আমার একান্ত কিছু শব্দের মানুষগুলো

আমার একান্ত কিছু অনুভূতি আমার কলমের সাথে ভাব জমায় আমি তাদের সাথে পথ পাড়ি দেই একাকী

Wednesday, July 25, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি- ৪১


আমাদের প্রত্যেকের জীবনের শুরু গল্পটা একটা সহজ সমীকরণে চলতে থাকে। যেমনটা আমাদের শৈশব আমাদের ভিতর একটা সহজ পথ তৈরী করে দিয়েছিল, যে পথ ধরে আমরা শেষ করেছি শিক্ষাজীবন, শৈশবের খেলাধূলা। আমরা যদি একটু পিছু ফিরে তাকাই আমরা খুঁজে পাব আমাদের আনন্দ, আমাদের দীর্ঘশ্বাস বাড়বে হয়ত, "ইস! আবার যদি ফিরে পেতাম সেই দিনগুলি"। আমাদের জীবনটা যদি সমীরকরণে ফেলে দেই তাহলে আমরা খুঁজে পাব আমাদের দিনগুলো। যেমনটি আমি খুঁজে পেয়েছি চারটি সমীকরণে আমার জীবনের গল্প। আজ শুধু দুটো সমীকরনে বাকীগুলো কাল।


সমীকরণ ১: (আমার বয়স ১ থেকে ১০ বছরে)
১ - ৪ বছর
এই সময় আমার প্রিয় বন্ধু ছিল। আমার দাদু। যার ঘরে আমি সারাক্ষন খেলা করতাম। দাদু জায়নামাজে আমি শুয়ে পড়তাম। দেখতাম কি দাদু নামায পড়েন। দাদু রোজ মাগরিবের নামায শেষে আমার জন্যে মিষ্টি নিয়ে আসতেন। 


মা তখন ঢাকা ভাসিটির ছাত্রী। বাবা তখন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে সার্ভিস ইঞ্জিনয়র ছিলেন। রোজ সকালে আমাকে বাবা-মা খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে চলে যেতেন। দাদু আমাকে দেখে রাখতেন। বেলা বাড়তে মা চলে আসতেন। ছেলে দুশ্চিন্তাতে মা কোন সময় সব ক্লাস করতে পারতেন না। আমার জ্বর আসত মাকে দেখতাম আমার কাছে বই নিয়ে পড়ছেন। খুব অবাক ব্যাপার ছিল আমার শরীর খারাপ হত, মার প্রতিটি পরীক্ষার আগেই। আমি একসময় স্কুলে ভর্তি হলাম  আমার প্রথম স্কুলে নাম ছিল ফুল কুঁড়ি। যেখানে আমি প্রথম বন্ধু হিসাবে পেলাম আবীর, জিয়া, ফয়সাল , ঝর্না, সোমা আরো অনেককে।


চাকরীসূত্র আমার নানা বাড়ী ছিল কুমিল্লা শহরে। যেখানে আমার মায়ের শৈশবজীবন।
আমরা প্রায়ই সেখানে যেতাম যখনই বাবা ছুটি পেতেন। আমরা খালাত ভাইবোনরা মিলে খুব আনন্দ করতাম। আপিন আমাকে আদর করে খাইয়ে দিতেন। আমি পোলাও পাগল ছিলাম বলে আমার জন্যে রোজ পোলাও রান্না করতেন।

৫-১০ বছর
আমি এই সময় আমার দাদুকে হারালাম। দাদুকে কবর দিতে যেতে দেখতে পারি নি খুব ছোট ছিলাম বলে। বাবাকে কোনদিন সেদিনের মতন দুমরে পড়তে দেখি নি। প্রথমবার বাবাকে ভেঙ্গে পড়তে দেখে আমিও খুব মন খারাপ করেছিলাম। দাদু প্রায়ই চট্টগ্রাম গিয়ে থাকতেন বড় ফুপুর দারুল ফজল বাসাতে। উনি মারা গেলেন সেখানে। দাদু কবর দিয়ে আসা হল মোহরাতে। আমাকে বলা হয়েছিল দাদু বেড়াতে গিয়েছিয়েন ফিরবে যে কোনদিন। আমার অপেক্ষার পালা আরম্ভ হল। দাদুকে চিঠি লিখতাম পেনসিল দিয়ে একটা কাগজে। একটাই কথা থাকত, দাদু তুমি কোথায়? বাড়ী ফিরবে কবে? রোজ বাবা অফিস যাওয়ার পথে বাবাকে সেই কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলতাম আমার চিঠিটা দাদুর কাছে পাঠিয়ে দিও। বাবা চুপ করে থাকতেন। মা আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যেতেন। 


আমরা শ্যামলীতে চলে গেলাম। সেখানে শুরু হল আমাদের নতুন জীবন। নতুন বন্ধু বিপুল। আমি আবার নতুন স্কুলে ভর্তি হলাম। আমার ছোট বোনের জন্ম হল । আমি খুব খুশী ছিলাম আমার ছোট বোনকে পেয়ে। 


বাবা প্রায়ই অফিসের কাজে চট্টগ্রাম যেতেন আমিও মাঝে মাঝে তার সংগে যেতাম। বড়ফুপুর বাড়ী দারুল ফজলে রিংকু ভাই এবং হেমা আপু সাথে দিন কাটাতাম। সারাটা পাচঁলাইশ ঘুরে বেড়াতাম । পেছনে মেডিকেল কলেজে পাহাড় ছিল আমাদের বিকালে খেলার সঙ্গী। সেবার ঢাকার ফেরার সময় বাসে শুনেছিলাম চট্টগ্রামে সার্কিট হাউজে তৎকালানী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে মেরে ফেলা হয়েছে। 


দাদু চলে যাওয়ার পর আমাদের বাড়ীতে টুটুল ফুপু থাকতেন। তখন সেখানে ডাকাতি হয়েছিল। আবার আমরা গোপিবাগ ফিরে এলাম। শ্যামলীতে রেখে এলাম দু'বছরের সুখ স্মৃতি, কিছু প্রিয় বন্ধু বিপুল, তানিম। আবার, ভর্তি হলাম ফুল কুঁড়ি স্কুলে একবছর পড়ে চলে গেলাম মতিঝিল মডেল হাই স্কুলে।   





২৫ জুলাই, ২০১২
--------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজক্টে ৪১/৩৬৫

No comments: