন্তরিকতা, শিষ্টাচার খুঁজে পেলাম না। 

আমাদের দেশের জনসমষ্টির শিক্ষিত, 

সেমি শিক্ষিত, অশিক্ষিত এ তিন ধরনের মানুষ আবার ভদ্র অভদ্র দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। শিক্ষিত ও অশিক্ষিত অনুপাতে শহরের লোকজন গ্রামের লোকজন থেকে এগিয়ে থাকে। কেননা, সর্বোচ্চ সুবিধা প্রাপ্তি শুধুই শহরমুখী। গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা রোজ রোজ স্কুলে বসে নিজেরা মিলে খেলাধুলা করে, গল্প করে, কেননা তাদেরকে পড়ানোর জন্যে শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের সবাই শুধুমাত্র ইংরেজী ও অংকের শিক্ষকের অভাবে ঝরে যাচ্ছে। অথচ তাদেরকে ধর্ম শিক্ষা পড়ানোর লোকের অভাব হচ্ছে না। সবাই নব্বই ভাগ নম্বর পাচ্ছে যা পরবর্তী জীবনে কোন কাজে আসছে না। সবার বড় হওয়ার সাথে সাথে নতুন করে ধর্মকে শিখতে হচ্ছে। আমরা মানুষগুলো প্রাথমিক শিক্ষাটা পেয়ে থাকি নিজের পরিবার থেকে, যেখানে আমাদেরকে আন্তরিকতা, শিষ্টাচার এই সব কিছু শেখানো হয়। আমরা স্বাবলম্বী হয়েও সেগুলো মেনে চলার চেষ্টা করি। পরবর্তীতে স্কুল কলেজ ও ভার্সিটি জীবনে শৃঙ্খলা বিষয়টি রপ্ত করানো হয়।

স্বাবলম্বী কেউ কেউ হয়তো অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে নিজেকে অহংকারী করে তুলে তখন আন্তরিকতা ও শিষ্টাচারের অনুপাত কমে আসে। ফলে নিজের ভিতর জটিলতাগুলো বেড়ে উঠে। বিভিন্ন উৎসবগুলোতে আমি ফটোগ্রাফি করতে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াই। কালভদ্র রাস্তাঘাটে কিছু কিছু ফটোগ্রাফারের সাথে দেখা যায় আমি আপন করে নিয়ে আন্তরিকতার হাসি হেসে কুশল জিজ্ঞেস করি, কেউ জবাব দেন কেউ দেন না, আবার কেউ বিরক্ত হন তার মূল্যবান সময়টুকু আমি কেড়ে নিয়েছি। অনেকে অনেক বড় চাকরী করেন, ভালো মতন থাকেন কিন্তু শিষ্টাচার শব্দটা তাদের মতন লোকের মাথায় কাজ করে না।

আমাদের সমাজে এ ঘটনা খুবই সাধারন ঘটনা, একই ফ্লাট কিংবা বাড়ীতে পাশাপাশি থাকছি, কিন্তু তাদের চিনতে পারি না। কেননা, কখনো দেখা হয় নি। হয়ত ঈদেও দেখা করিনি। আমাদের ভিতর দ্বিধা আমাদের বাঁধা দিয়ে বলে, "কি দরকার"? এই দরকার শব্দ আমাদের ভিতর ঢুকে গিয়ে আমাদের স্বার্থপর করে দিয়েছে। এই জন্য আমাদের সমাজে স্বার্থহীন মানুষগুলো মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছে। তাই মানুষের ভিতর রেষারেষি বাড়ছে। আমাদের সব জায়াতে সংঘর্ষ বাড়ছে। এমন কোন জায়গা নেই যেখানে কেউ না কেউ ঝগড়া করছে, কেউ আন্তরিকতায় সমাধানে এগিয়ে আসছে না। বরঞ্চ সেটি মারামারি, খুনোখুনি পর্যায়ে চলে যায়। আমরা শিক্ষিত হয়ে জন্তুর মতন চালচলন করি।

২৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১০২/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি - ১০১

ক'দিন আগে জনৈক ফটোগ্রাফার কমলাপুরে একটা ছোট ছেলের ফটো তুলেছিলেন, ছেলেটা উদ্বাস্তুর মতন বসে ছিল, অসংখ্য ক্লেদ ও ময়লা মাখামাখি এবং এই ফটো প্রসংগে আরেকজন ফটোগ্রাফার বলেছিলেন, "কেন ভাই? এই নেগেটিভ ইম্প্রেশানের ফটো তুলেন"। 

আসলে ফটোর ক্ষেত্রে ফটোর মূল উদ্দেশ্যটা কি সেটা 

হচ্ছে, আসল কথা। একটা ছবি কখনো নেগেটিভ কিংবা পজেটিভ হতে পারে না। প্রতিটি ছবির একটা নিজস্ব ভাষা থাকে, কথা থাকে এবং সেগুলো দিয়ে একটা সমাজ, একটা ব্যাক্তি কিংবা একটা সময়ের নিখুঁত এবং সত্য বণর্না দিয়ে থাকে।

মূল কথা হল একজন দর্শকের পয়েন্ট অফ ভিউ। একটা নুড ফটো পশ্চিমা দেশগুলোতে হুলস্থুল ফেলে বাহবা দিয়ে থাকে এবং ঠিক উল্টাটা ঘটে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকান দেশগুলোতে। এ মহাদেশগুলোতে ছিঃ ছিঃ পড়ে যায়। হয়ত আর্ট ব্যাপারটা আমাদের সাধারন মানুষের মাথা স্থায়ী আসন গড়তে পারে নি। এই জন্য অনেকে আর্ট এক্সিজিবিশানে গিয়ে শেষ বিকালের সূর্যাস্তকে ডিম পোঁচ মনে করে লোভনীয়ভাবে তাকিয়ে থাকেন।

আমাদের দেশের ইমেজ ধরে রাখার জন্যে একটা ছবির সম্বলিত সংবাদের গুরুত্ব অনেক বেশী। আমাদের দেশে শয়ে শয়ে পত্রপত্রিকাগুলো খুললে ভিতরে দেখা যাবে অসংখ্য সবুজ হলুদ সংবাদ। আমরা জানিও না, জানতেও পারি না, কোন সংবাদ সত্য কোন সংবাদ ভিত্তিহীন। বর্তমান যুগে আমাদের দেশে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের দায়িত্ববোধ ও নৈতিকতার বিরাট পরিবর্তন এসেছে। এক্ষেত্রে একটা কথা চলে আসে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা। এই গুলোর ঘাটতির দরুন সব শ্রেনীর মানুষের ভিতর একটা বড় মানসিক পরিবর্তন চলে এসেছে এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা বিষয়টা হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে। ছোট একটা উদাহরন দিয়ে বলা যায়, সম্প্রতি হুমায়ুন আহমেদের লাশের ছবি, ব্যাক্তিগত জীবনের টানা হ্যাঁচড়া, কবর নির্বাচন নাটক, এই সব বিষয়গুলো হুমায়ুন আহমেদের পরিবারের বেদনাদায়ক ছিল যেটিতে বাড়াবাড়ি রং দিয়েছে আমাদের মিডিয়া। কারন এই দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা নেই, কারন সাংবাদিকতার বিষয়ক যেই চার বছরের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে সেগুলোর ধারে কাছে আমাদের হঠাৎ গজিয়ে উঠা সাংবাদিকদের পাওয়া যাচ্ছে না।

তাই আমাদের মতন দেশের অপরাধ করেও মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিক, পুলিশ,উকিল আরো অনেকে বহাল তবিলতে ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছেন। শুধু তাদের পাপের বোঝা ঘানি টানে আমাদের মতন ছাপোষা মানুষ, পঙ্গু বিচার ব্যবস্থার দরুন পঙ্গু লিমন আমরা সবাই। তাই আমাদের স্বর্নালী ভবিষ্যত পঙ্গুত্বের পথে। তবুও আশার কথা, আমাদের পরবর্তী বংশধররাই আমাদের মুক্তির উল্লাস।

২২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২
------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১০১/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি - ১০০

অবশেষে একটা মাইলফলকে পা রাখতে পারলাম। আজ আমার লেখালেখির ১০০ তম দিন পার করলো। মাঝপথে প্রায়ই বিলম্ব হয়ে গেছে। ইন্টারনেট বিড়ম্বনা, পারিবারিক ব্যস্ততা। প্রতিদিন কিছু না কিছু লেখা সত্যি খুবই দুস্কর হয়ে গেছে। আমি শুরুতে ভেবেছিলাম বেশি দূর এগুতে পারবো না। কেননা, 
আমার কাছে হুট করে কিছু লেখে ফেলাটা অলৌকিক ব্যতীত কিছুই নয়। তাও একগাদা সুহৃদ বন্ধুবান্ধবের সীমাহীন ভালোবাসায় আমি এক মুহূর্তে ঠায় দাড়িয়ে থাকতে পারি নি। আমাকে লিখে যেতে হয়েছে। হয়ত সবগুলো লেখা ভালো লিখতে পারি নি। কিন্তু চেষ্টাতে আছি লেখা ফাঁকে যতটুকু উন্নতি করা যায়। আমার এই লেখালেখির পিছনে একটা মানুষকে সারাজীবন আমার হয়ে কৃতজ্ঞ করে রেখেছেন। সেই মানুষটা আমার ভিতরে একটা লেখার বীজ ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি আমার দাদী বেগম সুফিয়া কামাল। বাবার বড় চাচী। আমার লেখা পড়ে আমাকে একটা কথা বলেছিলেন আমার পরে কাউকে দেখলাম লেখালেখি করতে। কথা আমার সারাজীবনের সম্বল হয়ে রয়ে গেল। আমাকে বলে গিয়েছিলেন রোজ কিছু না কিছু লিখবে। ডায়রীর লেখার অভ্যাসটা অনেক দিন ছিল সেটি একদিন অভিমান করে বন্ধ করে দিয়েছিলাম। সেটি আর শুরু করতে পারি নি আজও। আমার দাদীর কথা মতন রোজ রোজ লিখছি। প্রথম দিক লেখালেখিগুলো একসময় ছন্নছাড়া এলোমেলো। যত দিন আসছে গুছিয়ে নিচ্ছি নিজেকে, যা কখনোও হয় নি আগে। 


২১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১০০/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি - ৯৯

আজকাল অনেক চেষ্টা করি ভালো কিছু ছোট গল্প, তেমন একটা লেখা হয় না। তাই পুরানো গল্পগুলোকে ঘষামাজা করে আবার লিখি। কখনো সখনো খুব অবাক লাগে সত্যি কি লেখালেখি এত কঠিন। সত্যি খুব কঠিন। যার জন্যে আজও আমি কিছু লিখবো কিন্তু পারি না। তবে হাল ছাড়ি নি, চেষ্টায় আছি একটা কিছুত
ো হবেই। 


ছোট ছোট অভিমান
----------------------------------------------------------------------------
গোলগাল কার্লি চুলের মেঘলার সাথে আমার অদৌ বনিবনা হয় না। এমনকি ঈশ্বর চিন্তিত থাকেন আমাদের শান্ত মুহূর্তে ; ভাবেন সামনে বোধহয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা অনিবার্য । আমাদের নিরবতায় আশেপাশে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজন একটু বিচলিত থাকে। যখন আমরা ঝগড়া জুড়ে দেই। আশপাশে যেন স্বস্তির নিশ্বাস পড়ে। স্বয়ং ঈশ্বর নিশ্চিন্ত মনে অন্য কাজে ব্যস্ত হন। আমাদের জন্মটা দন্দ্বের মাঝে। আমাদের বন্ধুত্ব, ভালবাসা আর বিয়ে সব কিছুই একেকটা হাঙ্গামার অংশ। যার শিকার হচ্ছে আমাদের আশে পাশের মানুষগুলো । আমরা আজোও তুই তোকারীতে রয়ে গেছি। ‘তুমি’ বলতে হাসি আসে। আমি মেঘলাকে ছেমড়ি ডাকি, ও আমাকে ডাকে ছেমড়া। খেলার মাঠে দু’দলের সর্মথন নিয়ে, রাজনীতিতে দু’পক্ষের আধিপত্য দেখাতে, পচ্ছন্দ-অপচ্ছন্দে নিয়ে ঝগড়া বাঁধে। আমার ভাললাগে সাগর আর মেঘলার পাহাড়। মেঘলা আকাশ ছুঁতে চায় আর আমি পাতাল ছুঁতে চাই। কোথায় বেড়াতে যাওয়ার প্লান বানচাল করি নিজেরাই। মন খারাপ করে দু’জনে পুর্ণিমা দেখি নিজেদের ছাদে বসে। আমার প্রিয় রং গাঢ় সবুজ চির সজীবতার প্রতীক। আর ওর নীল চির বেদনার প্রতীক। শুনেছি কান্নার ও রং নীল। আমাদের অনাগত শিশুটি কন্যা হবে এ আমার প্রার্থনা। মেঘলার পুত্র কামনা। এ নিয়ে তুমুল হৈ চৈ করি। মেঘলার বাবা মা আমাকে বোঝায়, আর মেঘলাকে আমার বাবা মা। আমাদের অনাগত শিশু জন্ম নিয়ে আমাদের সামলানোর দায়িত্ব নিয়ে গালে হাত রেখে চিন্তিত মনে খুঁজবে সমাধান। হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়বে আমাদের ছেলেমানুষীতে। আমাদের সারাটাবেলা কাটবে কারণহীন ঝগড়া রাত এলে ক্লান্ত আমরা ভালবাসা নিয়ে ঘুমুতে যাই। মেঘলা প্রায়ই রাগ করে ফিরে যায় বাবার কাছে। আমিও বিষন্নতায় ঘর সামলাই একা। কিছুক্ষণ বাদে মেঘলা ঘরে ফিরে। এসেই মেঘলা শোনায়,“তোকে ছাড়া আমার একদম ভালো লাগে না। আমি বুঝি না, তোর মতন বাঁদরকে আমি কেন এত ভালবাসি।” বাঁদর কথাটা নিয়ে আমাদের আবার ঝগড়া বাঁধে।

২০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ৯৯/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি - ৯৮

কোটি নামক সংখ্যাটা আমাদেরকে আজকাল আর ভাবাচ্ছে না। না ভাবানো তাই স্বাভাবিক। এই কোটি সংখ্যা দিয়ে অনেক কিছুই হয়। পনেরো কোটি জনসংখ্যা হয়, সেখান থেকে বেকার সংখ্যা ১ কোটি হয়। নিরক্ষতার সংখ্যা হয়ত কমিয়ে বললেও চার কোটি। স্কুল শিক্ষার গন্ডি পেরুতে পারে নি এ রকম সংখ্যা হ
য়ত কোটিতে গিয়ে ঠেকবে। 


আমাদের মানব সম্পদে আমরা বড়ই বিত্তবান তবে এই বিত্ত আমাদের দেশের কোন কাজে আসে না। তাদের একটা অংশ চলে যায় প্রবাসে, কেউ লুকিয়ে, কেউ দালালের খপ্পরে, কেউ বৈধভাবে চলে যায়। চলে যাওয়ার সময় রেখে যায় ধার কর্জ, মা-বাবা, প্রিয় কেউ, বিক্রি করে দেয় ভিটে জমি, প্রিয় খেলার উঠোন। হয়ত একদিন বিদেশী টাকায় ভবিষ্যতে আরো ভালো জমি মিলবে। তারা যায় কেউ ফেরে কেউ ফেরে না। যারা ফিরে তারা কেউ ফিরে লাশ হয়ে, কেউ ফিরে ভিক্ষুক হয়ে। যারা ফিরে না তাদের ফেরার টাকা নেই, স্বপ্ন দেখে দেশে ফেরার বিমানের টিকেটের। আমাদের প্রবাসীতে থাকা একলা মেয়েরা কজন ভালো আছে কে জানে। কেউ ফিরে সম্ভ্রম হারিয়ে কেউ ফিরে অনাগত শিশু নিয়ে। তাদের ভবিষ্যত কে নিবে? এমন আছে কোটি ঘটনা ঘটে।

কোটি টাকা লুটপাট হয়, মন্ত্রী সাফাই গান, "ও কিছু না"। কোটি টাকার অবৈধ চালান ধরা পড়ে, কোটি টাকার গাড়ীতে চলে আমাদের ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া মানুষগুলো। আর আমরা ট্যাক্স দিয়ে ব্যাংক লোনেও গাড়ী কিনতে সাহস পাই না। আমাদের কাছে লাখ টাকা গাড়ী-বাড়ী কোটি টাকার স্বপ্নের সমতুল্য। আর আমরা রোজ রোজ সারাদিনে ঘানি টেনে লোডশিডিং এর ঘরে হাত পাখা ঘুরাতে ঘুরাতে কোটি টাকার স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ি আমাদের স্বপ্নেও কোটি টাকা উড়ে এদিক ওদিক, আমরা স্বপ্নেও নাগাল পাই না।

১৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ৯৮/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি - ৯৭

ক'দিন ধরে খুব বেশী এক ধরনের অজ্ঞতার অন্ধকারে হাতড়াচ্ছি। সহজাত শিক্ষার আলো আজকে নিভু নিভু । 

আমার ফটোগ্রাফি, লেখালেখি সব কিছুকে আরো তথ্য নির্ভর করতে এত দিন ধরে সাহায্য করছিল "ইউটিউব"। ইউটিউবের মাধ্যমে জেনে ছিলাম কেমন করে ফটোগ্রাফি করতে হয়। ফটোগ্রাফির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো। লেখালেখির ক্ষেত্রে জ

েনেছিলাম অনেক নামকরা কবি-সাহিত্যিকদের ব্যাক্তিগত অভিমত ও অভিজ্ঞতাগুলো। যাদের কথাগুলো আমার মতন ছাপোষা লেখকের সাদামাটা লেখাগুলোকে একটু জাতে আনার চেষ্টা চলছে। তাদের গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো আমার জানার আগ্রহটাকে এত বাড়িয়ে দিয়েছে আমি হঠাৎ করে বইয়ের নেশায় পড়ে গেলাম, ভ্রমন পথে একগাদা বই নিতে পারি না বলে আইপ্যাড কিনে তাতে বই পড়তে লাগলাম, ইউটিউবে প্রতিদিন একটা করে ফটোগ্রাফি টিউটোরিয়ার দেখা শুরু করলাম। রোজ কিছু না কিছু দ্রুত শিখে ফেললাম। অনেক কিছু জানতে ইউটিউবের বিকল্প খুঁজে পাই নি। নতুন কিছু জানতে নতুন ভিডিও খুঁজতাম।

সম্প্রতি আমেরিকান নির্বাচনের সময় মুসলিমের প্রতি সহানুভূতিশীল ওবামা সরকারকে হেয় করার একটা সুযোগ বের করে এক অখ্যাত ব্যাক্তি কর্তৃক নির্মিত করেছে "ইনেসেন্ট মুসলিম"। মুসলিম জাতির সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় মহানবীকে নিয়ে এবং ভুল ধারনার উপর ভিত্তি করে এই সিনেমাটা তৈরী করেছে। রিপালিকানদের সমালোচনার মুখ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন চাতুরতায় আশ্রয় নিয়ে পুরা ব্যাপারটা এড়িয়ে গেলেন। এই রাজনৈতিক কুটচালে শুরু হল বিশ্বব্যাপি দাঙ্গার মতন অবস্থা। লিবিয়ার আমেরিকান রাষ্ট্রদূতকে বোম মেরে উড়িয়ে দেওয়া হল। আগুনের দাবানলের মতন ছেঁয়ে গেল হত্যাযজ্ঞ। তারপর বিক্ষোভ শুরু হল পাকিস্তানে।

সেই বিক্ষোভের রেশ বাংলাদেশে এসে পৌঁছালো। মুসলিম দেশগুলোর নিজেদের কোন একতা নেই তাই কেউ সরব হয়নি। কুরআন, হাদিস, রেফারেন্স ও তত্ত্ব- উপাত্ত নিয়ে জোর গলায় সৌদি আরব থেকে নিয়ে শুরু অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্র তাৎক্ষনিক কোন ব্যবস্থা নেই নি। আমাদের সরকার ক্ষীন গলায় প্রতিবাদ জানিয়ে নালিশ দিয়েছে গুগলের কাছে। গুগল নিজেই বাংলাদেশ সরকারের থেকে বলিষ্ঠ। তাই ওরা গাও করে নি। বাংলাদেশ সরকার ইউটিউবের উপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে ইউটিউবের সম্প্রচারের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা বহাল করলো। হাস্যকর ব্যাপার হল, এই লিংক ধরে ব্লক করে দিলে কেউ দেখতে পারতো না। কিন্তু সরকার জানে না কি করে সেটি ব্লক করতে হয়। তাই পুরো ইউটিউবকে বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের যুব ও তরুন সমাজের অবক্ষয়ের জন্যে পর্নসাইটগুলো এখনও উন্মুক্ত সেগুলো আমাদের সরকারের কাছে ক্ষতিকারক মনে হয় নি। অথচ মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানরা একসাথে খোশগল্প করতে আরব সামিট করেন, সকল মুসলিম রাষ্ট্র মিলে সামিট করেন, সংস্থা বানান। কেউ কিন্তু একটু মুসলিমের নিরাপত্তা দিতে পারেন, একজন মুসলমানকে সন্ত্রাসী পরিচয় থেকে মুক্ত করতে চেষ্টা করেন না। রাষ্ট্রপ্রধান কেউ মুসলিম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা দেন না নন মুসলিম দেশগুলোকে। যার ফলশ্রুতিতে আজ আমাদের মতন শান্তিপ্রিয় নিরীহ মুসলিমরা আজকে অন্য নন মুসলিম দেশগুলোর রাজনৈতিক মারপ্যাচে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী। হয়ত এই ভাবে চলতে থাকলে হয়ত একদিন মুসলিম সম্প্রদায় বিলীণ হয়ে যাবে।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২
--------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ৯৭/৩৬৫

(একদিন বিলম্ব করে আপলোডের জন্য দুঃখিত।)

অ আ আজকের লেখালেখি - ৯৬

সাগর থেকে ফিরে এসে আমার ভিতর আবার সেই পুরানো বিষন্নতা ভর করেছে। আসলে আমরা সবাই বসবাস করি একটা নরক সাদৃশ্য বিষময় কংক্রিটের জঞ্জালের শহরে যার নাম ঢাকা। বহু আগেই ঢাকার শান্তি ইতিহাসে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে। আমরা রোজ বাড়ী থেকে বের হই ফেরার পথে দুমরে মুচড়ে বাড়ী ফিরি। কেউ নিশ্চিন্ত মনে বাড়ী ফিরতে পার
ে না। 


ক'দিন কক্সবাজারে ছিলাম ঝামেলাহীন। কর্ম ব্যবস্তার বিশাল উঁচু পাহাড় থেকে মুক্তি পেয়ে ছুটে গিয়েছিলাম। সাগরের উত্তাল তরঙ্গ দারুন কিছু ভালবাসার মুহূর্ত। এখনও কানে ভাসে। ফেরার পথে অনেক কিছু রেখে আসলাম সুখ স্মৃতি, কিছু প্রিয় মুখ। সবাই যে যার মতন চলে গেছে ফিরে যাওয়ার পথ ধরে। আমি একটা সময় পিছু ফিরলাম এবং দেখি কোথাও কেউ নেই। একা আমি শুধু , সম্মুখে একটা লম্বা পথ অন্ধকারচ্ছন্ন।

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ৯৬/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি - ৯৫

আজ সাগরকন্যার সাথে তৃতীয় দিন। প্রচন্ড বেলা করে ঘুম থেকে উঠলাম। কাল সারারাত সাগরের পাড়ে বসে ছিলাম শেষ বারের মতন শেষ রাতের তারাদের দেখে নিতে। খোলা আকাশ খুব একটা পাই না। আমাদের ঢাকার কংক্রিকেটের জঞ্জালে কে কবে শেষ তারা মেলা দেখেছিল আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে পারি না। রাতের অন্ধকারে সাগরের আয়তন খুব হাস
্যকর মনে হয়। যেন আমাদের গ্রামের বাড়ির এঁকেবেঁকে বয়ে চলা একটা নদীর মতন কিছু একটা হবে। অথচ দিনের বেলাতে এর বিশালতা দারুনভাবে মুগ্ধ করে। আমি রাত তিনটা বাজে অদ্ভূত শব্দ সাগরের। সুনসান সবকিছু। দূরের দিকে একটু খেয়াল করলে পেয়ে যাই দুই একটা নোঙ্গর করে থাকা জাহাজ। আকাশে মেঘদের খুঁজে পাই না। তার জায়গাতে দখল করে বসে থাকে একগাদা তারা। সবচেয়ে উঁচুতে সবচেয়ে উজ্জ্বলতম চারটা তারা একসাথে থাকে ওরা আমাকে ডাকছে, আর বলছে, এত দিন পর তোর আসার সময় হল? ভালো আছিস তো? আমি চুপ করে থাকি , চোখ ভিজে আসে জলে। একটা সময় চুপচাপ জবাব দেই, "আপিন-নান্নান, দাদু-দীদা, তোমরা ভালো থেকো। আমার জন্যে দোয়া করো যাতে এই বিশাল সাগরে বিষন্নতায় কোনদিন যাতে হারিয়ে না যাই"।


১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২
--------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজক্টে ৯৫/৩৬৫

(বিঃদ্রঃ ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় আপলোডে বিলম্ব ঘটেছে।)

অ আ আজকের লেখালেখি - ৯৪

আজ সাগরকন্যার সাথে দ্বিতীয় দিন। এভাবে সাগরে জলে বসে ভোর দেখছি শেষ কবে, মনে করতে পারছি না। হয়ত কোনদিনও বসি নি। দারুন সকাল। সেই সাগরের তর্জন-গর্জন, বাতাসের এমন তীব্রতা আমি আজও কোথাও পাই নি। আমি ছবি তুলতে বেরিয়ে পড়লাম। দারুন সব আলোর খেলা। আকাশ পুরো রংয়ের ভেলকি শুরু করে দিয়েছে। নীলের ভিতর এত তারতম
্য থাকে সেটি আকাশ না দেখলে কখনো বোঝা যায় না। সীমাহীন নীলাকাশ সাথে তুলোর মত একগাদা মেঘ। দূরে তাকালে পাহাড়ের সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে থাকা। আমি এ সব সুন্দরের কাছে নিজেকে মিলিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। আমি আসতে আসতে সাগরের কাছে যাচ্ছি, হারিয়ে যাচ্ছি। সাগরের ভালবাসা এত গভীর যেখানে যে কেউ হারিয়ে যেতে পারে অবলীলায় আমার মতন করে। 


১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ৯৪/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি - ৯৩

আজ সাগর কন্যা কক্সবাজারের কাছে পৌঁছালাম । কক্সবাজারের প্রবেশ মুখে উঁচু রাস্তা থেকে দূরের সাগরের ঝিলিক দেখলাম। তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম। সাগরের গর্জনে অদ্ভূত একটা টান আছে। এত ভালো লাগছে বহুদিন পর। নীল আকাশের নীচে সাগরের উত্তাল তরঙ্গ। বিশাল বালি রাশি। আমরা দশ জনের একটা দল ছুটে গেলাম সাগরের
 বুকে। একজন আরেকজনের কাছে পানি উৎসবের উল্লাস। আমরা সবাই রাজধানীর দুর্বিষহ জীবনযাত্রায় ক্লান্ত হয়ে ঝিমিয়ে যাচ্ছিলাম। হারিয়ে যাচ্ছিলাম হতাশার সাগরে। ঠিক সেই মুহূর্তে আমাদেরকে উজ্জীবিত শক্তি এনে দিয়েছে কক্সবাজার। সীগাল হোটেলে শরীরটাকে এলিয়ে দিয়ে বসে আছি। সারা রাত ভ্রমনজনিত ক্লান্তি এখনও শরীরটাকে দূর্বল করে রেখেছে। ঘুমিয়ে গেলাম। ঠিক দুপুরে যখন ঘুম ভাঙলো তখন ছুটে গেলাম সাগর পানে। সাগর জল দিয়ে আমাদের উপর ক্ষোভ ঝাড়ছিল। আমরা পড়ে যাচ্ছিলাম ঢেউয়ের প্রচন্ত ধাক্কাতে। দারুন একটা সময় কাটলো। এক সময় সূর্য দিক বদলে চলে যাচ্ছিল সাথে ছিল আকাশের রং পাল্টানো খেলা। আমাদের মতন অসংখ্য মানুষ ধুঁয়ে নিয়ে ভাসিয়ে দিচ্ছিল সকল অবসাদ। 


১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২
-----------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ৯৩/৩৬৫

(বিঃদ্রঃ ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় বিলম্ব ঘটেছে।)

অ আ আজকের লেখালেখি - ৯২

"তোরা তো কপি পেস্ট জেনারেশন"- এই সহজ-সরল উক্তিটি প্রায়ই বেরিয়ে আসে আমার যৌথ পরিবারের ঠিকানার বয়োজেষ্ঠ্য সদস্যদের মুখগুলো থেকে । কথাটা শুনে আগে খুব রাগ করতাম, খুব গায়েও লাগতো। আজকাল রাগ হয় না। কথাটা কিন্তু ফেলনার না। 

এই কপি পেস্ট সুবিধার বদৌলতে আমরা কাগজ কলমের অভ্যাসটা ভুলে যেতে বসেছি। আমাদে

র সব কিছু কম্পিউটার ভিত্তিক হয়ে গেছে। আমরা একটা বাক্য সুন্দর করে কাগজে লিখতে হিমশিম খাচ্ছি, সারাটা কাগজে বানান ভুলে ভরে যাচ্ছে, কেননা সাদা কাগজেতো কোন বানান শুদ্ধকরন পদ্ধতি নেই। তাই আমাদের শুদ্ধ বানানের ক্ষেত্রে অজ্ঞতার বাড়ছে, যা আগে ছিল না কখনোই। আজ আমরা আমাদের এত দিনের পুরানো লেখালেখিগুলো নির্ভুল লেখার অভ্যাসটা ভুলে গেছি। এখন আমাদের এই অভ্যাসটা আস্তে আস্তে ঐতিহাসিক ঘটনায় রূপান্তরিত হচ্ছে। যখন আমাদের প্রিয় সন্তান তাদের স্কুলে হোমওয়ার্কটা আমাদের দিয়ে চেক করাবে, তখন আমরা কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তায় থাকবো আদৌও কি ঠিক বললাম নাকি, হয়ত অতিরিক্ত সময় চেয়ে নিব কম্পিউটারে ভুল-ক্রুটি পরীক্ষা করার জন্যে। তাই আমাদের কম্পিউটার যেমন আমাদের আর্শীবাদ তেমনি অভিশাপও হয়ে গেছে।

আমাদের নতুন প্রজন্ম এটিকে আর্শীবাদ মনে করছি। কেননা, আমরা আমাদের দৈনান্দিন কাজ, পড়াশুনা, অফিসের অসংখ্য হিসাবা নিকাশ এক নিঃশ্বাসে মিলিয়ে দিচ্ছি। আমরা প্রতিদিন ইউনিভাসিটির এ্যাসাইনমেন্টগুলো খুব দ্রুত করে ফেলছি, ইন্টারনেট থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় বই পেয়ে যাচ্ছি। আমাদের সবকিছু খুব সহজে পেয়ে যাচ্ছি। আমাদের বই কিনতে হচ্ছে না আমাদের জ্ঞান অর্জনের পরিধি বেড়েছে, সহজসাধ্য হয়েছে। কিন্তু আসল কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না, আমরা এই জ্ঞান ধরে রাখতে পারছি না।

আমাদের পূর্ববংশরা আজ সুন্দর করে নির্ভুল চিঠি লিখে ফেলছে, একটুও হাত কাঁপছে না, লেখালেখির রাস্তাগুলো মসৃন, একদম আঁকাবাকা নয়। আমরা আজ কেউ মনে করতে পারছি না, শেষ কবে অনেকগুলো কাগজ ছিঁড়ে প্রিয় কাউকে চিঠি লিখেছিলাম এবং চিঠি দেবার উত্তরের আশায় দিনের পর দিন অপেক্ষা করার উৎকন্ঠা আমরা কোনদিন করি নি। আজ আমরা আবেগহীন হাতে টাইপ করে প্রানহীন ইমেইল করি, মুহূর্তে পৌছে যায়, মুহূর্তে জবাবও চলে আসে। আমরা কিন্তু উৎকন্ঠায় ভুগি না, আমাদের লেখায় কোন ভালোবাসা নেই।

আজ আমরা যেখানে এক্সেল ছাড়া হিসাব মেলাতে পারছি না। সেখানে ওরা মুহূর্তে মিলিয়ে ফেলছে বড় হিসাবগুলো, আমরা হিমশিম খাচ্ছি একটা বড় নামতা বলতে গিয়ে, অসহায় হয়ে কম্পিউটার খুঁজছি, ক্যালকুলেটর খুঁজছি। আজ আমরা আমাদের সবকিছু মোবাইলের মতন বহনযোগ্য যন্ত্রগুলোর ভিতরে পেয়ে গেছি। আমাদের দৈনান্দিন জীবনকে আরো বেশী সহজ করে তুলছে। আমাদের সাদামাটা জীবন হয়ে গেছে প্রযুক্তি জীবন, যতক্ষন সেগুলোর ব্যাটারী চার্জ থাকে ততক্ষন আমরা উজ্জীবিত থাকি, যখনই চার্জ ফুরিয়ে যায় আমরা তখন অসহায়ের মতন গভীর সাগরে পড়ে ডুবে ডুবে পাগলের মতন হাঁপাতে থাকি অন্ধ হয়ে।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২
------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্টে ৯২/৩৬৫