আমার একান্ত কিছু শব্দের মানুষগুলো

আমার একান্ত কিছু অনুভূতি আমার কলমের সাথে ভাব জমায় আমি তাদের সাথে পথ পাড়ি দেই একাকী

Monday, November 5, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি - ১২২


জাফর ইকবালের একটা লেখা পড়েছিলাম, যুক্তরাষ্ট্রের একটা ল্যাবে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে দেখা গেছে যে ঘটনার স্মৃতি মনে রাখার ক্ষমতা সবচেয়ে কম গোল্ড ফিসের। এই প্রসংগে আমার মনে পড়ে গেল। আমরা মানুষগুলোর কথা। আমাদের অনেক কিছুই মনে নাই। অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনা আমাদের কোন কিছুই আজকাল মনে থাকে না।

আমি 
ফাইন্যান্সের ছাত্র ছিলাম বলে অর্থনৈতিক বিষয়গুলোকে আজও একটু আধটু ঘাটাঘাটি করা হয়। তাছাড়া প্রিয় বিষয় ছিল একাউন্টিং। ছোটবেলা থেকে যোগ-বিয়োগের খেলা খেলতে এই কর্মাস বিষয়ের প্রতি একটা অনুরক্ত চলে আসে। যা এখনও বিদ্যমান। আজ সেইরকম পুরানো স্মৃতি প্রসংগে আমার মনে পড়ে গেল। প্রতিদিন কাগজ পড়ে, টিভি দেখে মোটামোটি একটা ধারনা করা যায় আমাদের দেশের চলমান অর্থনৈতিক অবস্থা।

আমাদের দেশের মানুষের জৈবিক সমস্যাগুলো এতই প্রকট যে, তাদের মাথায় অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো খুব একটা গায়ে লাগে না। অর্থনৈতিক অবস্থা অনুসারে আমরা বিগত বছরগুলো কথা একবার মনে করার চেষ্টা করি, আমাদের প্রথম ধাক্কা শুরু হল ৯৬ সালে শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারী তাতে কোথা থেকে কে এক ভারতীয় ব্যবসায়ী এসে সব টাকা নিয়ে চলে গেল। মানি লন্ডারী আইনে থাকা সত্ত্বে তখনকার সরকার কিছু করতে পারলো না। এ নিয়ে ব্যাপক সোরগোল তুললো সদ্য জেগে উঠা মিডিয়া। বাংলাদেশ ব্যাংক, স্টক একচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে তদন্ত কমিটি করলো। মামলা করার উৎস পেল না। পথে বসলো জমি-জমা বেচা, ধার করে আনা টাকার আমানতকারী সাধারন মানুষ। হিসাব-নিকাশের কঠিন মারপ্যাচে পড়ে কেউ হল নিঃস্ব, কেউ আত্মহত্যা করলো, কেউ রাতারাতি পেশীওয়ালা বিত্তশালী।

ধীরে ধীরে চলতে লাগলো আমজনতা আস্তে আস্তে সব ভুলে গেল। তারপর শুরু সমবায় কালচার। অমুক সময়বায় সমিতিতে অমুক টাকা বিনিয়োগ করলে বছরখানেক পরে বিনিয়োগের অর্থ ডবল হয়ে যাবে। সেই হিসাবে কিছু না করে ৮% অতিরিক্ত টাকা কামানো যাবে এই সব ছেলেভুলানো কথায় সবাই আসক্ত হল। কেউ একবার ভাবলো না যে, এক লাখ টাকা যে দুই লাখ হবে সেই নিশ্চয়তা কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক স্বীকৃতি দেয় নি। নির্দিষ্ট এই আপনার অর্থ দাবী করবেন কার কাছে? কেননা, ক'দিন বাদেই বাংলাদেশ ব্যাংক সমবায় ব্যাংকের বিরূদ্ধে মামলা করে দিল এবং অতঃপর সবার টাকা আটকে গেল। দুই দিন পর সেই ব্যাংকগুলো দেউলিয়া ঘোষিত হল। রেহাই পেয়ে গেল যারা এই সমবায় ব্যাংকের উদোক্তা ছিল। মাঝখান দিয়ে শেয়ার ব্যবসার মতন ফেঁসে গেল ডবল স্বপ্নে বিভোর সাধারন আমজনতা। মামলা দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ধরে চলতে লাগলো আমজনতা আবার ভুলে গেল পাওনা টাকার কথা।

অতঃপর আসলো ইউনিপে নামক আরেকটি সমবায় কল্যাণমূলক সংস্থা। তাদের দাবী ছিল একটি নির্দিষ্ট টাকার বিপরীতে স্বর্ণ জমার নিশ্চয়তা। স্বর্ণের পরিমান দেখানো হল বাজারের স্বাভাবিক দরের থেকে অনেক কম। সবাই তখন উৎসাহিত হল অল্প টাকা বেশী সোনা পাওয়া যাবে। সবাই তখন টাকা ঢালা শুরু করলো। আবার, হুলস্থুল,আমজনতা ও মিডিয়ার হাউকাউ, বাংলাদেশ ব্যাংক আবার ঘুম থেকে উঠলো। আবার মামলা। আবার, সেই পুরানো প্যাঁচে আমানতকারীরা।

আবার শুরু হল, শেয়ারের অনেক টাকার স্বপ্ন। আমজনতা বিত্তশীল হওয়ার স্বপ্ন দেখতে লাগলো। ছাত্র,শিক্ষক,কর্মকতা,বালক,বালিকা সবাই বড়লোক হবার স্বপ্নে বিভোর। অনেকে একদিনের শেয়ার মূল্যের টাকা দিয়ে স্বপ্ন স্বপ্ন খেলায় বাড়ী-গাড়ী কিনে ফেললো। তারপর শুরু হলো উত্থান-পতন। হঠাৎ একদিন লাখ টাকার স্বপ্নের শেয়ার হয়ে গেল মূল্যহীন কাগজ। সরকার কোন কিনারা না করতে পেরে সরাসরি বিনিয়োগকারীদের দোষারোপ করতে লাগলো। তাদেরকে ফাটকাবাজ বলে গালিও দিয়ে দিল। তবে আশার কথা এইবার কিন্তু মামলা দেওয়া হয় নি। কারন সরকার আয়নাতে চেহারা দেখে নিজেই বিব্রত। অতঃপর দোষীদের টিকিও কেউ ধরতে পারলো না এবং আমজনতা আবার ভুলতে শুরু করলো ঠিক সেরকম গোল্ড ফিসের মতন।

১৩ ই অক্টোবর,২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১২২/৩৬৫

(বিলম্বে আপলোডের জন্যে দুঃখিত)

অ আ আজকের লেখালেখি - ১২১

আমাদের সাধারন মানুষের জীবন যে মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছে, তা আবার প্রমান হয়ে গেল. গতকালের নামহীন ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া হাতি
য়া ও ভোলা অঞ্চল । আমাদের আবহাওয়াবিদদের নাক তেল দিয়ে নিদ্রাযাপনের জন্যে নিমেষে হারিয়ে গেল ২৩টা মানুষের জীবন। আরো হাজার খানেক মানুষ নিখোঁজ। যারা নিহত, আহত, হারিয়ে যাওয়া মানুষ এরা তেমন কোটিপটি নন, তারা সবাই নিরীহ কর্মঠ জেলে তাই তাদের কোন খবর কোন কাগজের শিরোনাম হয় নি। চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে এই প্রবাদ বাক্যকে মাথায় রেখে অপেক্ষা করছেন, প্রধান মন্ত্রী, ত্রাণ মন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী আরো অনেকেই। তারা এখন ত্রাণ দশ টাকার মুড়ি বিলানোর হিসাব কষছেন। অথচ ক্ষয়ক্ষতির পরিমান যে কত ভয়াবহ ! তা ইচ্ছা করেই সরকারের কথা মতন চলা শাক দিয়ে মাছ ঢেকে রাখার মতন করে মিডিয়া সুন্দর মতন নাটক রচনায় ব্যস্ত। তারা আছে সাগর রুনির বিচার নিয়ে সোরগোলে ব্যস্ত। আরো কত এরকম নাম না জানা সাগর-রুনি আছে সে খবর কি তাদের কান অব্দি পৌঁছায় ? এখনও পর্যন্ত নামহীন ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা নিরূপন করা যায় নি সরকারের নিরবুদ্ধিতার সরকারের ভাবখানা গা ছাড়া জন্যে অথচ চারদিক থেকে মানুষ মরে যাওয়া খবর পাওয়া যাচ্ছে, ভেসে আসছে মানুষের লাশ, অনেকে চরে বসে আছে হারিয়ে যাওয়া মানুষটা যদি জীবিত কিংবা লাশ হয়ে ফিরে আসে। এমন ভয়াবহ ঘূণিঝড়েরর বিপরীতে তিন নম্বর বিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছিল অথচ ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা ছিল আট মহাবিপদ সংকেতের কাছাকাছি। যা সত্যি দুঃখজনক। এত কম বিপদ সংকেতের কারনে অনেক জেলে উপকূল কাছাকাছি থাকে নি। যার জন্যে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আর ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে গেছে কে যে কোথায় কেউ জানে না। এরজন্যে দায় স্বীকার সরকার কোনদিন করবে না। কেননা আমাদের মত ছাপোষা মানুষগুলোর জীবনের মূল্য আজ অতি তুচ্ছ।


http://new.ittefaq.com.bd/news/view/155153/2012-10-12/1


১২ ই অক্টোবর,২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১২১/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি - ১২০ (অন্যরকম দিনগুলি)

অন্যরকম দিনগুলি
-------------------------------------------
আজ রাত অব্দি
চোখের জলে হিসেব করি 
পুরানো দিনগুলোর
কিছু অশ্রু থাকে কিছু সুখ স্মৃতির 
কিছু থাকে জমাট বাঁধা দুঃখ বেদনায়

আমাদের সবার একান্ত কিছু দুঃখ থাকে
তবুও আমরা পিছুপা হই নি।
কালো মেঘের ঢাকা অনিশ্চিত সময়গুলোতে
আমাদের আগলে রাখে আমাদের প্রিয়মুখগুলি
মা-বাবা, প্রিয়তমা স্ত্রী,
কখনোবা ভাইবোন,
কিছু প্রিয় বন্ধু সহপাঠী ।
আমাদেরকে কেন্দ্রভূত করে সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে
আর্শীবাদ, ভালোবাসা নিয়ে বৃত্তময়।
সামনের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণায়
আমরা আজ থেকে শুরু করি
নতুন ভালো একটা বছরের পথযাত্রা
প্রতীক্ষায় থাকি অন্যরকম দিনগুলির।

১১ ই অক্টোবর,২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১২০/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি - ১১৯ (মাকে নিয়ে ভাবনাগুলো)

আমরা বাড়ীর বাইরে গেলে শুরু হয় মা'র অস্থিরতা। 

একটা সময় অস্থির মা কিছুতে নিজেকে সামলাতে না পেরে পরবর্তীতৈ শুরু হয় মা'র ফোন করা,‍" বাবা! খেয়েছিস? ঘুমিয়েছিস? রাত জাগিস না বেশী। বাইরের পানি খাবি না, পেট খারাপ করবে, জন্ডিস হবে। ফিরবি কবে? বেশী রাত্রি বাইরে থাকিস 

না?"। এই প্রশ্নগুলো আমার কাছে প্রতিদিনে রুটিনের মতন আর মা'র কাছে এইটা নিত্য নতুন একটা ব্যাপার। অবশ্য প্রতিটি মা'র তাঁর সন্তানের কাছে এমনটি করে থাকেন। মা বলে কথা।

প্রতিটি সন্তানের কাছে মা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তি। তবে অনেক ক্ষেত্রে পরিবেশ, পরিস্থিতি, দুঘর্টনা এসব ক্ষেত্রে পিতা, ভাই, বোন, স্বামী কিংবা স্ত্রী, আত্মীয়, আত্মীয়া, সেই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। তবে মা তো মা। যার কোন বিকল্প নেই।

ছোটবেলা থেকে আমি বড্ড বেশী মা ঘেষা। জীবনের প্রথম হাতের লেখার হাতে খড়ি আমার মার হাত ধরে। আমাকে প্রথম স্কুল ভর্তি পরীক্ষাতে মা নিয়ে গিয়েছিলেন, পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত মা'র সেকি অস্থিরতা, কি লিখছি না লিখছি। মার হাত ধরে প্রথম স্কুলে যাওয়া, আমি খুব ভীতিপ্রবন ছিলাম বলে প্লে গ্রুপের স্কুলের কয়েকটা দিন মা'র আঁচল ধরে ক্লাস করেছিলাম।

গলায় একবার কই মাছের কাঁটা ফুটেছিল মা তখন ভাতের গোল্লা বানিয়ে মুখে পুরে দিল আমার গলা থেকে কাঁটা নেমে গেল। আমি সেই যে কই মাছ খাওয়া বন্ধ করেছি, আজও সাহস পাই না।

বাবা আমার জন্যে বিদেশে থেকে সাদা কেডস নিয়ে এসেছিলেন এবং আমি সেটা তখন পরে দৌড় দিতে গিয়ে পড়ে গিয়ে আমার সম্মুখের দুটো দাঁত ভেঙ্গে গিয়েছিল। বাবা-মা আমাকে ধরে ডাক্তার কাকুর কাছে নিয়ে গিয়েছিল। আইসক্রিম খেতে খেতে বাড়ী ফিরলাম ফোকলা হাসি নিয়ে। দীদা আমাকে বলেছিল, দাঁত দু'টো নিয়ে ইদুরের গর্তে ফেলতে তাহলে নাকি আমার অনেক বড় দাঁত গজাবে। আমি মহানন্দে সেই কাজটা সেরেছিলাম। অনেক দিন ফোকলা হাসি নিয়ে দিন কাটিয়েছি এবং এক সময় আমার বড় দাঁত গজালো।

সন্ধ্যার আযানের পর টেবিলে পড়তে বসে যেতাম। মা ছিলেন আমার শিক্ষক। আমার পড়াশুনার সময় টিভি চলত না। আমার মা সে সময় কাউকে টিভি দেখতে দিতেন না। আজ অনুভব করি টিভির জন্যে আজকাল বাচ্চারা মন দিয়ে পড়তে পারে না, আবার কেউ ইচ্ছা করেই পড়তে চায় না। সারাটা সন্ধ্যা পড়া শেষে রাত নয়টা নাইট রাইডার, স্ট্রীট হক, ম্যানামেল, ম্যাকগাইভার দেখতাম। তারপর ঠিক দশটায় ডিনার সেরে ফেলতাম। তারপর এক গ্লাস দুধ খেয়ে ঘুম।

আমার আজকের আমি একলা চলা বড় হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার মা'র ।আজ আমার হ্জ্জ্ব করতে যাচ্ছেন, কোন সময় আমাকে ছাড়া কোনদিন মাকে একা কোথাও যেতে দেখি নি। মা আজ পুরো খুশী মনে হজ্জ্বে যাচ্ছেন। কেননা তার একটা লালিত স্বপ্ন পূরন হতে যাচ্ছে। আজ ভীষন টেনশন অনুভব করছি। আজ আমি খুব গভীরভাবে অনুভব করছি, মা কেন আমাদের নিয়ে এত দুশ্চিন্তা করেন। এতদিনের মার অস্থিরতা আজ আমার ভিতর প্রশমিত হয়েছে। আমি আজকে মার হয়ে অস্থির হচ্ছি ভীষনরকম।

১০ ই অক্টোবর,২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১১৯/৩৬৫

অ আ আজকের লেখালেখি - ১১৮ (প্রতিদিন স্বপ্নে দেখি স্বপ্নলোকের মানুষগুলোকে)


প্রতিদিন স্বপ্নে দেখি স্বপ্নলোকের মানুষগুলোকে

জানালার গা ঘেষে আমার টেবিল, আর তাতে আমি প্রতিদিন ডায়রী লিখে যাই। জানালা দিয়ে তাকালে আমি খুঁেজ পাই নীল আকাশের বাদামী সুর্য আর ঝিরঝিরি বাতাস। কখনো সখনো অচেনা ফুলের গন্ধ আমার মনোযোগ নষ্ট করে। এ
রাই আমার ডায়রীর বাসিন্দা। কিন্তু আজ ডায়রী লিখছি ওদের ছাড়া।

অনেকদিন পর ভোর দেখলাম। এখন সকাল সাড়ে পাঁচটা বাজে । কিছুক্ষণ আগে মোয়াজ্জিন আযান দিল । অদ্ভুত ভালো লাগল ফজরের আযান শুনে । আমি সবগুলো আযান শুনি । কিন্তু সকালবেলাকার মতন এত চমৎকার নয়।
সকাল থেকে প্রচন্ড ক্ষিধা পেয়েছিল। আমি অনেকক্ষণ না খেয়ে বসে ছিলাম। আমার আশেপাশে অনেকগুলো মানুষ ঘোরাফেরা করছিল কিন্তু কেউ টের পায় নি। আসলে আমি এরকমই, প্রচন্ড কষ্ট হলেও চেপে যাই। আমার এই চেপে যাওয়া অভ্যাস নাকি আমি জন্মের থেকে পেয়েছি এ কথা আমার নানু বলতেন।

একবার আমি লুকোচুরি খেলতে গিয়ে পায়ে পেরেক ফুটল, আমার পা পুরো লাল হয়ে গিয়েছিল। আমি এটুকু ভয় পাই নি , শুধু চেপে গিয়েছিলাম মা বকবে বলে। তখন আমার বয়স কতই ছিল দশ বারো।

আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি। অংকে ভীষণ দূর্বল ছিলাম যে, প্রাইভেট পড়তে যেতাম। আর সেখানে পরিচয় হল একটি মেয়ের সাথে। সেই মেয়েটাকে একদিন না দেখলে ভালো লাগত না। আমি জানি না এর অর্থ কি ,“ভালোবাসা”!!! আমি ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা বলেছিল তুই প্রেমে পড়েছিস। আসলে ঐটুকু বয়সে ভালোবাসার সংজ্ঞা আমার কাছে ছিল রহস্যময়ী এবং অস্পষ্ট। সেই মেয়েটাকে কোনদিন বলতে পারি নি এই সত্য কথাটা, এর জন্যে বোধহয় দায়ী আমার চেপে যাওয়া স্বভাবটা। চাপতে চাপতে ইন্টারমিডিয়েট পার করে ফেললাম। একদিন সে চলে গেল সানাইয়ের সুরে। আমি হাসতে হাসতে তাঁর বিয়েতে গিয়েছিলাম । ওকে বিয়ের বাড়ীতে নিয়ে গিয়েছিলাম আমি এবং ঐ গাড়ীটা চালিয়েছিলাম আমি। এই সময় আমার অদ্ভুত একটা কষ্ট হল ওকে লাল বউ হতে দেখে। আমি যখন সেই গাড়ীটি স্টিয়ারিং ধরেছিলাম তখন আমি সামনে শুধু সেই স্মৃতিগুলো জীবিত হতে দেখলাম, সেই প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার দিনগুলো। আমি প্রচন্ড ঘোরের ছিলাম সারাটিক্ষণ। আমি পেলাম প্রথমবারের মতন প্রচন্ড যন্ত্রনা; ঠিক যেন আমার গায়ে অসংখ্য সূঁচ বিদ্ধ হচ্ছে।

একদিন হুট করে আমার প্রিয় নানু মারা গেলেন। আমি দ্বিতীয়বারের মতন প্রচন্ড কষ্ট পেলাম। এই কষ্টটা আমাকে ভালোমতন যন্ত্রনার সংজ্ঞা শিখিয়ে দিল। আমি অঝোর বৃষ্টির মতন কাঁদলাম। এই নানুই, একমাত্র আমার চেপে থাকার স্বভাবটা ধরতে পেরেছিলেন। আমার কলেজ ছিল নানুর বাসার কাছে। সেই সুবাদে নানুর বাসায় যেতাম । আমার চোখে মুখে যে প্রচন্ড ক্লান্তি, ক্ষুধা ছিল তা নানু খুব ভালো মতন বুঝতেন। আমার প্রিয় খাবারগুলো সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যেতাম।

আজকাল আমি মাঝে মাঝে নানুর কবরে যাই, আর মার ব্যাপারে নালিশ করি, কখনো সখনো নানুর সাথে একা একা কথা বলি। নানু শুধু শুনে যায়, কিছুই বলে না।

হঠাৎ জানালা দিয়ে দেখি আলো ঢুকছে। অথচ আমি ডায়রীতে এত বেশী মগ্ন ছিলাম যে , সেই কখন আকাশ ফর্সা হয়ে এল একদম টের পাই নি।

আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষগুলো ঐ দূর আকাশে। আর আমি আকাশের বুকে হাত বাড়িয়ে তাদের ডাকি প্রতিদিন। আর ঐ যে সুর্য আমাকে বলে,সবকিছু তো শেষ হয়ে যায় নি, আমার জন্যে আরো অনেকগুলো মানুষ স্বপ্ন দেখে, কষ্ট পায়, নতুন আশায় আশান্বিত হয় । আর আমিও উজ্জীবিত হয়ে নতুন সকালের মতন ভাঙ্গা ঘর গুছাই নতুন করে।

৯ই অক্টোবর,২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১১৮/৩৬৫

Monday, October 8, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি - ১১৭


ছোটবেলাকার খুব খেলাধূলা করতাম বলে এক মুহূর্তে এখানে ওখানে হেঁটে চলে যেতাম। তখন আমার অস্থিরতার কাছে কোন দূরত্ব প্রশয় পেত না। একসময় যখন হাপিয়ে যেতাম কোন এক দোকানে ঢুকে ২৫০ মিলি লিটারের ছোট কাঁচের বোতলের কোক খেয়ে আবার হাঁটা শুরু করে দিতাম। চার-পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে ফেলতাম। 

আজ সে জায়গাতে আধা কিলোমিটার হাঁটারও দুঃসাহস করি না। বয়সের কাছে আবেগ এখন আর প্রশয় পায় না, আজ সবকিছু কেমন যেন একটা বাঁধা চলে আসে, অনেকগুলো প্রতিবন্ধকতা কাজ করে, অন্ধকার রাস্তাগুলো মোটেও ভালো না, ছিনতাই হতে পারে, আইনকে আঙ্গুল দেখিয়ে যতত্রতভাবে যানবাহন গায়ে উপর উঠিয়ে দিতে পারে কিংবা ফুটপাথে হাঁটার জায়গাতো নেই। তবুও ছোটবেলাকার মতন যখন তখন সময় ইচ্ছে হলে উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটতে থাকে, তবে আজ বেশী দূর যেতে পারি না, একটু দূর গিয়ে ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নেই, তারপর বাড়ী ফিরে চলি। অথচ স্কুল জীবনে একগাদা বই কাঁধে নিয়ে হেঁটে হেঁটে বাড়ী ফিরতাম। 

আমাদের পুরানো বাড়ীটি ছিল আর.কে.মিশন রোডে। রোজ স্কুলে যেতাম রিকসা করে। তখন আমাদের বাড়ী থেকে মতিঝিল এজিবি কলোনীর ভিতরে আমার সেই মতিঝিল মডেল হাই স্কুলের কাছে রিকসা চলে যেত। তখন ভাড়া দশটাকা ছিল। আমি আমার বন্ধু ঘটু পাঁচ টাকা শেয়ার করে রিকসা ভাড়া দিতাম। আমি বাড়ী থেকে ২০ টাকা করে পেতাম। সে টাকাতে টিফিন করতাম। ক্লাস শুরু হত ঠিক দুপুর ১২:১৫ মিনিটে টানা ২:০০ মিনিট পর্যন্ত চলত তারপর আমাদের ২:৪৫ মিনিট পর্যন্ত টিফিন ব্রেক তারপর আবার ক্লাস চলত ৫.৩০ মিনিট পর্যন্ত। রোজ রোজ একই রুটিন শুধু বৃহস্পতিবারটা কোন টিফিন পিরিয়ড চলত না সেদিন ১২.৩০ থেকে ১:৩০ পর্যন্ত পিটি হত আমরা খুব বিরক্ত হয়ে পিটি করতাম. সেদিন আমাদের ৩.০০ পর্যন্ত ক্লাস হত, তারপর ছুটি। আমরা রোজ বাড়ী ফিরতাম পাঁচ বন্ধু মিলে, রায়হান, মামুন, ঘটু, জিয়া, মুনির। সেই স্কুলের পেছন দিকে স্টেশনের রাস্তা ধরে শুরু হতো পথচলা। তখন আমাদের কমলাপুরের গেইট দিয়ে ঢুকতে কোন টাকা লাগত না। আমরা সেই নারায়নগঞ্জ রুটের ট্রেনের রেল লাইন ধরে হাঁটা শুরু করতাম, তারপর সুইপার বস্তি পেরুতাম, তারপর গোপিবাগ বাজার রায়হান বা'দিকে মানিকনগর চলে যেত. আমরা বাকিরা সবাই ডানদিক দিয়ে চলে যেতাম। সবার বাসা কাছাকাছি থাকাতে একসাথেই ফিরতাম একই পথ ধরে। আমরা রাস্তাতে আজগুবি সব নামহীন আইসক্রীম, আচার, ঝালমুড়ি চানাচুর খেয়ে বাড়ী ফিরতাম। 

আহা দারুন সেই দিনগুলি, আজও প্রচন্ড মিস করি। ইচ্ছে করে সেই দিনগুলো যদি আবার ফিরে পেতাম।

৮ই অক্টোবর,২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১১৭/৩৬৫ 

পুরাতন লেখালেখিগুলো: http://ayonahmed.blogspot.com

অ আ আজকের লেখালেখি - ১১৬

নিউজপেপার এক নজরে খেয়াল করতে গিয়ে একটা খবর চোখে পড়লো, বাংলাদেশীরা বিশ্বের এগারোতম সুখী জনগন। এজন্য আমাদের নেতা-নেত্রীদের উচিত ঘরে ঘরে প্রতিটি সাধারন মানুষের পায়ে ধরে সালাম করে আর্শীবাদ নেওয়া।

আমরা অনেক দিন ধরে কেউ ভালো নেই। আমরা প্রতিটি মুহূর্তে শংকায় কাটছে কাল কি খাব, কি গায়ে দিব, কাল আমার 
সন্তানেরা কি খাবে। আমাদের করের টাকা দিয়ে আমাদেরকে অনাহারে রাখা হয়। আমাদের ভবিষ্যত আরো ঘন কালো হয়ে উঠে। আমরা তাও স্বপ্ন দেখি আগামী দিনের স্বপ্ন যেখানে আমাদের কেউ অনাহারে মরবে না, খালি গায়ে কেউ ঘুরবে না। আমরা অনেক অন্যায় সহ্য করি, আমরা অনেক কষ্ট করি আমাদের কখনোই ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙ্গে না। আমরা ঠিকই ডুবে ডুবে বেঁচে থাকি যুগ যুগ ধরে। যার জন্য আমাদেরকে সীকৃতি দেওয়া হয় বিশ্বের অন্যতম সেরা অসুখের দেশে সেরা সুখী মানুষ ।

৭ই অক্টোবর,২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১১৬/৩৬৫

(বিলম্বে আপলোডের জন্যে দু:খিত।)