আমার একান্ত কিছু শব্দের মানুষগুলো

আমার একান্ত কিছু অনুভূতি আমার কলমের সাথে ভাব জমায় আমি তাদের সাথে পথ পাড়ি দেই একাকী

Monday, October 8, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি - ৯২

"তোরা তো কপি পেস্ট জেনারেশন"- এই সহজ-সরল উক্তিটি প্রায়ই বেরিয়ে আসে আমার যৌথ পরিবারের ঠিকানার বয়োজেষ্ঠ্য সদস্যদের মুখগুলো থেকে । কথাটা শুনে আগে খুব রাগ করতাম, খুব গায়েও লাগতো। আজকাল রাগ হয় না। কথাটা কিন্তু ফেলনার না। 

এই কপি পেস্ট সুবিধার বদৌলতে আমরা কাগজ কলমের অভ্যাসটা ভুলে যেতে বসেছি। আমাদে

র সব কিছু কম্পিউটার ভিত্তিক হয়ে গেছে। আমরা একটা বাক্য সুন্দর করে কাগজে লিখতে হিমশিম খাচ্ছি, সারাটা কাগজে বানান ভুলে ভরে যাচ্ছে, কেননা সাদা কাগজেতো কোন বানান শুদ্ধকরন পদ্ধতি নেই। তাই আমাদের শুদ্ধ বানানের ক্ষেত্রে অজ্ঞতার বাড়ছে, যা আগে ছিল না কখনোই। আজ আমরা আমাদের এত দিনের পুরানো লেখালেখিগুলো নির্ভুল লেখার অভ্যাসটা ভুলে গেছি। এখন আমাদের এই অভ্যাসটা আস্তে আস্তে ঐতিহাসিক ঘটনায় রূপান্তরিত হচ্ছে। যখন আমাদের প্রিয় সন্তান তাদের স্কুলে হোমওয়ার্কটা আমাদের দিয়ে চেক করাবে, তখন আমরা কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তায় থাকবো আদৌও কি ঠিক বললাম নাকি, হয়ত অতিরিক্ত সময় চেয়ে নিব কম্পিউটারে ভুল-ক্রুটি পরীক্ষা করার জন্যে। তাই আমাদের কম্পিউটার যেমন আমাদের আর্শীবাদ তেমনি অভিশাপও হয়ে গেছে।

আমাদের নতুন প্রজন্ম এটিকে আর্শীবাদ মনে করছি। কেননা, আমরা আমাদের দৈনান্দিন কাজ, পড়াশুনা, অফিসের অসংখ্য হিসাবা নিকাশ এক নিঃশ্বাসে মিলিয়ে দিচ্ছি। আমরা প্রতিদিন ইউনিভাসিটির এ্যাসাইনমেন্টগুলো খুব দ্রুত করে ফেলছি, ইন্টারনেট থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় বই পেয়ে যাচ্ছি। আমাদের সবকিছু খুব সহজে পেয়ে যাচ্ছি। আমাদের বই কিনতে হচ্ছে না আমাদের জ্ঞান অর্জনের পরিধি বেড়েছে, সহজসাধ্য হয়েছে। কিন্তু আসল কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না, আমরা এই জ্ঞান ধরে রাখতে পারছি না।

আমাদের পূর্ববংশরা আজ সুন্দর করে নির্ভুল চিঠি লিখে ফেলছে, একটুও হাত কাঁপছে না, লেখালেখির রাস্তাগুলো মসৃন, একদম আঁকাবাকা নয়। আমরা আজ কেউ মনে করতে পারছি না, শেষ কবে অনেকগুলো কাগজ ছিঁড়ে প্রিয় কাউকে চিঠি লিখেছিলাম এবং চিঠি দেবার উত্তরের আশায় দিনের পর দিন অপেক্ষা করার উৎকন্ঠা আমরা কোনদিন করি নি। আজ আমরা আবেগহীন হাতে টাইপ করে প্রানহীন ইমেইল করি, মুহূর্তে পৌছে যায়, মুহূর্তে জবাবও চলে আসে। আমরা কিন্তু উৎকন্ঠায় ভুগি না, আমাদের লেখায় কোন ভালোবাসা নেই।

আজ আমরা যেখানে এক্সেল ছাড়া হিসাব মেলাতে পারছি না। সেখানে ওরা মুহূর্তে মিলিয়ে ফেলছে বড় হিসাবগুলো, আমরা হিমশিম খাচ্ছি একটা বড় নামতা বলতে গিয়ে, অসহায় হয়ে কম্পিউটার খুঁজছি, ক্যালকুলেটর খুঁজছি। আজ আমরা আমাদের সবকিছু মোবাইলের মতন বহনযোগ্য যন্ত্রগুলোর ভিতরে পেয়ে গেছি। আমাদের দৈনান্দিন জীবনকে আরো বেশী সহজ করে তুলছে। আমাদের সাদামাটা জীবন হয়ে গেছে প্রযুক্তি জীবন, যতক্ষন সেগুলোর ব্যাটারী চার্জ থাকে ততক্ষন আমরা উজ্জীবিত থাকি, যখনই চার্জ ফুরিয়ে যায় আমরা তখন অসহায়ের মতন গভীর সাগরে পড়ে ডুবে ডুবে পাগলের মতন হাঁপাতে থাকি অন্ধ হয়ে।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২
------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্টে ৯২/৩৬৫

No comments: