আমার একান্ত কিছু শব্দের মানুষগুলো

আমার একান্ত কিছু অনুভূতি আমার কলমের সাথে ভাব জমায় আমি তাদের সাথে পথ পাড়ি দেই একাকী

Monday, October 8, 2012

অ আ আজকের লেখালেখি - ৯০

স্বপ্নীল দিনগুলি

জন্মের পর থেকে আমাকে শেখানো হয়েছিল নারী পুরুষের সমাধিকার। আমাদের নতুন জীবনের শুরুতেই আমি নীলাকে স্পষ্ট বলে দিয়েছিলাম সেই কথা। সামনে এগিয়ে চলার পথে ওর ক্যারিয়ারের জন্যে যতটুকু সম্ভব আমি চেষ্টা করছি, করি, করব। 
আমরা দু’জনে একেবারে শুন্য অবস্থায় থেকে শুরু করেছি আমাদের দাম্পত্য

 জীবন। ছোট্ট ছোট্ট ঘর, ক’টা মাটির কলসী, কিছু নকশী কাঁথা ফ্রেমে বাঁধানো , বেতের আসবাব, নিজেদের পছন্দ মতন করে সাজানো।

নীলা গান শুনতে খুব ভালবাসে। যখন আমাদের বিয়ে হয়নি তখন বাবার বাড়ী থেকে রোজ ফোন করে ও আমাকে নতুন এ্যালবামের গান শুনাতো। আমি সেই থেকে উপলব্ধি করি ও প্রচন্ড গান পাগল। আমি কয়েক মাস লাঞ্চ এর টাকা বাঁচিয়ে নীলার জন্মদিনে একটা ছোট্ট অডিও প্লেয়ার দিয়েছি। ও প্লেয়ারটা জাপটে ধরে চৌদ্দ বছরের কিশোরীর মতন উচ্ছাসে লাফিয়ে উঠে, আমাকে জড়িয়ে ধরে। নীলার ছেলেমানুষীতে আমি হাসলাম। আসলে, ও এ রকম। আমাকে ভালোবাসত বাড়াবাড়ি পর্যায়ের এবং আমিও কম যাই নি।

আমি বরাবরই সব কিছুতেই নিরস, অনীহা দেখাই। আমার ভিতরে আগ্রহ জিনিষটা একদম নেই বললে চলে। আমাকে ও যতবার বলে এটা করব ওটা করব, এটা কিনব, ওটা কিনব আমি কখনোই না করি না, শুধু মাথা নাড়িয়ে হু দিয়ে সম্মতি দেই। আমার এই অদ্ভূত আচরণের জন্যে আজও নীলা আমাকে ’গাধা’ ডাকে। আমার কষ্ট হয় না। বরঞ্চ আমি খুব মজা পাই।

সেদিন নীলার জ্বর এসেছিল গা পুড়ে যাচ্ছিল। আমি সারাবেলা ওর কাছে ছিলাম। সেসময় অফিসের সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমার কাছে গুরুত্বহীন মনে হয়েছে। সেদিন অফিস যাই নি। সেদিন ওকে একা ফেলে রেখে কোথায় যেতে সাহস পাই নি। কিছুক্ষণ পর থার্মোমিটারে জ্বর মেপেছি। নীলার যা যা খেতে ভাল লাগত, সেগুলো দিয়েছিলাম। ও গুটিসুটি হয়ে আমার বুকের কাছে এসে ঘুমুচ্ছিল। যেন আমার বাচ্চা আমার কোলে ঘুমুচ্ছে। আমি বুলিয়ে দিচ্ছিলাম ওর চুল। আমি বারবার ভরসা দিচ্ছিলাম, সব ঠিক হয়ে যাবে।

আমরা প্রতিটি দিন নিজের মতন করে গুছিয়ে নিয়েছি। এই যেমন ব্রেকফাস্টটা আমি রেডি করি তারপর ডেকে তুলি নীলাকে। তখন সে বাচ্চাদের মতন চোখ দলতে দলতে ব্রাশ করতে যায়। নীলাকে আমি অফিসে পৌঁছে দিয়ে আমি সময় মতন নিজের অফিসে যাই।

বিকালে ফিরি ঘরে একসাথে। কোনদিন বিকালে লেকের পাড়ে গিয়ে আমরা ফুচকায়, ঝাল মুড়ি ও চানাচুরে কেটে যায় গোধূলি বেলা। কোন সন্ধ্যায় কাটে চাইনিজের মিটিমিটি আলোতে।

আমাদের বাড়ীতে আমরা দু’জন ব্যতীত কেউ নেই। আমাদের ঘর আমাদের। নিজেরা ঘর এলোমেলো করি। আবার, নিজেরাই গুছাই। অবসরে আমি ঘুমাই । আর নীলা নতুন কোনো মজা খাবার রান্নায় মগ্ন থাকে। আমি সুযোগ পেলেই ঘুমাই। আর ও আমাকে প্রায়ই বকা ঝকা করে। আমি ওর বকা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ি। নীলার মুখে তখন রাজ্যের রাগ গিজগিজ করে।

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২
-------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ৯০/৩৬৫

No comments: