আমার একান্ত কিছু শব্দের মানুষগুলো

আমার একান্ত কিছু অনুভূতি আমার কলমের সাথে ভাব জমায় আমি তাদের সাথে পথ পাড়ি দেই একাকী

Monday, October 8, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি - ১০৯

আমি তখন খুব ছোট হয়ত ছয় কি সাত বছর বয়স হবে। আমার প্রিয় দাদুর পাশে ছিল আমাদের ঘর। আমি অনায়াসে ছুটে চলে যেতাম দাদুর কাছে। দাদুকে সব সময় দেখতাম। সাদা ধবধবে একটা পরিহিত পাঞ্জাবী সবুজ রঙের একটা জায়নামাজে নামায পড়ছেন। সম্মুখে নুকতাবিহীন আরবী পাশে বাংলা অনুবাদ করা লেখা। আমার দাদু খুব সুর
 করে কোরআন তেলোআয়ত করতেন আমি খুব মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। দাদু আমাকে কোলে বসিয়ে কোরআন পড়তেন। আমি ঘুমিয়ে যেতাম দাদুর কোলে সুমধুর কন্ঠে।


আমি খুব ছোটবেলাতে কথা বলা সাথে সাথে সালাম দেয়া শিখে গিয়েছিলাম।যার জন্যে আমি রাস্তায় যাকে দেখতাম সালাম দিতাম, সেই শ্বেতরোগের সাদা দাঁড়িওয়ালা ভিক্ষুক, সুইপার, দুধওয়ালা, রিকসাওয়ালা, দোকানী খুরশীদ ভাই লাল গেরুয়া পরিহিত পুরোহিতরাও কেউ বাদ যেত না। আমি তখন বুঝতাম না ধর্ম বলে আলাদা জাত থাকে, মানুষের আলাদা একটা পরিচয় দেওয়া থাকে যে ওরা গরু খায় তাই ওরা মুসলমান, ওরা শুয়োর খায় তাই ওরা হিন্দু, খ্রিষ্টান। যারা সবজি খায় তাই ওদের বলে বৌদ্ধ।

অথচ আমাদের কারোর জন্ম ধর্ম দেখে হয় নি। আমাদের জন্মের পর আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা মানুষ তারপর আমরা যেই সমাজে জন্মাই সেই সমাজের মানুষগুলো ঘোষনা দেন সেই অর্থে আমি একজন মুসলমান। সেজন্যে আমি নামায পড়ি। কুরআন পড়ি। আমার মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এবং আমি তাঁর উম্মত। এই অভ্যাসগুলো আমাকে আমার পরিবার থেকে সেখানে হয়েছে। আমি আট বছরে দাদুকে হারাই এবং আমার দাদু মারা যাওয়ার পর তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু উনার প্রতিদিনের সাথী সেই কুরআন শরীফ আমার মাকে দিয়ে বলেছিলেন এটি যেন আমাকে একসময় বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তাই আমি কুরআন শরীফ তেলোআত শেষে বুকে জড়িয়ে সুউচ্চ স্থানে যত্ন করে গুছিয়ে রাখি। আমার মাতৃভাষা বাংলা তাই আমি বাংলা বুঝি। তাই আমি আরবীর পাশাপাশি আল্লাহর কথা বোঝার জন্য বাংলা অনুবাদ পড়ি। সেজন্য আমি বিভ্রান্ত হই না। আমাদের পরিবারের একটা শিক্ষা আমাদের সবাইকে দেওয়া হয়েছে ভুল শিক্ষা মহাপাপ, যা হত্যার সামিল। ইসলাম কখনোই হত্যা ও দুবৃর্ত্তপনাকে প্রশয় দেয় না বলে ইসলাম শান্তির ধর্ম। যারা দুর্বৃত্তপনা করে তাদের স্থান জাহান্নাম।

পবিত্রতার কথা ভেবে ধর্ম নিয়ে কখনো আমি লিখি না। যখন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি, রাজনীতি, ধর্ম নিয়ে হত্যাযজ্ঞ দেখে আমার কখনো সখনো প্রচন্ড মন খারাপ হয়। আজ আমি যখন দেখলাম, ধর্মের দোহাই দিয়ে নিজেরা লুটরাজ, অমুসলিমের ঘর বাড়ী জ্বালায়, পবিত্র কুরআন নিয়ে রাস্তায় নিয়ে মিছিল করে, কুরআনকে নোংরা করে, রাস্তায় পুলিশের দিকে ঢিল ছুঁড়ে, যখন পুলিশ তেড়ে আসে তখন হিংস্র চেহারাওয়ালা লোকগুলো কুরআন ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। তখন ইসলামের সম্মান কোথায় থাকে।
আগুন নিয়ে ঘর পুড়িয়ে কি নেক পূরন হয়, জিহাদ মানে কি লুটপাট, নিরীহ মানুষ হত্যা। কোন কিতাবে লেখা আছে আবার জিহাদ হবে। আল্লাহ্ আদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের নবীরা জিহাদ করেছিলেন। ইসলামের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে জিহাদ হয়েছিল। সর্বশেষ জিহাদ যুদ্ধে জয়লাভ করে আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে আল্লাহতায়ালা বেহেশতে নসীব করেছিলেন। এখন আবার কিসের জিহাদ, আমাদের হুজুররা কি নিজেদের নবী মনে করছেন। এর থেকে গুনাহ কি হতে পারে? আমাদের হুজুররা কি শুধু মুখস্থবিদ? তারা কি সত্যিকার ইসলাম মানেন তাহলে কেন তারা মহানবীর কথা মতন বিদ্যা অর্জনে বিদেশে যান না। তারা কেন আমাদের ইসলামকে সন্ত্রাসীর ধর্মের অপবাদ থেকে মুক্তি দিতে পারেন না। কেন তারা আমাদের ইসলামের দোহাই দেখিয়ে লুটপাট করেন, আগুন নিয়ে খেলেন, যে আগুন নিয়ে একসময়
আমাদের মহানবীকে কাফেররা পুড়িয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। অতিরিক্ত ধর্মান্ধতা কি নেকের চাবিকাঠি নাকি ইসলামের গায়ে কালিমা লেপ্টানো।

আমার ছোটবেলায় আমাকে পাশের মসজিদের তরুন হুজুর আমপাড়া, কালেমা, কুরআন শিখিয়েছিলেন। আমি রোজ শুক্রবার তাঁর পা ছুঁয়ে সালাম করতাম। তরুন বয়সের অগাধ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন, শিক্ষিত ছিলেন তাই তার প্রতি আমার সম্মান চলে আসত। উনি পরবর্তীতে স্কুল জীবনে আমার ধর্ম বিষয়ক শিক্ষক হয়েছিলেন। যার সুন্দর হাতের লেখার নোটের যাদুতে আমি ইসলাম ধর্মে লেটার মার্কস পেয়েছিলাম।

আজ সেই সব হুজুরদের যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে লুটপাট করেন, অগ্নিসংযোগ করেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন আপনার থেকে ক'টা ছেলে আজ শিক্ষিত হয়ে আপনাদের পা ছুঁয়ে সালাম করে। ক'জনের নামে আপনি গর্ব করে বলতে পারবেন অমুক ডাক্তার আমার ছাত্র, অমুক ইঞ্জিনিয়র কিংবা নামকরা শিল্পপতি। আপনারা যাদের নাম বলবেন তারা আজ ইসলামের নামধারী চিহ্নিত সন্ত্রাসী, যারা আমাদের রগকাটতে প্রস্তুত।

আমি আজকের রামুর ঘটনায় একজন মুসলিম হিসেবে খুবই লজ্জিত এবং শোকহত। আমি ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

আল্লাহ তুমি দয়া করে এই ভুল পথে চলা মানুষগুলোকে হেদায়েত দান করো। আমিন।

৩০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১০৯/৩৬৫

No comments: